কবি
পৃথিবীতে সমস্ত কিছুরই বৈধ্যতা থাকে। বৈধ্যতা আছে পুঁজিবাদ বা সমাজতন্ত্রের, বিবাহপর মিলন বা পূর্ব মিলন, আগুন জ্বালানো বা আগুন নেভানো, সমকাম বা বিপরীতকাম, মরা এবং বাঁচা, আক্রমন বা আক্রান্ত হওয়া, খাওয়া বা নাখাওয়া, পরিবেশবাদী আন্দোলন বা শিল্পায়নের ঘোড়ার লাগাম ছেড়ে দেওয়া, ধর্ম আর অধর্ম, যৌনতা বিপরীতে পবিত্রতাকে দাড় করানো; বৈধতা আছে মিলনে বা হস্তমৈথুনে, ভালোবাসা বা ঘৃণায় এমনকি গালি দেওয়া বা না দেওয়ায়। এই পৃথিবীতে সমস্তের বৈধ্যতা আছে।
পৃথিবী আসলে দাড়িয়ে আছে বাইনারী অপজিশনের উপর। পক্ষ বা বিপক্ষকে সামনাসামনি দাড় করিয়েই আমাদেরকে পৌঁছাতে হয় সত্যের কাছাকাছি, পরিকল্পিত অর্ধসত্যের কাছে।
এবং এটা আমাদের বাঁচিয়ে রাখে, বেঁচে থাকার নানা রুপ অর্থ দান করে। ফলে মিথ্যাটা সত্যের অংশ আর সত্যটা মিথ্যার বিপরীত অর্থ। এই দৃশ্যময়তার জ্যামিতি আসলে কি তাহলে আমাদের প্রকৃত সত্য বা প্রকৃত মিথ্যার নিকটে পৌঁচ্ছাতে দিচ্ছে না? না আমরা আসলে কোথাও পৌচ্ছাতে পারি না। কেননা আমাদের যাত্র মানসিক। বস্তুগত যাত্রায় মন কোনদিন যেতে পারে না, যেতে পারে তার কল্পনা, কল্পনাই জ্ঞান, কল্পনার থেবেই এই বস্তু পৃথিবীর উদ্ভব।
ফলে এক নিরাকার মানব ঈশ্বর ( মানুষের মন) ঠিক করে দেয় আমি কি এবং আমার পাশে পড়ে থাকা বস্তুটি কি এবং কেন এটি এখানে। এজন্য অবস্তু দিয়ে ধারণ করতে হয় বস্তুকে। এই হলো আমার পৃখিবী জ্ঞান, বস্তু অনুভুতি। আমি মানস থেকে বস্তুতে আসি। বস্তু থেকে আমার যাত্র মানসের দিকে কখনওই নয়।
তবে বস্তুগত যাত্রায় মন কোনোদিন যেতে পারে না, কেন?
এই কথাটা খুব ভিন্নার্থ দিতে সক্ষম যদি তাকে মাত্র একটা পদে বন্দি না করা হয়। আর সেই এক পদ হলো সমাজ বা সমাজ সম্পর্কিত ধারণা। আমরা বসত করি এক বস্তুগত সমাজে। মানুষের সমাজিকীকরণ প্রক্রিয়াটাকে বিমূর্ত, এই ধারণা প্রচলিত। তবে আমার মনে হয় মানুষের সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়াটা বস্তুগত।
সামাজিক জ্ঞানের উদ্ভব হয় বস্তু দ্বন্দ্ব থেকে। সমাজের উপর যে বিমূর্ততার আবরণ ছড়ানো প্রচেষ্টা তা থেকে মুক্তির আশা রাখি ।
এইবার কথা বলা যেতে পারে গালি আর শিল্প- সাহিত্যের সাথে এর সম্পৃক্ততা নিয়ে। সাহিত্যকে বলা হয় সমাজ-সংস্কৃতির উপস্থাপক। প্রথম কথা আমি এই কথাটাকে প্রথমেই খারিজ করে দেই।
আমি এই কথা গ্রহনে সক্ষম নই। সাহিত্য আসলে খন্ডিত প্রেক্ষাপট, খণ্ডিত ভূগোল নিয়ে সে বেড়ে ওঠে। ফলে পুরো সামাজিক বাস্তবতা নিয়ে সে বেড়ে উঠতে পারে না। তাকে সে দায়িত্ব দেওয়াও যায় না। শিল্প সাহিত্য একটা মানসিক দশা মাত্র।
সেই মানসিক দশা আমাদের কে পৌঁছে দিয়ে আসে কল্পনার আসমানে, কিন্তু তার রির্ভাস মোশন নেই। সে ঠিক সমাজের উপর ফিরে আসতে পারে না। এটাই লিখিত সত্যের অন্তসারশূণ্যতা। ফলে শিল্পেরে আলোকে সমাজকে বিশ্লেষণ করলে ধন্দে পড়ে যেতে হবে। এইখানে আমি শিল্পকে অস্বীকার করি।
আর এই জন্যই শিল্প বিজ্ঞান হয়ে ওঠে না। বা তার সে প্রয়োজন নাই। তবে সাহিত্যের প্রযোয্যতা কোথায়? সাহিত্য মাত্র প্রবণতা প্রকাশ করে। এই প্রবনতাকে আমরা কোখাও প্রয়োগ করতে পারি না। আমরা সেই অন্ধকার দশা যেখানে শিল্প আমাদের পৌঁছে দেয় সেখান থেকে ব্যাক করতে পারি।
