সুবহানাহু তায়া’লা ওয়ারাআল ওয়ারাই ছুম্মা ওয়ারাআল ওয়ারাই-জ্ঞান ও অনুভূতি যে পর্যন্ত পৌছে, আল্লাহতায়ালার জাতে পাক তার পরে, বরং তারও আরো পরে।
এবার এক এক করে আমরা এই উপাদানসমূহ সম্পর্কে সংপ্তিভাবে আলোচনা করব।
এলেমঃ জ্ঞানই আলো। অজ্ঞতা অন্ধকার। ইসলামের উদ্দেশ্যই হচ্ছে মানুষকে মিথ্যার অন্ধকার থেকে সত্যের আলোকের দিকে পথপ্রদর্শন করা।
তাই ইসলামে এলেম শিাকে ফরজ করে দেওয়া হয়েছে। এই এলেম দ্বীনের এলেম- শরীয়তের এলেম। মহানবী (সঃ) এরশাদ করেছেন, ‘প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্যে এলেম শিা করা ফরজ’ (্হবনে মাজা)।
প্রত্যেক মুসলমানকে তাই আল্লাহ্পাকের হুকুমসমূহ সম্পর্কে এবং নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করতে হবে। হালাল, হারাম, ফরজ, ওয়াজেব এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়ে এলেম শিা করা জরুরী।
হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, এলেম দুই প্রকার। জবানী এলেম এবং কলবী এলেম (মেশকাত)। মহানবী (সঃ) এলেম শিা করাকে ফরজ বলেছেন। শুধুমাত্র জবানী এলেম শিা করাকে অথবা শুধুমাত্র কলবী এলেম শিা করাকে তিনি ফরজ বলেননি। আর এলেম যেহেতু দুই রকম তাই দুই রকম এলেম শিা করাই ফরজ।
তবে এই ফরজের সীমারেখা কতদূর সে সম্পর্কেও আমাদের স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে।
আমরা জানি পাঁচটি স্তম্ভের উপরে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত Ñ কলেমা, নামাজ, রোজা, হজ্জ্ব ও জাকাত। এই পাঁচ স্তম্ভ নিজের জীবনে বাস্তবায়িত করতে হলে অবশ্যই এই সমস্ত বিষয় কীভাবে সম্পন্ন করতে হবে, তার এলেম অর্জন করাও আমাদের প্রতি জরুরী হয়ে পড়ে।
কিন্তু আমাদের মধ্যে যাঁরা সম্পদশালী নন, তাঁদের জন্য হজ্ব, জাকাত ফরজ নয়। সুতরাং এসব বিষয়ে এলেম শিা করাও তাঁদের প্রতি ফরজ নয়।
মোট কথা, শরীয়তের নির্দেশ অনুযায়ী আমাদের যার উপরে যতখানি আমল জরুরী হয়ে পড়ে, সে সমস্ত আমল সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় এলেম শিা করাও ফরজ হয়ে যায়।
প্রত্যেক মুসলমানের জন্য হাফেজে কোরআন হওয়া, মুহাদ্দিস, মুফাস্সির হওয়া ফরজ নয়। তেমনী কলবী এলেমের েেত্রও প্রত্যেক মুসলমানের জন্য কুতুব, গাউস, আবদাল, আওতাদ, মোজাদ্দেদ হওয়া ফরজ নয়।
যতটুকু এলেম শিখলে একজন মুসলমানের কলব (অন্তর) গায়রুল্লাহর মহব্বত থেকে মুক্ত হয় এবং কল্ব সালিম (প্রশান্ত) অবস্থা ধারণ করে, ততটুকু কলবী এলেম শিা করা ফরজ। কারণ আল্লাহ্পাক এরশাদ করেছেন, ‘কিয়ামতের দিনে তোমাদের ধন সম্পদ সন্তান-সন্ততি কোন কাজে আসবে না, কাজে আসবে শুধু সালিম কলব’ (সুরা শুআরা)।
