দামিনী, আমানত বা যাই হোক তোমার নাম, তোমাকে বলি। তোমার ছবি আমি দেখিনি মেয়ে। তুমি কেমন যে দেখত - স্নিগ্ধ পাশের বাড়ির মেয়েটি না উগ্র ফ্যাশনে গা ভাসানো তন্বী তরুনি - জানি না। তোমার সত্যিকারের নামটিও জানি না মেয়ে। তোমার লুণ্ঠিত সম্ভ্রম রক্ষার জন্য তোমার নাম ঠিকানা প্রকাশ করা হয়নি কোথাও।
যেন তোমার নাম, ঠিকানা কেউ না জানলেই হিংস্র পশুর আক্রমনে ছিন্ন ভিন্ন তোমার শরীর আবার নিদাগ, নিখুঁত হয়ে যাবে। আবার তুমি মায়ের হাতে বানানো চাপাতি খেয়ে , দোপাট্টা উড়িয়ে ছুটবে কলেজে , সিনেমায়। আবার তুমি তোমার নিজের নাম এ ডাকবে প্রিয় প্রতিবিম্ব কে, আয়নায় দাঁড়িয়ে নিজের চোখে দেখতে চাইবে প্রিয় দৃষ্টি! তবে দামিনী নামটি মানায় তোমাকে- বিদ্যুৎ! বিদ্যুতের মত জ্বলে উঠেছ তুমি, জ্বালিয়ে দিয়েছ সভ্য সমাজের কুশ পুত্তলিকা, আর বিদ্যুতের মতই দপ করে নিভে গেছ নিজের স্বল্পায়ু নিয়ে! দামিনী, সেদিন আমাদের বিজয় দিবস ছিল। সময়ের পার্থক্য হিসেব করে দেখেছি, যখন তুমি জীবন আর সম্ভ্রম বাঁচাতে লড়ছ মানুশ্রুপি ছয় হায়েনার সাথে , তখন আমি, উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের সুখি, সচ্ছল মানুষটি বন্ধুদের সাথে চায়ের আড্ডায় উচ্ছল সময় কাটাচ্ছি। ঘরে ফুটফুটে দু শিশু, সহৃদয় স্বামী আর সাজানো সংসার, কোথাও এত টুকু কালো ছায়া ছিল না সে রাতে।
তোমার খবর এসেছে ইন্টারনেট এ, ফেসবুকের পাতায়। মনে আছে, বেশ সমাজ সচেতন স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম। অনেকগুলো "লাইক" পেয়েছিলাম সে স্ট্যাটাস এ। বন্ধুদের কাছে আমার সচেতন, প্রতিবাদি, স্বাধীন নারীবাদী ইমেজ আরেক্টু উজ্জ্বল হয়েছে সেই থাকে। শুধু, অনেক রাতে ঘুম ভেঙ্গে যখন উঠে যাই বাথরুম এ, ডিম লাইটের আলোয় করিডোরে সাঁটানো আয়নায় চোখে পড়ে অন্ধকার প্রেতমূর্তি! দৌড়ে পেরিয়ে আসি, চকিতে ঢুকি উশ্ন কম্বলের আশ্র্যে,প্রিয় সাহচর্যের আশ্বাসে।
ভয় করে দামিনী ! কাজ সেরে তো কতদিন ী রাত করে ফিরি, বাজার যাই অথবা পাড়ার দোকান---- তাহলে কি যে কোনোদিন আমাকে ও এভাবে কোন হিংস্র থাবা টেনে নিতে পারে অন্ধকার গুহায় আর তারপর খানিক বাদে আমার ক্ষত বিক্ষত , অচেতন শরীর এভাবেই ছুঁড়ে দিতে পারে রাস্তার পাশে? পাশ কাটিয়ে হেঁটে যাওয়া মানুষেরা ঝামেলা এড়াতে কেউ ফিরেও তাকাবে না। ধিরে ধিরে আমি ও তোমার মত নাম ঠিকানাহীন প্রেতমূর্তি হয়ে যাব! আমার ছেলেরা মায়ের নাম জানবে না, সাগর কোথাও বলবে না আমার নাম- এমনকি মাও কোথাও কখনো উচ্চারন করবেন না আমার কথা-- আমার সম্ভ্রম রক্ষার্থে! দামিনী,পত্রিকার পাতায় গত কিছুদিন ধরে নামহিন মেয়ের মিছিল। ৫ থেকে ৩৫, সব বয়সের মেয়ে আছে সেখানে। পাহাড়ি, চাক্মা, বাঙালী, শহুরে, পাতা কুরনি, কলেজ ছাত্রী, বাকপ্রতিবন্ধি, সুন্দরী কিশোরী, ্কাজের মেয়ে, সদ্য শিশু ---- সব ধরনের মেয়ের সেখানে শান্তিপুরন সহাবস্থান। মানব্বন্ধনে যাচ্ছি, ফেসবুকে জ্বালাময়ী স্ট্যাটাস ,উতপত আলোচনা, প্রোফাইল পিক এ "ধর্ষকের ফাঁসি চাই" ব্যানার-- কিচ্ছু বাদ দেইনি।
-----কাজের মেয়েটিকে আটকে রেখেছি স্টোররুমে --কান্নার শব্দ বাইরে গেলে বড্ড কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে! ক্লফেনাক এনে দিয়েছি, এন্টিবায়োটিক ও-- সেরে উঠলে পাঠিয়ে দেব বাড়ি। মেয়েটিই ভালো ছিল না--- খুব গায়ে পড়া আর খিলখিলান! যাক গে---- বেতনের চেয়ে একটু বেশি টাকা দিয়ে দেব, আর সিকিউরিটি গার্ড কে বলে রাখতে হবে আর যেন কমপ্লেক্সে ঢুকতে না পারে। আর, আজই মিস্ত্র্য ডেকে আয়নাটা সরাতে হবে। মাঝ রাতে ভীষণ ভয় লাগে ওই প্রেতমূর্তি কে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।