যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী করছি
অনেকে হয়তো এই প্রবাদ বাক্যটার সাথে পরিচিত। যারা প্রশ্ন শুনছেন তাদের জন্যে কিছু ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রয়োজন মনে করছি। নিকারী হলো তারা যারা মাছের পাইকারী ব্যবসা করে আর জাইল্লা হলো জেলে যারা প্রকৃতপক্ষে পুকুরে, নদীতে বা সাগরে মাছে ধরে।
এই সকল প্রবাদ বাক্যের শুরু যে কোথায় হয়েছিলো সেই সম্পর্কে তেমন ভাল ধারনা না থাকলেও এগুলোর অনিবার্য সত্যতা দেখে অবাক হতে হয় বটে।
আসলে বিষয়ে আসার আগে একটু ভুমিকা না দিলে পাঠকদের মনোযোগ ঠিকভাবে বসে না।
তাই একটু ঢুগঢুগী বাজিয়ে বা বাঁদর নাচ দেখিয়ে লোক জড়ো করার মতো একটা প্রয়াস দরকার।
বাংলাদেশে বিগত ১/১১ এ একটা সরকার বসেছে। সেই সরকারের সাথে ৯/১১ এর তুলনা করে অনেকে বেশ আমোদ পান। কারন পর্বত প্রমান অব্যবস্থাপনা আর দূর্নীতি নিমজ্জিত একটা জোট যখন দেশকে একটা সাজানো নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে আরেকটা অন্ধকারের দিকে টানছিলো - তখন এই সরকার এসে জনমনে আশার আলো জ্বালাতে সমর্থ হয়েছে - এটা অনস্বীকার্য। শুরুতে ৩৬ বছরের জাল ছিড়ে বিচার বিভাগ পৃথকীকরন বিষয়ে সরকারের দৃঢ় অবস্থান সরকারের ইমেজকে আকাশ পর্যন্ত উঠিয়ে দিয়েছিলো।
তাই ৯/১১ এর পর যখন বলা হলো - ওয়ার্ল্ড হ্যাজ চেইঞ্জড ফর এভাব - আমরাও বিশ্বাস করেছি কিন্তু অপেক্ষা করেছি সেই পরিবর্তনের গতি প্রকৃতি দেখার জন্যে। অবশেষে দেখলাম - যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধংদেহী আচরন - বোমার পড়লো আফগানিস্থানে আর ইরাকে চললো একটা অনৈতিক যুদ্ধ। সেই কথার রেশ ধরে আমাদের পত্রিকার লেখকগন ১/১১ কে একটা সম্ভাবনা হিসাবে দেখাতে চাইলো। কিন্তু দেখলাম পাটকল গুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে - কিন্তু পাটকলের ব্যবস্থাপনায় যারা ছিলেন তারা প্রমোশান পেয়ে বিরাট বিরাট পদে চলে গেলেও শ্রমিকদের রাস্তায় নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। দেখলাম - হৈ চৈ করে সাবেক প্রধান মন্ত্রীর ছেলেকে ধরে এনে রাখলেও তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করার বিষয়ে কেমন যেন ইতস্থত ভাব।
সবচেয়ে বাজে ভাবে এলো জামাত প্রসঙ্গ। একজন মুক্তিযুদ্ধা মেজর জেনারেল (অবঃ) জানালেন - জামাতে তেমন দূর্নীতির অভিযোগ নেই হয়তো! কিন্তু পত্রিকায় দেখলাম জামাতের এমপিদের মধ্যে প্রায় ৬০% দূর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত।
