আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কিছু ২ পয়সার মানুষ হাল ধরেছে..... শক্ত করে!

যদি কখনও সুযোগ পাই, সাত বাজারের চুড়ি এনে দেব, যত্ন করো!

গাড়ি ছাড়ার কথা রাত ১১:৩০ এ, কিন্তু কেন ১১:৫১ তে ছাড়ল এ নিয়ে শুরু হল শোরগোল অন্য যাত্রীদের মাঝে। একজন আবার পাংচুয়ালিটি নিয়ে লেকচার দেয়া শুরু করল। আরেকজন বলছে প‌্যাসেন্জার বাসে মাল যাবে কেন?...ইত্যাদি! অবশ্য আমাদের বয়সি কিছু ছেলে আমাদের হয়েই কথা বলল! ঘটনা হচ্ছে আমাদের সাথে ৯টি বিশাল বস্তা ত্রাণ সামগ্রি যাবে যার অধিকাংশই গরম কাপড়। ইউনিকের বিআরটিসি কাউন্টারে যখন বললাম তখন তারা সানন্দেই বাসে এ সমস্ত সামগ্রি নিতে রাজি হল, যদিও নিয়ম নেই, তবুও ত্রাণ বলে কথা। কিন্তু ঘাপলা বাঁধল অলংকার এসে।

গাইড যানাল যে তাদের সাথে দড়ি নেই বস্তা বাঁধার জন্য, আর বস্তা না বাঁধলে ছাদ থেকে উড়ে যাবে! এটা নিয়ে আমরা শুরু করলাম ক্যাচাল। বেচারা মহা ফাপড়ে, শেষ পর্যন্ত একেখান এসে সেখানের ম্যানেজার সব ঠিক করে দিলেন। উপর থেকে বস্তাগুলো নামিয়ে একেবারে পিছের চার সিটে রাখার ব্যবস্থা করলেন। এইযে উপর থেকে বস্তা নামিয়ে সিটে রাখতে কিছু সময় ব্যয় হল, এটা নিয়ে পাবলিকের 'বিশাল' সময় নস্ট, দেশের অর্থনীতির ১২ টা..... ইত্যাদি! সিডরের কথা মনে করলেই ৯১ এর ২৯শে এপ্রিলের কথা মনে পরে যায়। খুব বেশী আক্রান্ত না হলেও ধ্বংশলীলা প্রত্যক্ষ করেছিলাম অনেক কাছ থেকে।

পৌনে ২লাখ মানুষ মারা গিয়েছিল সেবার। প্রায় ১মাস বিদ্যুৎ বন্ধ ছিল চট্টগ্রামে। ঝড়ের পরে ডায়রিয়ায় মারা গেছে আরও অসংখ্য মানুষ! বাবার এক চাচাত বোন মারা গিয়েছিল ঝরের কয়েকদিন পরে, ডায়রিয়ায়, মাত্র ১ দিনের ডায়রিয়ায়! এখন এসবের সাথে যুক্ত হয়েছে শীত। এবার উদাম মানুষগুলা মরবে নিউমোনিয়ায়! হায়...! ক্ষুধার্ত, কপর্দকহীন কিছু মানুষ খোলা আকাশের নিচে ঠক ঠক করে কাঁপতে থাকবে শীতে, এতিম শিশুদের ছোট্ট বুকে নিঃশ্বাসের সাথে ঘরঘর শব্দ হবে! নিঃশ্বাস যাবে আটকে! একসময় মারা যাবে। ভিষণ কষ্ট হবে তাদের.... ভিষণ! আর আমরা একটি করে এসএমএস পাঠিয়ে দায়িত্ব শেষ করব আর নতুন ফ্যাশনের গরম কাপড় পরে উষ্ঞতা কিংবা স্মার্টনেস অনুভব করব! কারণ আমরা অতি সচেতন শিক্ষিত মিডল ক্লাসড সিটিজেন! ২ পয়সার চেয়েও ক্ষুদ্র মানুষ আমি! সামর্থ অতি সীমিত, সাহস আরও কম! তেমন কিছুই করি নাই! আমার এক বন্ধু নাম কামরুল খুব ছোট আকারে কিছু ত্রাণ পাঠাতে চেয়েছিল।

কারণ তারও অবস্থা আমার চেয়ে খুব বেশী ভাল নয়। টার্গেট ছিল হাজার বিশেক টাকার মত খাদ্য এবং কয়েক বস্তা জামা কাপড় নিয়ে জোগাড় করে পটুখালির কোন এক ছোট গ্রামে সামান্য সহযোগিতা করা। কারণ আমাদের এলাকায় ঐ এলাকার একটা ছেলে আছে, সে গাইড হিসেবে যেতে পারবে। কিন্তু এটাকে কি বলব বুঝতেছি না। আল্লাহর অশেষ রহমত! ১২ বস্তার চেয়েও বেশী কাপড় সংগ্রহ হয়েছে, আর টাকার পরিমাণ ছাড়িয়ে গেছে ৫০ হাজারের বেশী! ১২০০ কেজি চাল, সে সাথে ওরাল স্যালাইন, ফিটকারি, মোম, ম্যাচ এবং আরও কিছু দরকারি ওষুধসহ আজ বিকাল ৫ টায় সদর-ঘাট থেকে ওরা ৮ জন রওনা হচ্ছে।

আমি বসে আছি এখানে, ছুটি সংক্রান্ত জটিলতা, বিস্বাদ ঠেকছে সব কিছু! জানি না কতটুকু সফল হবে ওরা! কারও রি অভিজ্ঞতা নেই। সে তুলনায় অনেক বিশাল আয়োজন, যদিও প্রয়োজনের তুলনায় অতি সামান্য, দীঘিতে এক ফোঁটা জল দেয়ার মত, তারপরও দুঃচিন্তা করি। আল্লাহ যেন তাদেরকে সফলভাবে সব কিছু বন্টন করে দেয়ার তওফিক দিতে পারে! দোয়া ও শুভ কামনা তাদের প্রতি....। যদি আরও ৩ দিন তাদেরকে বাচিয়ে রাখা যায়, অন্তত এই শীতটা পার করে দেয়া যায়, তাহলে এই সামান্য প্রচেষ্টা সার্থক মনে করব! দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে ভাই, হাতে জোর কম; তারপরও ধরতে হবে হাল...... শক্ত করে!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।