কষ্ট হলেও সত্য বলা বা স্বীকার করার সাহসই সবচেয়ে বড় সততা।
খৃষ্টানরা জেরুজালেমে পরাজিত হল। জেরুজালেমে ইসলামের বিজয় পতাকা উড়ল। কথা ছিল নগরীকে হযরত উমর (রা)-এর হাতে তুলে দেয়া হবে। সে অনুযায়ী নগরীর দায়িত্বভার খলিফার হাতে অর্পণ করা হল।
জেরুজালেমে আছে বায়তুল মাকদাস। ইসলামের প্রথমে কিবলা।
উমর (রা) এটা দেখার ইচ্ছা দেখালেন। খলিফাকে বায়তুল মাকদাস দেখানোর দিনক্ষণ ঠিক করা হল। যাত্রার আগে মুসলিম সেনাপ্রধানরা খলিফাকে অনুরোধ জানিয়ে বললেন, জেরুজালেম যাবেন, একটু ভাল পোশাক পড়ুন।
কথা শুনে খলিফা রাজী হলেন। আর যায় কোথায়? সংগে সংগে শ্বেত পোশাক এবং একটি বলবান ঘোড়া আনা হল।
খলিফা এসবের দিকে তাকালেন। তারপর চোখ ফিরিয়ে নিলেন। খলিফার মনে ভয় উদিত হল।
এত জাঁকজমকপূর্ণ পোশাক তিনি পরতে চাইলেন না।
তাই তিনি পোশাক ফেরত নিতে বললেন। খলিফা বললেন,
রাসূল করীম (স) বলেছেন, যে জিনিস মানুষকে অহংকারী করে তুলে তা বর্জনীয়। তাই এ পোশাক এবং ঘোড়া আমি ব্যবহার করতে পারি না।
তারপর খলিফা তার পুরনো পোশাক পরিধান করলেন এবং লাল অশ্বে আরোহণ করে রওনা দিলেন।
কথা ছিল খলিফা খৃষ্টানদের গীর্জাও পরিদর্শন করবেন। খৃষ্টানরা তাই খলিফা উমরকে (রা) স্বাগত জানাতে গীর্জার সামনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াল।
খলিফার আগমন দেখার জন্য খৃষ্টানদের মন ব্যাকুল হয়ে উঠল।
কিন্তু তারা সহসাই খুব বিস্মিত হল।
চোখে-মুখে তাদের সীমাহীন বিস্ময়।
হযরত উমর (রা) ধূলি ধূসরিত পোশাক ও লাল অশ্বে চড়ে চলছিলেন। খলিফার পরনে ছিল তালি দেয়া পোশাক। মাথায় মোটা কম্বলের পাগড়ি।
গীর্জার প্রধান ধর্মযাজক ছিল সফ্রেনিয়াস। অর্ধ দুনিয়ার মালিক উমর (রা)-এর অতি সাধারণ অবস্থা দেখে তিনি ভয়ে বিস্ময়ে ভক্তিতে মোম হয়ে গেলেন।
তারা হযরত উমরকে গীর্জা ঘুরে ঘুরে দেখলেন।
নামাযের সময় হয়ে এল।
খলিফা ধর্মযাজক উমর (রা)-কে গীর্জায় নামায পড়তে বললেন।
কিন্তু উমর (রা) গীর্জার বাইরে গিয়ে নামায পড়লেন। পরে ধর্মযাজক খলিফাকে জিজ্ঞেস করলেন,
আপনি কেন গীর্জায় নামায পড়লেন না?
খলিফা জবাব দিলেন,
আমি যদি গীর্জায় নামায পড়ি তাহলে ভবিষ্যতে মুসলিম সাম্রাজ্যের গীর্জাগুলো মসজিদে রূপান্তরিত হয়ে যাবে।
সফ্রেনিয়াস একথা শুনে আরেকবার অভিভূত হলেন।
তিনি শুধু অভিভূতই হলেন না। খলিফার উদারতায় সফ্রেনিয়াসের সামনে অজানা জগতের এক দ্বার খুলে গেল। একজন বিজিত শাসকের উদারতা, মহানুভবতা ও নিরংকার মন খৃষ্টানদের বিস্মিত করল।
ইসলামের আদর্শ মানুষকে যে কত মহৎ ও মহানুভব করে তা বলে শেষ করা যাবে না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।