আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বৃস্টিভেজা আটলান্টার সকাল



গতকাল রাতে গল্প করতে করতে ঘুমাতে গেলাম রাত সাড়ে তিনটায়। সকাল বেলা উঠলাম এগারটার দিকে। উঠে দেখি টেবিলে গরম ডাল পুড়ি, চা, মাংস আর পরটা। গরম গরম ডালপুড়ি চা দিয়ে খেয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে দেখি অন্ধকার ভর করেছে চারপাশ। কালকে সারারাত এখানে অঝোর ধারায় ঝরেছে।

বৃস্টির শব্দে রাতে বেশ ক'বার ঘুম ভেংগে গেল। মনে হলো, গ্রামের বাড়ীতে গেছি। বৃস্টি ঝড়ছে। বৃস্টির শব্দগুলো মনটাকে আর্দ্র করে রেখেছে। তার মধ্যে কখন সকাল হয়ে গেল তা টেরই করতে পারিনি।

জর্জিয়া স্টেটে এবার ভাল খরা পড়েছে। তাই, একটু বৃস্টিকেও এরা আশীর্বাদ বলে মনে করছে। এবার বৃস্টির জন্য এখানে চার্চে আর মসজিদে একসাথে প্রার্থনা হয়েছে। তাই, এক ফোটা বৃস্টি পড়লেও এরা আনন্দিত। জর্জিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে হয় চাষাবাদ।

আর এই চাষাবাদ কিন্তু এবার থমকে গিয়েছিল খরায়। পানির ব্যবহারের উপর এখানে অনেকদিন রেস্ট্রিকশন ছিল। পানি সংরক্ষণের জন্য কেউ বাগানে পানি দিতে পারবে না। গাড়ী ওয়াশ করতে পারবে না। রেস্টুরেন্টে পানি দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।

৫৭ হাজার বর্গমাইল এলাকার জর্জিয়ার জনসংখ্যা এক কোটির চেয়েও কিছু কম। আর এখানে খরার প্রভাব ছিল ভয়াবহ ও দুর্বিসহ। প্রকৃতির রুদ্র মূর্তির প্রভাব সর্বত্রই একরকম। কিন্তু আজকের সকালে বৃস্টি ভার্জিনিয়া থেকে আগত আমার জন্য মোটেও সুখকর ছিল না। সকালে বাইরে বেরোবার প্ল্যানটা বাদ দিয়ে দিলাম।

বাসায় এক কাপ চা নিয়ে ল্যাপটপটা নিয়ে বসলাম। সামনে আমেরিকান ফুটবল খেলা হচ্ছে। জর্জিয়া বুলডগ আর হাওয়াই ইউনিভার্সিটির মধ্যে খেলা শুরু হবে। এদেশের ফুটবল খেলা আমার কখনও পছন্দ হয় না। আমি সকার ফ্যান।

সকার ছাড়া আর কিছু রুচে না। তাও বসে বসে ধাক্কাধাক্কির ফুটবল খেলা দেখলে আমার ভাল লাগে না। তাই বসে বসে ব্লগাচ্ছি। বৃস্টিভেজা আটলান্টায় বিবর্ণ গাছগুলো একফোটা পানির স্পর্শে হয়তো সবুজ হয়ে উঠবে। কিন্তু তা ও সম্ভব না।

শীত না যাওয়া পর্যন্ত এখানকার গাছগুলো বিবর্ণ থাকবে। বসন্তের আগমনে আবারও সবুজ পাতা নিয়ে প্রকৃতি সেজে উঠবে। মার্চ থেকেই সবুজ হতে থাকে। বিবর্ণ আটলান্টায় সবুজ ফিরে আসবে বসন্তের ছোঁয়ায়। প্রতি বছরই এখানে শীতের ঝরাপাতায় বসে থাকা মানুষগুলো বসন্তের জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে।

বসন্ত আসা মাত্রই শুরু হয় প্রাণের স্পন্দন। শুরু হয় বাইরের ছুটোছুটি। প্রকৃতি মানুষকে কি গভীর ভাবে স্পর্শ করে তা খুব কাছ থেকে দেখলেই বুঝা যায়। মানুষ আর প্রকৃতি এক সুতোয় বাঁধা। প্রকৃতিনির্ভর জীবনধারা প্রযুক্তির আঁচড় অতি সামান্য।

তা আমেরিকা হোক আর বাংলাদেশ হোক। আটলান্টার বৃস্টিভেজা সকালে প্রকৃতির কাছে সমর্পিত জীবনে আমি অন্তরীণ হয়ে আছি। বৃস্টির কারণে বাইরে যাচ্ছি না। ট্রিপ প্ল্যান ভেস্তে গেল। আমি তারপরও আনন্দিত।

প্রকৃতির আনন্দে আমাদের আনন্দ। তারই কিছুটা শেয়ার করলাম আপনাদের সবার সাথে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.