আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সে আমার বহুকালের প্রেয়সী

সময়... অনাদি... হতে... অনন্তের... পথে...

রূপ-নারায়নের কুলে জেগে উঠিলাম/ জানিলাম, এ জগৎ স্বপ্ন নয়। রক্তের অক্ষরে দেখিলাম, তোমার রূপ/ চিনিলাম তোমারে, আঘাতে আঘাতে, বেদনায়, বেদনায়/ সত্য যে কঠিন, কঠিনেরে ভালবাসিলাম-সে কখনও করে না বঞ্চনা, আমৃত্যু দুঃখের তপস্যা এ জীবনে। প্রথম দিনের সূর্য প্রশ্ন করেছিল, সত্তার নতুন আর্বিভাবে- কে তুমি? উত্তরে বলিলাম -সাংবাদিকতা। সে আমার বহুকালের প্রেয়সী। বোধহয়-যখন আমার রথীর মত বয়স ছিল, তখন থেকে আমার সঙ্গে তার বাগদত্তা হয়েছিল।

তখন থেকে আমাদের পুকুরের ধারে, বটের তলা, বাড়ির ভিতরের বাগান, ভিতরের অনাবিস্কৃত একতলার ঘরগুলো, সমস্ত বাহিরের জগৎ, দাসীদের মুখের সমস্ত রূপকথা, ছড়াগুলো, আমার মনের মধ্যে ভারী একটা মায়াজগৎ তৈরি করেছিল। তখনকার সেই আবছায়া অপূর্ব মনের ভাব প্রকাশ করা ভারী শক্ত, কিন্তু এই পর্যন্ত বেশ বলতে পারি-সাংবাদিকতার সঙ্গে তখন থেকেই মালাবদল হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সাংবাদিকতা পয়মন্ত নয়, তা স্বীকার করতে হয়, আর যাই হোক সৌভাগ্য নিয়ে আসে না। সুখ দেয় না কথাটি বলতে না পারিলেও স্বস্তির সঙ্গে এর কোনও সর্ম্পক নেই। যাকে বরণ করে নেয়, তাকে নিবিড় আনন্দ দেয়।

কিন্তু এক এক সময় কঠিন আলিঙ্গনে হৃৎপিন্ডটি নিংড়ে রক্ত বের করে নেয়। যে লোককে তুমি নির্বাচন কর, সংসারের মাঝখানে তার ভিত্তিস্থাপন করে গৃহস্থ হয়ে স্থির হয়ে আয়েস করে বসা একেবারে অসম্ভব। কিন্তু এতকিছুর পরেও আমার আসল জীবনটি তার কাছে বন্ধক আছে। "সাধনা'ই লিখি আর বাবার "জমি'ই দেখি, যখন সংবাদ লিখতে আরম্ভ করি, অমনি আমার চিরকালের যথার্থ আমার মধ্যে প্রবেশ করে- তখন আমি বেশ বুঝতে পারি এই আমার স্থান। জীবনে জ্ঞাতসারে কিংবা অজ্ঞাতসারে অনেক মিথ্যাচারণ করা যায়, কিন্তু তোমাকে (সাংবাদিকতা) নিয়ে মিথ্যা বলি না।

তুমিই আমার জীবনের সমস্ত গভীর সত্যের একমাত্র আশ্রয়স্থান। এ যেন এই বৃহৎ ধরণীর প্রতি একটা নাড়ীর টান। এক সময়ে যখন আমি এই ধরণীতে এক হয়ে ছিলাম, যখন আমার উপর সবুজ ঘাস উঠত, শরতের আলো পড়ত, সূর্যকিরণে আমার সুদূরবিস্তৃত শ্যামল অঙ্গের প্রত্যেক রোমকুপ থেকে যৌবনের সুগন্ধির উত্তাপ উত্থিত হত, আমি কত দূর-দূরান্তের কত দেশ-দেশান্তরের জল-স্থল-পর্বত ব্যপ্ত করে উজ্জল আকাশের নীচে নিস্তবদ্ধভাবে শুয়ে থাকতাম-তখনও তোমাকে নিয়েই ভাবতাম। আর এসময় শরৎসূর্যালোকে আমার সর্বাঙ্গে যে একটি আনন্দরস, একটি জীবনীশক্তি, অত্যন্ত অব্যক্ত, অর্ধচেতনাবস্থায় প্রকান্ডভাবে সঞ্চারিত হতে থাকত। তোমার ( সাংবাদিকতা) প্রতি আমার এই যে মনের ভাব, এ যেন প্রতিনিয়ত অঙ্কুরিত, মুকলিত, পুলকিত সূর্যসনাথা আদিম পৃথিবীর ভাব।

আমার এই প্রবাহ যেন পৃথিবীর প্রত্যেক ঘাসে এবং গাছের শিকড়ে-শিকড়ে, শিরায়-শিরায় ধীরে ধীরে প্রবাহিত হচ্ছে। সমস্ত শস্যেক্ষেতের মত নিজের দেহটি রোমাঞ্চিত হয়ে উঠছে এবং নারিকেল গাছের প্রত্যেক পাতার মত জীবনের আবেগে থর থর করে কাঁপছে। তোমার ওপর আমার যে একটি আন্তরিক আত্মীয়বৎসলতার ভাব আছে, ইচ্ছে করে সেটা ভালো করে প্রকাশ করি। কিন্তু অনেকেই ঠিকটি বুঝতে পারে না এবং পারবেও না, সারাক্ষণ কি একটা কিম্ভূত রকমের মনে করবে···আর আমি, কি-ই-বা শুনাতে পারব? তাইতো রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর তার কবিতায় লিখেছেন, কি হবে শুনিয়া, সখী, বাহিরের কথা /অপমান, অনাদর, ক্ষুদ্রতা আর দীনতা যত-কিছু! শত সহস্রের মাঝে একজন, সদা বহি সংসারের ক্ষুদ্র ভার, কভু অনুগ্রহ, কভু অবহেলা, সহিতেছি অহরহ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.