আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অথিতি পাখির কলরবে মুখরিত হাওর

সময়... অনাদি... হতে... অনন্তের... পথে...

এশিয়ার অন্যতম বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলার হাকালুকি হাওর ও বাইক্কা বিলে শীতের সুচনাতেই অতিথি পাখীরা আসতে শুরু করেছে। অতিথি পাখীর আগমনে দেশ বিদেশ থেকে পর্যটকদের আনাগুনা বেড়েই চলছে। সরকার এসব হাওরাঞ্চলে অতিথি পাখীর অভয়াশ্রম নিশ্চিত করন ও পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষনে বাস্তবমুখি পদপে গহন করায় আরেকটি অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র তৈরী হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। গত শীত মৌসুমে প্রায় শতাধিক প্রজাতির প্রায় ৮০/৯০ হাজার পাখীর আগমন ঘটে এই অভয়াশ্রমে। এবার শীতের শুরুতে আগত পাখির সংখ্যা রয়েছে প্রায় লক্ষ লক্ষ।

এখনও পাখির আগমন অব্যাহত রয়েছে। বিগত সময়গুলোতে রাজনৈতিক ছত্রচছায়ায় উচ্চাবিলাসী সৌখিন শিকারিদের কারনে পাখিদের নির্বিগ্ন অভয়াশ্রম আতংকে পরিনত হয়। পাশাপাশি এখনও ভিআইপি শিখারিদের লোলুপ দৃর্ষ্টি অথিতি পাখিদের উপর থাকায় সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ নিয়ে পরিবেশবাদী ও সাধারণ নাগরিকদের ক্ষোভ ভিআইপি শিখারিদের উপর বৃদ্ধি পাচ্ছে। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, আগত অতিথি পাখিদের মধ্যে রয়েছে মধ্য এশিয়া থেকে আগত ভূতি হাঁস, গুটি ঈগল, সাইবেরিয়া থেকে আগত গিরিয়া হাঁস আর ল্যাঞ্জা হাঁস।

এছাড়াও এসেছে পৃথিবীব্যাপি বিলুপ্ত পাখি পালাসি কুড়া ঈগল। আরোও রয়েছে বালি হাঁস, রাজ সরালি, পান ভুলানি, কাস্তেচড়া, পান কৌরি, রাঙ্গাবক, বেগুনি কালেম ও মেটে মাথা টিটি প্রভৃতি পাখি। বর্তমানে পৃথিবী থেকে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে মেটে রাজহাঁস, গয়াল(সাপপাখী) ও বড়গুটি ঈগল। বিলুপ্ত প্রায় ৩ প্রজাতির পাখী শ্রীমঙ্গলের বাইক্কাবিলে রয়েছে। হাইল হাওরে মাছ ও পাখী ছাড়া জলজ প্রাণীর মধ্যে কচ্ছপ, উদবিড়াল, মেছোবাঘ, কাঁকড়া, শামুক, ঝিনুকসহ জলজ ফুল শাপলা, পাম, রকশা, প্রকৃতি প্রেমিকদের দৃষ্টি আকর্ষন করে।

প্রতি বছর শীত মৌসুমে সাবেক সোভিয়েত রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত শীতপ্রধান দেশগুলো, সাইবেরিয়া, উত্তর মেরু, হিমালয় অঞ্চল প্রভৃতি এলাকায় শীতের তীব্রতা শুরু হওয়ার আগে প্রায় আড়াই শ’ প্রজাতির লাখো কোটি পাখি দেশান্তর হয়ে এখন আশ্রয় নিয়েছে বড়লেখার হাকালুকি হাওর ও শ্রীমঙ্গলের বাইক্কা বিলে। বাদামি রং শরীর আর কালচে অথবা সাদা-কালো পাখা বিশিষ্ট অতিথিদের কলতানে মুখর হয়ে উঠেছে বিশ্বের বৃহত্তম হাওর মৌলভীবাজার জেলার হাইল হাওরের বাইক্কাবিল ও হাকালুকি। বাদামি কালো রঙের প্রাধান্যের বাইরে আরো আছে সরালি, কালোকুট, গ্যাডওয়াল, পিনটাইন, নরদাম সুবেলার, কমন পোচার্ড এমনকি বিলুপ্ত প্রায় প্যালাস ফিস ঈগল (বুলুয়া)। এই অতিথিরা এখন বাইক্কাবিল ও হাকালুকিসহ মৌলভীবাজারের ছোট-বড় জলাশয়ের লতাগুল্মের আড্ডাগুলো ঘিরে অহরহ জটলা পাকাচ্ছে। সারাক্ষণ খাবার নিয়ে তাদের ঝগড়া, খুনসুটি, ডুব-সাঁতার, কলকাকলি, কখনো বা অহেতুক জটলা আর ডানা ঝাপটানো বিরামহীন এক নান্দনিক আবহের সৃষ্টি করে চলেছে হাওরের প্রকৃতিজুড়ে।

