বাঙলাদেশের পরিস্থিতিটা হইল এইরকম যে, একজন জোরে চিৎকার দিয়া কইল ধর, অমনি সবাই সমস্বরে চিৎকার করে উঠবে ধর ধর ধর। পরনের লুঙীর গিট্টু আছে কি নাই, প্যান্টের জিপার বন্ধ আছে কি নাই এইটা নিয়া তারা মোটেও চিন্তিত না। এই হইল বাঙালীর কালচার।
হাল আমলের 'ক্ষ' ব্যান্ডের ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা দেখে সেই ধর ধর থিউরীটাই মনে পড়ল। 'ক্ষ' ব্যান্ডকে এই ধর ধর থিউরীর আগে মনে হয় না দেশের ১ লাখ লোকে চিনত, কিন্তূ যেই ক্ষ ব্যান্ড একটা রবীন্দ্র সঙীত পলিশ করে গাইল, অমনি আলোচনায় চলে এল।
দুটি পক্ষও হয়ে গেল, এক পক্ষ তাদের প্রশংসায় জিভ খসিয়ে দিচ্ছে, অনপক্ষ রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা ঠুকতে চাইছে। দেশের অন্য সব কাজের মত এটাতেও দুটি দল থাকা চাই। সেই দুই দলের এক দলে আছেন রবীন্দ্রসঙীতের স্ব-স্বিকৃত সোল এজেন্ট সাদি মোহাম্মদ গং। তারা মামলা করতে চাইছেন, আর আরেকপক্ষ ইন্টারনেটে তাদের স্তুতি পাঠ করে শোনাচ্ছেন।
অনেকেই বলছেন জাতীয় সঙীত বাংলাদেশের জাতীয় সঙীত হওয়ার আগে মামুলী একটা রবীন্দ্র সঙীত ছিল, আর সেটাতে তো কোন কপিরাইট আইন ও নেই।
সেটা নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করলে দোষের কি আছে?
তাদের উদ্দেশ্যে একটা কথা : ভাই ও বোনেরা, জাতীয় পতাকা কিদিয়ে বানানো হয় জানেন তো? কাপড় দিয়ে, তাইনা। পতাকা বানানোর আগে কিন্তু সেটা বস্ত্র বিতানের নিতান্তই গজ মাপা কাপড় ছাড়া আর কিছুই নয়, কিন্তু সেটাকে কেটে যখন সবুজের মাঝে লাল বৃত্ত বসানো হয় তখনিই সেটা হয় বাঙলাদেশের পতাকা। সেটা হয়ে যায় একটা গর্ব, সেটা হয়ে যায় অহংকার। কিন্তু আপনি পতাকাটি সেলাই করবার সময় যদি একটু এক্সপেরিমেন্ট করেন, কেমন হয়? মানে মাঝের লাল বৃত্তটিকে একটু তিকোনা বানিয়ে দেন, কেমন হয়? নিঃসন্দেহে একটা সুন্দর ক্রিয়েটিভিটি, তাইনা? করাইতো যায়, পতাকার কাপড়ের তো কোন মেকানিকাল আইন নাই। ভাইরে, রবীন্দ্র সঙীত তো হাজারো আছে, জাতীয় সঙীতের চেয়ে অনেকগুন শ্রুতি মধুর রবীন্দ্রসঙীত আছে, সেগুলো নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট না করে যে গানটাকে একটা দেশের জাতীয় সঙীতের মর্যাদা দেয়া হয়েছে, সেটা নিয়ে কেন? সেটা নিয়েই যখন গাইবে, তখন আবার সেটাকে রবীন্দ্র সঙীত হিসেবে প্রমান করার এত চেষ্টা কেন?
গানটা কারা গাইল, বা কোন দেশের লোক তাতে তবলা বাজাল সেটা নিয়ে আমার কোন মাথাব্যাথা নেই।
(যদিও গানটার মিউজিক কম্পোজিশন ভালো, তথাপি গানটাকে শ্রুতি মধুর বলে জাতীয় সঙীতের আর অপমান করতে চাইনা। ) তবে বাঙালীর এই ইস্যুটাতে অতি উৎসাহের কারনে অন্যরকম গন্ধ পাচ্ছি। বাঙলাদেশের মানুষ নিত্য নতুন ইস্যুর জন্য ক্ষুদার্ত। টেনশন হচ্ছে এই ভেবে যে, দুদিন পর এইটাও না জানি একটা জাতীয় ইস্যু হয়ে দাড়ায়। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।