যখন এই সরকার বিরাট ইমেজ নিয়ে শুরু করলো - তখন স্বাভাবিক ভাবেই ৩৭ বছরের পুরোনো এবং জনদাবী হিসাবে এলো যুদ্ধারাধীর বিচার প্রসংগে।
মেজর জেনারেল (অবঃ) মতিন জানালেন - বিষয়টা মিমাংসিত। সুতরাং সেটা নিয়ে এই সরকারের কোন মাথা ব্যথা নেই।
আমরা এই ধরনের কথা শুনে অভ্যস্থ। একটু অবাক হয়ে দেখলাম ক্ষমতার মধুর কুহক কিভাবে একজন মুক্তিযুদ্ধাকে নতজানু করে দেয়।
তবে মেঃ জেঃ অবঃ সাহেব কিন্তু সেখানেই থেমে না থেকে নিজে একজন বড় জেলে (জাইল্লা) হবার অভিপ্রায় ব্যক্ত করলেন। জানালেন - বেশ কনফিডেন্ট হয়ে - উনি বড় বড় মাছ ধরবেন এবং উনার লক্ষ্য রুই কাতলা। ছোট মাছ ধরার মতো সময় নস্ট করবেন না উনি।
আমরা মনকে প্রবোদ দিলাম - মন্দের ভাল, এটাও গুরুত্বপূর্ন। উনি যুদ্ধাপরাধীর বিচার বাদ দিয়ে যদি আপাতত রুই-কাতলা ধরে দেশকে দূর্নীতি মুক্ত করেন - খারাপ কি? কিন্তু এর আগেও দুইবার সামরিক শাসকদের এই খেইল দেখেছি আর দূর্নীতির প্রকৃত স্বরূপ জানার সুবাদে কখনও উনার কথায় তেমন উল্লসিত হতে পারিনি।
আমরা তখনও জানতাম না - মাছ বাজারে উনি একজন জাইল্লা আর উনার নিয়ন্ত্রনে আছে নিকারী সম্প্রদায়। সম্ভবত উনার জানা ছিলনা প্রবাদ বাক্যটি - "নিকারীর কানে সোনা, জাইল্লার পড়নে ত্যানা"। মাছের বাজার আসলে নিয়ন্ত্রন করে "নিকারী"রা।
দালাল আর মধ্যসত্ত্ব ভোগীরা। তাই একমসয় দেখি উনি বড় রুই কাতলারও বিভাজন করলেন। কোনটা ধরা যাবে আর কোনটা ধরা যাবে না সেটাও নির্ধারিত হলো।
তারপর দেখলাম - জালে ধরা বড় বড় দুইটা কাতলা - যারা দীঘর্দিন যাবত বাংলাদেশের ঋন খেলাপী হিসাবে ব্যবসায়ী মহল এবং রাজনীতিকে কুলশিত করেছে - তারা নিকারীদের সাথে একটা গোপন ব্যবস্থায় হাস্যমুখে গলায় ফুলের মালা দিয়ে বেড়িয়ে এলো। অন্যদিকে ৫ লাখ টাকার হিসাবের গড়মিলের জন্যে একটা চুনপুটি ৫ বছরের জেল ভোগ করার জন্যে তার জালে পেচিয়ে গেল।
তখন আমাদের স্বঘোষিত জাতীয় "জাইল্লা" সাহেবের মনের অবস্থা কি হয়েছিলো - সেটা জানার সৌভাগ্য এই গরীবের হয়নি।
এই মাথামোটা জাতীয় জাইল্লা জনাব মতিনকে যদি কেহ এই প্রবাদটা বলে দিতেন তাহলে ভাল হতো। কমপক্ষে তার ক্ষমতা চিন্তা বাদ দিয়ে একজন মুক্তিযুদ্ধা হিসাবে সাধারনের কাতারে এসে কথা বলতেন। উনি হয়তো জানতেন - "জাইল্লা" যত করিতকর্মাই হোক, যত বড় বড় মাছই ধরুন, উনার উপরে আছে "নিকারী" মশাই। "ত্যানা" পড়ে রাস্তায় বেড়িয়ে পড়ার আগেই উনি হয়তো উনার আসল সত্তাটাকে উপলদ্ধি করতে আর বলতেন - যুদ্ধাপরাদীর বিচার চাই, এবং এখনই!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।