আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সড়ক দূর্ঘটনার কারন ও কিছু প্রতিকার



বিগত তিন দশকে রাজধানী ঢাকার লোকসংখ্যা বেড়েছে অভাবিত হারে ৷ এই জন বৃদ্ধির সাথে সংগতি রেখে যান বাহনের সংখ্যাও বেড়েছে কয়েক গুন ৷ প্রতিদিন খবরে শুনা যায় বাস, ট্রাক বা গাড়ীর দূর্ঘটনার খবর ৷ আর তার সাথে থাকে প্রানহানির সংবাদটিও ৷ বাংলাদেশে দূর্ঘটনায় নিহত মানুষের জীবনের কোন মূল্যায়ন করা হয় না ৷ অন্যদিকে জাতীয় জীবনে এই দূর্ঘটনা কোন গুরুত্বও বহন করে না ৷ প্রায়ই দেখা যায় দোষী ব্যক্তি দ্রুত পালিয়ে গিয়ে শাস্তি পাওয়া থেকে রেহাই পেয়ে যায় ৷ সংশ্লিষ্ট কর্ত্তৃপক্ষ দূর্ঘটনায় নিহতদের কোন পরিসংখ্যান রক্ষা করেন কি না জানি না ৷ তবে এরকম দূর্ঘটনা হ্রাস করার উদ্দেশ্যে কোন প্রতিকার ব্যবস্থা গ্রহন করছেন এবং ফলশ্রুতিতে এর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে এসেছে - সেরকম কিছু নজরে পরে না৷ যানবাহন ভেদে দূর্ঘটনার কারন গুলোও ভিন্নতর ৷ উংসব প্রাক্কালে ঘরমুখো মানুষের অতিরিক্ত মালামাল ও যাত্রি বোঝাই করার জন্য জল ও স্থল উভয় ক্ষেত্রেই দূর্ঘটনা ঘটে থাকে ৷ এসব দূর্ঘটনায় জানমালের ক্ষয়ক্ষতিও হয় প্রচুর ৷ আমাদের দেশে সাধারন লোকেরা যাত্রাপথে জীবনের ঝুকি ও নিরাপত্তার কথা ভাবেন কম ৷ তাই তারা প্রায় সময়ই জোর করে যানবাহনে অধিকমাত্রায় আরোহন করেন ৷ রাস্তায় চলাচলের সময়ে সামনের গাড়ীকে অতিক্রম করার (overtake) সময় ট্রাফিক সংকেত-এর কোন তোয়াক্কা করেন না এরা ৷ অগ্রগামী গাড়ী পিছনের দ্রুতগামী গাড়ীকে পাস (pass) না দেওয়ার কারনে পরস্পরের মাঝে প্রায়ই ক্রোধ ও বচসার সৃষ্টি হয় ৷ শীত কালে ঘন কুয়াশার মাঝে অনেক চালকেরা ঝুকি নিয়ে গাড়ী চালাতে গিয়ে দূর্ঘটনায় পড়েন ৷ রাজনৈতিক হরতালের সময় যাত্রীগনের জীবনের কথা না ভেবে যানবাহনের উপর আক্রমন ও অগ্নিসংযোগ একটি নিতান্তই নারকীয় কাজ ৷ আমাদের দেশে বহু গাড়ীচালক ট্রাফিক নিয়ম কানুন জানেন না বা ইচ্ছাকৃত ভাবে অবহেলা করেন ৷ বহু গাড়ীচালক ঘুষ দিয়ে গাড়ীচালাবার সনদপত্র পেয়ে যান ৷ এ ভাবে তারা রাস্তায় গাড়ী চালাবার মত উপযুক্ত জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করেছেন কি না তা দেখার নিমিত্ত পরিক্ষাটি (test) এড়িয়ে জান ৷ অধিকাংশ বাস ও ট্রাক ড্রাইভারদের শিক্ষার মান নিম্ন স্তরের ৷ এজন্য তাদের চিন্তার পরিধিও সীমিত থাকে ৷ গাড়ী চালানোর সময়ে তাই পথচারীদের জীবনের নিরাপত্তার প্রতি তারা গুরুত্ব দেন কম ৷ ফলে ছাত্র ছাত্রী ও পথচারীরা এই দূর্ঘটনার শিকার হন ৷ নানাবিধ কারনে সংঘটিত এসব দূর্ঘটনার সংখা নিয়ন্ত্রনও হ্রাস করার উদ্দেশ্যে নিম্নে প্রদত্ত পদক্ষেপগুলো সহায়ক হতে পারে ৷ সংশ্লিষ্ট কর্ত্তৃপক্ষকে অনির্ধারিত ভাবে (randomly) এসব গাড়ীচালকদের সনদপত্রের বৈধতা, সময়সীমা ও সত্যতা যাচাই করে দেখা প্রয়োজন ৷ নিয়ম অমান্যকারী চালককে প্রথমবারের জন্য সতর্কতা মূলক চালনা (defensive driving) শেখার নির্দেশ দেওয়া জরুরী ৷ দ্বিতীয়বার অমান্যকরার জন্য জরিমানা বা লাইসেন্স জব্দ করে শাস্তি দেওয়া যেতে পারে ৷ এ দেশে একটা ব্যাপার সচরাচর দেখা যায় যে গাড়ীর আকার, প্রকার, আকৃতি ও প্রকৃতির কথা মনে রেখেই চালকরা হয়ে ওঠে বেপরোয়া ও বেগবান ৷ তাই বিভিন্ন রাস্তায় চালকরা নির্ধারিত গতিসীমা মেনে যানবাহন চালায় কিনা তা পরিদর্শন করা প্রয়োজন ৷ গতিসীমা অমান্যকারীকে অর্থ জরিমানা করার সাথে সতর্কতামূলক পত্র (warning letter) দেওয়া দরকার ৷ পথচারীদেরকেও নির্দিষ্ট স্থান দিয়ে রাস্তা পারাপারের অভ্যাস করাতে হবে ৷ যথা তথা দিয়ে রাস্তা অতিক্রম করার মাঝে জীবনের ঝুকি থাকে অনেক ৷ এছাড়া রাস্তা দিয়ে হাটার সময় যতদূর সম্ভব পায়ে হাটার পথ দিয়ে চলার মানিসকতা গড়ে তুলতে সাহায্য করতে হবে ৷ বিশৃঙ্খল চলাফেরা নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যস্থলে পৌছার পথে অসহনীয় অন্তরায় ৷ রাস্তার উপর গৃহ নির্মানের সামগ্রী স্তুপ করা, রিক্সা বা গাড়ী মেরামত করা, ওয়েল্ডিং করা, অনির্ধারিত স্থানে যানবাহন পার্ক করা - প্রভৃতি নিয়ন্ত্রন করে যানবাহন চলাচলের পথ সুগম করা যেতে পারে ৷ যানবাহনে নির্ধারিত সংখ্যার অধিক যাত্রী বহন নিষিদ্ধ করতে হবে ৷ রাস্তায় লক্কর মার্কা যানবাহনের চলাচল বন্ধ করতে হবে ৷ এগুলো অধিকাংশ সময়ে রাস্তায় দূর্ভোগের কারন হয় ৷ দূর পাল্লার যানবাহনের চালকের শারীরিক সুস্থতা ও উপযুক্ততা নিশ্চিত করা প্রয়োজন ৷ সম্ভব হলে চালকদের জন্য নির্দিষ্ট রঙের পোশাক ও ক্যাপ ব্যবহারের বিধান বাধ্যতামূলক করতে পারলে দূর্ঘটনাস্থল থেকে দ্রুত পালিয়ে যাওয়া তাদের পক্ষে সহজ হবে না ৷ ট্রাফিক সংকেত অমান্যকারীকে তাৎখানিক ভাবে অর্থ জরিমানা করে শাস্তি দেওয়া প্রয়োজন ৷ যতদিন পর্যন্ত চালকরা ট্রাফিক নিয়ম কানুনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হয় ততদিন এই ধরনের প্রক্রিয়া চালু রাখলে ধীরে ধীরে অবস্থার উন্নতি লক্ষ্য করা যাবে ৷

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।