আর কলবের প্রশান্ত অবস্থা তখনই হাসিল হয়, যখন কলবে প্রজ্জ্বলিত হয় জিকিরের নূর। যেমন, আল্লাহ্পাক এরশাদ করেন, আল্লাহর জিকির দ্বারাই কলব শান্তি লাভ করে (সুরা রাআদ)।
জবানী এলেম শিা করতে গেলে মাদ্রাসায় দাখেল হতে হয়। অথবা ফেকাহ্র কেতাব পাঠ করতে হয়। অরজ্ঞান না থাকলে আলেমগণের কাছ থেকে জেনে শুনে নিতে হয়।
আর কলবী এলেম শিখতে গেলে এমন ব্যক্তির শরণাপন্ন হতে হয়, যার কলবে জিকিরের নূর প্রজ্জ্বলিত থাকে সারাণ। এইরুপ ব্যক্তির সহবত এখতেয়ারের জন্য তাঁর নিকট মুরিদ বাা বায়াত হওয়া প্রয়োজন হয়ে পড়ে। বায়াতের প্রেমময় বন্ধনের সূত্র ধরেই এইরুপ বুজর্গ ব্যক্তির কলব থেকে জিকিরের নূর মুরিদের কলবে প্রতিবিম্বিত হয়ে মুরিদের কলবও জিকিরময় হয়ে উঠে। আর তখনই কলব সালিম অবস্থায় পৌছতে পারে। যিনি কলবী এলেম সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ তাঁকেই পীর বা মোর্শেদ বলা হয়।
জাহেরী এলেম শিার শেষে অথবা সাথে সাথে কলবী এলেম শিায় মনযোগী হওয়া উচিত। নতুবা ফরজ তরক করার দায়ে দায়ী হতে হবে।
আমলঃ এলেম শিার সাথে সাথে আমলও করা চাই। কারণ এলেম অর্জনের উদ্দেশ্যই হচ্ছে আমল করা। সুতরাং আমল না হলে এলেম শিার কোনই অর্থ হয় না।
আমরা আল্লাহ্তায়ালার বান্দা। বন্দেগীর হক আদায় করাই আমাদের প্রধান দায়িত্ব। আর বন্দেগীর নিয়ম কানুন শিার জন্যেই আমাদেরকে এলেম অর্জন করতে হয়। তাই এলেম অনুযায়ী আমল করতেই হবে।
এখলাছঃ এখলাছ অর্থ বিশুদ্ধ নিয়ত অর্জন করা।
নিয়ত অর্থ সংকল্প-ইচ্ছা। সংকল্পও শুদ্ধ হওয়া চাই। কারণ, একমাত্র আল্লাহ্পাকের হুকুম প্রতিপালন ও তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্য ছাড়া অন্য যে কোন উদ্দেশ্য ছাড়া অন্য যে কোন উদ্দেশ্যে যতপ্রকার এবং যতবেশী এলেম শিা করা হোক অথবা যতবেশী আমল করা হোক না কোন-তাতে কোনই লাভ হবে না। তাই এখলাছও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এখন কীভাবে বিশূদ্ধ নিয়ত অর্জন করতে হয়, সে সম্পর্কে আমরা কিঞ্চিত আলোচনা করব।
নিয়তের উৎপত্তিস্থল কলব আ অন্তর। মুখে নিয়ত উচ্চারণ করা ফরজ নয়। অন্তরে সংকল্প স্থির করা ফরজ। যে কোন এবাদত স¤াদন করার পূর্বে নিয়ত করা জরুরী। হাদিস শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে যে, নিয়ত অনুযায়ী আমল বিচার করা হবে (বোখারী)।
(কৃতজ্ঞতা ঃ আমার মুর্শিদ অলিয়ে মুকাম্মলি হযরত মামুনুর রশিদ (মাঃ))
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।