আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হেলিকাপ্টারের শব্দ হোনলে খিদা মোচড় দিয়া ওডে



ফরিদা বেগমের বাড়ীর (ঘর নেই) ওপর দিয়ে যখন হেলিকপ্টার উড়ে যায় তখন সে কপদর্কহীন চোখে আকাশের দিকে তাকায়। যদি দেখে হেলিকপ্টারটি নিচ দিয়ে যাচ্ছে এবং নিচের দিকে নামছে তবে সে ভো দৌড়ে চলে যায় ভাঙ্গনের স্কুল মাঠে। তার বাড়ী থেকে স্কুল মাঠ পর্যন্ত পৌছতে প্রথমেই একটি ছোট খাল পার হতে হয়। খালের সাকোটি দিয়ে যদি সে যায় তাহলে অনেক দুর ঘুরতে হয়, সময় নষ্ট হয় অনেক। তাড়া তাড়ি যাওয়ার জন্য সে গত ১৪ তারিখ বিকাল থেকে যে কাপড়টি পরে আছে তা নিয়েই সাতার কেটে পাড়ি দেয়।

সর্টকাটে যাবার জন্য তাকে বেতের একটি ছোট্ট জঙ্গলও পাড়ি দেতে হয়। আর ওই জঙ্গল তার কাপড়ের কিছু অংশ যে রেখে দেয় তা তার কাপড়ের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। ফরিদা বেগমের দুটি ছেলে সন্তান ছিল। মিলিয়ে নাম রেখেছিলেন বড়টি শাহীন ছোটটি তুহিন। শাহীনের বয়স ছিল ছয়।

ওই রাতে কি হয়েছিল তা জানেনা ফরিদা, তবে জানেন কি করে পাশের ধান ক্ষেত থেকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করেছিল শাহীনকে। তুহিনের বয়স মাত্র দেড় বছর। ফরিদা ভেবেছিলেন, ঝড়ের পরে যখন বেচে রয়েছেন তখন সব ঠিক হয়ে যাবে। স্বামীর প্রতি তার অগাধ বিশ্বাস তিনি সব ঠিক করে ফেলবেন। স্বামী ভাঙ্গনের বাজারে ভ্যানের মত একধরনের রিক্সা চালাতেন।

স্বামী ফজলুল হক এখন ডায়রিয়ায় অসুস্থ। ঝড়ের দুদিন পরই তিনি অসুস্থ হন। নতুন ঘর উঠাতে হবে বলে বাশ কেটে কয়েকটি বাশ পুতেও রেখেছেন বিধ্বস্ত ভিটেতে। স্বামীর প্রতি নতুন স্বপ্ন বুননের বিশ্বাস কে চাপা দিয়ে ফরিদা এখন আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রেখে বলছেন, আল্লাহ তুমি আমার স্বামীকে বাচিয়ে দাও। পুত্র শোক এখন হয়ত মনেই নেই ফরিদার।

ভাঙ্গন বঙ্গোপসাগরের খুব নিকটবর্তী একটি গ্রাম। বিধ্বস্ত বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলা থেকে ১২ কিলোমিটার দক্ষিণে। সিডর নামের ওই পাষন্ডটি সর্ব প্রথম আঘাত হেনেছিল এ গ্রামে। এখন পর্যন্ত এ গ্রামে মৃতের সংখ্য দেড়শ ছাড়িয়ে গেছে। ফরিদা একটি বাশের মাথায় লাল কাপড় বেধে রেখেছে।

তার ধারণা লাল কাপড় দেখলে হেলিকাপ্টার ওখানে রিলিফ ফেলে যাবে। কিন্তু এ ধারণা এখন পর্যন্ত সত্যি হয়নি। দুচোখ গড়িয়ে পড়া পানি নিয়ে ফরিদা বললেন, যহন দেহি হেলিকাপ্টার মোর মাতার (মাথা) উপর দিয় যায় তহন খিদা আরো মোচড় দিয়া ওডে। মুই নাইলে বুঝি কিন্তু ওতো ছোড মানু ও তো খিদায় কান্দে। মুই আর কিছু চাই না মোর স্বামীডা আর পোয়াডা (ছেলে) বাইচ্চা থাউক।

হেলিকাপ্টার নিচে নামতে দ্যাখলেই দৌড় দি। হে সোমায় মোর কোন হুস থাহেনা, চোহের সামনে ভাইসা ওডে না খাওয়া পোলাডার মুখ। দুই দিন রিলিফ পাইছিলাম। এহন আর পাই না। এই জাগাডা নাকি অনেক দুর হেইরলগ্গা কেউ আয়না।

আবার হেলিকপ্টার আসে, ফরিদা অনেক আশা নিয়ে তাকায়। উড়ে যায়, ওপর থেকে আরো ওপরে ওঠে। হতাশ দৃষ্টি নিয়ে ফরিদা তাকায় বাশের মাথায় টাঙ্গানো লাল নিশানের দিকে, তাকায় স্বামীর দিকে, তার পর তাকায় কান্নারত দেড় বছরের তুহিনের দিকে। রিপোর্টটি ২৯.১১ তারিখে দৈনিক যায়যায়দিন এ প্রকাশিত হয়েছে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.