শিল্পের দায় এই পর্যন্তই মাত্র পৌঁছে দেওয়া। ফলে তার সামাজিক কোন পরিকর্তন বা তাকে উদাহরণ হিসাবে দাড় করানো নিরর্থক লাগে। তার থেকে বরং সঙ্গীত অনেক সামাজিক ভূমিকায় অংশগ্রহন করতে পারে। সে আলোচনা না হয় পরে একদিন হবে।
এখন কথা হলো আখতারুজ্জামান ইলিয়াস যখন ঢাকাই কুট্টির ভায়ায় শিল্প তৈরি করে, অথবা হাড্ডি খিজিরের মুখ দিয়ে কথা বলান বা তমিজের বাপ যখন কথা বলে তা রিপ্রেসেন্ট করে একটা অংশকে।
যদিও সে ইতিহাস আমাদের সমগ্র ইতিহাসের অংশ। তাতে ক্ষতি নেই। কিন্তু তিনি যাদের মুখ দিয়ে কথা বলান তারা কোন স্তরের সেটা লক্ষণীয়। শিল্পে গালি, কাম করা করি যে নামেই তাকে ডাকুন না কেন তা আসতে পারে। সাহিত্য প্রকাশ করে খন্ডিত একটা অংশ।
সমগ্র ধারণ করা অসম্ভব শিল্পে। শিল্পের সাথে সমাজকে গুলিয়ে ফেলার পক্ষপাতি আমি নই। কিন্তু এটাকে শিল্প বা সাহিত্যের শেষ এবঙ শ্রেষ্ঠ মান হিসাবে আমরা কেন ধরবো?
এখন ব্লগের সাথে শিল্প বা সাহিত্যকে গুলিয়ে ফেললে মুশকিল। আমারা ব্লগকে কিভাবে দেখবো? শিল্প সাহিত্য কোন প্রপাগান্ডা নিয়ে আগায় না, তার যাত্র অবিরত প্রকাশ বা অপ্রকাশের মধ্য দিয়ে। কিন্তু ব্লগ আগায় প্রপাগান্ডার ভেতর দিয়ে।
শিল্পের ভাষা গালি হলে সমস্যা নেই। কিন্তু আমার প্রপাগান্ডার প্রকাশ ভঙ্গি গালিতে পর্যবসিত হলে আদতে কোন লাভ থাকে না। ব্লগে যে গালির র্চ্চা তা মূলত আমাদের প্রচার, যে সামাজিক দায় বদ্ধতাকে ধারণ করি তাকে উল্টো পথ দেখায়। এটা হয়ে ওঠে ব্যক্তি আক্রমনের জায়গা। ফলে তাকে এডিট করার প্রয়োজনীয়তা বোধ করা হয়।
কেননা এটা একটা প্রচার কাঠামো। শিল্পের সে দায় নেই। তার পথ এবং মুক্তি অন্যকোথাও এথায় নয়। ফলে দুটো কে এক করলে চলে না। ব্লগ এবং শিল্প আলাদা জিনিস।
এখানে হারা জেতার খেলা আছে। ফলে আমার প্রচারের ভাষা নানা রকম হতে পারে, তবে সেটা যেনো সমকালীন একটা মানদন্ডকে ছাড়িয়ে না যায়। আমি এভাবে বুঝি ব্যাপার গুলো। এখানে আমি শিল্প ফলাতে আসিনি। আমার যে সামাজিক দায় বদ্ধতা তার প্রকাশ ভঙ্গি এমন হওয়া দরকার যা মিনিমাম গ্রহন যোগ্যতা পাবে।
খুব সামান্য উদাহরণ টানা যেতে পারে, একজনের বাড়ি গিয়ে যদি আমি বলি তুমি তোমার সব ঠাকুর দেবতা ভেঙে ফেলো বা যদি বলি এসো কোরান পোড়াই। তখন কি দাড়াবে, আমার মাথায় যতই যুক্তি আর বুদ্ধি থাক তাকে আমি কিছুই বোঝাতে সক্ষম হবো না। তার আর আমার ভেতর বিরোধ তৈরি হবে। সে আমাকে নিতে পারবে না। আর যদি আমরা তাকে লালনের গান বোঝাতে সক্ষম হই তবে মনে হয় আর সমস্যাটা থাকে না।
এখানেই চার্বাক দর্শনের ব্যর্থতা, আর বাউল দর্শনের জয়।
ব্লগ হলো প্রচার যন্ত্র, নয়া টেলিভিশন, জনসংযুক্তি তার আছে। জনগনকে সাথে নিয়ে আগাতে হয়। আর শিল্প হলো স্বপ্ন যা মানুষকে দেখানো শেখাতে হয়। একটা শিক্ষা আর একটা শিক্ষণ প্রকৌশল।
(লেখাটার দ্বিতীয় সংস্করণ রিপোষ্ট হবে। আপনার মূল্যবান মতামত আমার ভুল ধারণা গলো পাল্টাতে সাহায্য করবে, এমনই আশা করি। )
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।