শীতের শেষে গরমের শুরুতে অতিথি পাখীরা ফিরে যায় তাদের আবাস ভুমিতে। এদের অনেকে এদেশের আবহাওয়া ও নিকের আশ্রয় স্থলকে স্থায়ী আবাস করেছে বলে পাখী বিশেষজ্ঞরা জানান। এখানে তারা উষ্ণতার পাশাপাশি পায় পর্যাপ্ত খাবার আর নিরাপদ আশ্রয়। সময়ের হিসাব মতে দেখা গেছে, এসব অতিথি পাখির আগমন বছরের আগষ্ট-অক্টোবর, নভেম্বর-জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি-এপ্রিল এই তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পশ্চিম এশিয়া ও অষ্ট্রেলিয়ান আকাশ পথ ধরে এদেশে পাড়ি জমায় তারা। তবে এদের অধিকাংশই আসে হিমালয়ের পার্বত্য এলাকা থেকে।

প্রতি বছর শীতের শেষে এরা আবার চলে যায়। কিন্তু সবাই যেতে পারে না। প্রচন্ড বরফ পড়া শীতের প্রকোপ থেকে জীবন বাঁচানোর তাগিদে এদেশে এসে এদের অনেককেই সাধের জীবন ত্যাগ করতে হয় মাংসলোভী শিকারির গুলি, জাল আর বিষটোপের মুখে। সিলেট বিভাগের শ্রীমঙ্গলের প্রসিদ্ধ হাইল-হাওরে ও বড়লেখার হাকালুকি হাওরে প্রতি বছরের শীতের শুরু থেকে হাজার হাজার অতিথি পাখির আগমন ঘটে। বহুল পরিচিত বাইক্কা বিল মৎস্য অভয়াশ্রমের হাইল হাওর পর্যবেনের জন্য এ টাওয়ার নির্মাণ করেছে মৎস্য অধিদপ্তরের আওতাধীন এবং ইউএসএআইডি’র আর্থিক সহায়তাপুষ্ট ম্যাচ্‌ প্রকল্প (ম্যানেজমেন্ট অব একোয়াটিক ইকোসিস্টেম থ্রু কম্যুনিটি হাজবেন্ড্রী)।

হাইল হাওরের জলাভূমি সম্পদ সংরক্ষণ ও উন্নয়নের কর্মপরিকল্পনায় গৃহীত কার্যক্রমের অধীনে পর্যটক ও দর্শনার্থীর জন্য নির্মিত পর্যবেক্ষণ দ্বিতল বিশিষ্ট এ টাওয়ার থেকে দুরবীন ও বাইনোকুলার দিয়ে পাখি এবং বিশাল বিস্তৃত হাইল হাওরের সৌন্দর্যøপুর্ণ জলাভুমি পর্যবেক্ষন করা যায়। পর্যটকদের জানার জন্য টাওয়ারের বিভিন্ন তলায় রয়েছে পাখি ও মাছের ছবিসহ পরিচিতি। এদিকে পরিবেশ অধিফতর সুত্র জানিয়েছে, বাইক্কা বিলের ন্যায় সরকার হাকালুকি হাওরের দহবিল, হাল্কা-জল্কা, হারামডিঙা, নাগোয়া-লবিরই ও চাতলা বিলকে অতিথি পাখিদের জন্য ইতিমধ্যে অভয়াশ্রম ঘোষণা করেছে। অভয়াশ্রম গুলোতে পরিবেশ বান্দব পরিস্থিতি সৃষ্টির লক্ষে সরকারের নানা ঘোষনা ও আইন অমান্য কারীদের শাস্তির কঠোর হুসিয়ারি রয়েছে। এ ল্ক্ষ্য বাস্তবায়নে প্রাথমিক পর্যায়ে চাতলা ও দহবিলে হিজল, করচ, বরুন ও মুর্তাসহ জলাভুমির উপযোগী বিভিন্ন উদি্‌ভদের ডাল পোঁতা হয়েছে।

পরিবেশ অধিদফতরের বন্যপ্রাণী বিষয়ক কর্মকর্তা বশীর আহমদের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, দ্বিতীয় পর্যায়ে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই বাকি তিনটি বিলে পাকা খুঁটি বসিয়ে তার ওপর অতিথি পাখির জন্য কৃত্রিম বাসস্থান নির্মাণ করা হবে। বাইক্কা বিলে পাখী দেখার জন্য প্রতি দিন প্রচুর পর্যটকদের আগমন ঘটতে শুরু করেছে। টাওয়ার নির্মানের ফলে খুব সহজে বিশাল হাওরের পাখী দেখার ব্যবস্থা রয়েছে। কেউ যদি নৌকা দিয়ে পাখীর খুব কাছাকাছি থেকে দেখতে চায়,সে ব্যবস্থাও আছে। নৌকার জন্য ঘন্টা হিসাবে ভাড়া নেওয়া যায়।

বাইক্কা বিল পাখী আর মাছের অভয়াশ্রম হলেও হাওর জুড়ে রয়েছে শাপলা ফুলের বাহারী দৃশ্য যা পর্যটকদের দেয় অকৃত্রিম প্রাকৃতিক ছোঁয়া।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।