তবে একলা চলরে.......
---------------এর মধ্যে আরো কিছুদিন কেটে গেছে । হুমায়ুন ভাই ধানমন্ডিতে দখিন হাওয়ায় থাকেন । এক সকালে আমি তাফসিরে মাকহারির ১২ খন্ডের একট সেট নিয়ে হাজির হলাম । হুমায়ুন ভাই ফ্লোরে বসে লিখছেন । পরনে এক রঙের সবুজ লুঙ্গি ।
হাফ হাতার একটা খয়রি শার্ট । একটু টাইট । অভিনেতা স্বাধিন খসরু পাশে একটা গদিতে বসে আছেন । লেখার সময় কোন লেখকই কোন প্রকার বিঘœ পছন্দ করেন না । আমি তাড়াহুড়া করে তাফসিরের বইগুলো রেখে বিদায় নিয়ে চলে আসছি ।
সে সময় উনি ঘুরে বসে আমাকে ডাকলেন । বললেন বসো ।
আমি খুব সঙ্কুচিতভাবে বললাম আপনি লিখছেন, ডিস্টার্ব হবে না ?
উনি বললেন আজকে আর লিখব না । তোমার সাথে গল্প করব । বলো ।
বলে কি ! বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয়তম লেখক হুমায়ুন আহমেদ বলছেন আমার সাথে গল্প করবেন -এও কি বিশ্বাসযোগ্য !
আমি খুব দ্বিধা নিয়ে তখনো দাঁড়িয়ে আছি । এর মধ্যে স্বাধীন বললেন, স্যার আপনাকে বসতে বলেছে, বসেন ।
আমি বসলাম ।
হুমায়ুন ভাই এমন আন্তরিকভাবে কথা বলা শুরু করলেন যে মণে হচ্ছে যেন আমি উনার দীর্ঘ দিনের চেনা কোন স্বজন । অনেক দিন পর দেখা হওয়ায় বিস্তারিত খোঁজখবর নিচ্ছেন ।
এর মধ্যে চা চলে এলো । ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ থেকে আমাদের গল্প নানা দিকে বিস্তৃত হয়ে গেছে । আলোচনায় নতুন ডাইমেনশন এসেছে । হুমায়ুন ভাই কথার যাদুকর । তারচেয়েও বড় বিষয় উনার আচরণেও একটা ’মালাহাত’ ব্যাপার আছে ।
মানুষের রূপ-গুণে প্রধানত দুই ধরনের বৈশিষ্ট্য থাকে ’সাবাহাত’ ও ’মালাহাত’ । কিছু মানুষ হচ্ছে মালাহাত বা মন জুড়ানো গুণের ধারক । সাবাহাত বৈশিষ্টের মানুষের প্রতি অন্য মানুষ কামনা করে না । নিজেকে উজাড় করে দিতে চায় । হুমায়ুন ভাইয়ের মধ্যে সেই মালাহাত ব্যাপারটা আছে ।
-------------আমাদের বিশ্বাস ধর্ম-দর্শন আলোচনার এক পর্যায়ে হুমায়ুন ভাই জানালেন অন্য প্রকাশ হুমায়ূন আহমেদের বই প্রকাশ বিষয়ে উনার সাথে একটি চুক্তি করেছে । সে কারণে বাংলাবাজারে তারা একটি নতুন শোরুম করেছে । শোরুম উদ্বোধন করতে হবে হুমায়ুন ভাইকে । উদ্বোধনের আগে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হলো । এক কম বয়সী হুজুর মিলাদ পড়ালেন ।
মিলাদ জাতীয় অনুষ্ঠানে বেশিরভাগ হুজুর সাধারণত যে ভাষায় বা যেভাবে দোয়া করেন এটা অনেকেরই ভালো লাগে না । হুমায়ুন ভাইও সেই দলের । এজন্য মিলাদের দোয়ায় উনার বিশেষ কোন আগ্রহ ছিলনা । কিন্তু ওই কম বয়সী হুজুর মিলাদ শেষে এমন সুন্দর করে এত চমৎকার ভাষায় দোয়া করলেন যে হুমায়ুন আহমেদের মতো মানুষ মুগ্ধ হয়ে গেলেন । দোয়া শেষ হওয়ার পরে হুমায়ুন ভাই হুজুরকে কাছে ডেকে বললেন আপনি আমাকে মুগ্ধ করেছেন ।
এ জন্য আপনি আমার কাছে একটা কিছু চান ।
তরুণ হুজুর হুমায়ুন ভাইকে অবাক করে বললেন, স্যার ! অনেক দিন ধরে আমি আপনার সাথে সাক্ষাৎ করার রাস্তা খুজছিলাম, কিন্তু আপনার সাথে দেখা করার কোন লাইন করতে পারিনি । আজ আল্লাহপাক আপনার সাথে কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছেন ।
হুমায়ুন ভাই বিস্মিত হলেন । জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি আমার সাথে দেখা করতে চেয়েছেন কেন ?
হুজুর বললেন সেটা বলব স্যার ।
তার আগে আপনার কাছে আমার একটা অনুরোধ, আমি আপনার কাছে একটা জিনিস চাইব আপনাকে দিতে হবে স্যার ।
বলেন কী চান আপনি ! আমি দিব ।
হুজুর বললেন, স্যার বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষ তার মধ্যে তরুণ ছেলেমেয়েরা আপনার লেখা পড়ে । আপনাকে ভালবাসে । আপনি স্যার আমাদের নবীজী (সাঃ) এঁর জীবনী নিয়ে একটা বই লেখেন ।
তাহলে এই তরুণ সমাজ সবাই সেটা পড়বে । আমাদের নবীজী সাঃ সম্পর্কে জানবে ।
হুমায়ুন ভাই সাথে সাথে রাজি হয়ে গেলেন । বাসায় ফিরে রাতে আল্লাহকে বলেন, হে আল্লাহ ! আমি নবীজী সাঃ কে নিয়ে লিখব । তার আগে আমি নবীজীকে স্বপ্ন দেখতে চাই ।
হুমায়ুন ভাই জানালেন এটা এক বছর আগের ঘটনা । এর মধ্যে নবীজী সাঃ গ্রন্থের কাভার ছাপা হয়ে গেছে । হুমায়ুন ভাই লেখার সব প্রস্তুতি নিয়েছেন । এখন অপেক্ষায় আছেন নবীজী সাঃ কে স্বপ্নে দেখার ।
বেলা হয়ে গেছে ।
আমি বিদায় নিতে চাইলাম । হুমায়ুন ভাই উঠে এলেন আমাকে লিফট পর্যন্ত তুলে দিতে । আমি লজ্জিত বোধ করছি । অভিভুত হয়ে গেলাম বাংলা সাহিত্যের জীবন্ত কিংবদন্তি হুমায়ুন আহমেদের এই বিনয় দেখে ।
হুমায়ুন ভাইকে বারবার অনুরোধ করলাম, আপনার আসার দরকার নেই ।
উনি জবাব দিলেন, আমাদের নবীজী সাঃ সব সময় এভাবে অতিথিকে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে বিদায় দিতেন ।
পাদটিকা ঃ
কিছুদিন আগে হুমায়ুন ভাই নবীজী সাঃ গ্রন্থের লেখা শুরু করেছেন । আমি এবং আমার মতো হাজারো-লাখো পাঠক আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করছি মহান স্রষ্টা যত দ্রুত সম্ভব হুমায়ুন আহমেদের এই লেখাটি পড়বার সৌভাগ্য আমাদের দান করেন ।
--আবু সুফিয়ানের লেখা থেকে (সংক্ষিপ্তাকারে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।