চলে যেতে যেতে বলে যাওয়া কিছু কথা
ছগির আলীর পেশাদার চোর হলেও থানায় আগমন এই প্রথম তাও স্বেচ্ছায়। ধরা পড়লে ছোটখাট শাস্তিতে পার পেয়েছে কোনটাই থানা পর্যন্ত গড়ায়নি।
"স্বর্নের অলংকারগুলান আমিই চুরি করছিলাম। "
থানার ওসি সাহেব অবাক বিস্ময়ে আগন্তুকের দিকে তাকিয়ে রইলেন।
কাপড় চোপড় আর মলিন চেহারার লোকটিকে চোর বলে গন্য করা গেলেও থানায় এসে এভাবে ছিচকে চোরের আত্মসমর্পন অবাক হওয়ার মতই বৈকি।
অভিজাত পাড়ার একটি পরিবারের একজন বুড়ো কাজের লোককে গতকালই ধরে থানায় নিয়ে নিয়ে আসা হয়েছিল ঐ পরিবারেরই কিছু স্বর্নের জিনিষ চুরির দায়ে। ১০ বছরের পুরানো এই কাজের লোকটিকে দেখে ওসি সাহেবের মায়া হয়েছিল সহজ সরল চেহারা আর বিনয়ী আচরনের জন্য। ঐ পরিবারে কর্তা ব্যক্তিও বুড়ো লোকটিকে এক সপ্তাহের সময় দিয়ে দয়া প্রদর্শন করেছিলেন। শেষমেষ তুলে দিয়েছেন পুলিশের হাতে।
আগন্তুকের বত্তব্য বুড়ো কাজের লোকটি নয় ঐ পরিবারের স্বর্নের জিনিষগুলো এক রাতের অন্ধকারে সুযোগ বুঝে সেই চুরি করেছিল।
কিছুক্ষন তার বত্তব্য শুনে ওসি ভদ্রলোক নিশ্চিত হলেন লোকটি পেশাদার ছিচকে চোর। যদিও জিনিষগুলো ফিরিয়ে দেওয়ার কারন বুঝতে পারলেন না।
"চুরি যখন করলেই ফিরিয়ে দিতে এলে কেন?" ওসি সাহেব কড়া সুরে জিজ্ঞেস করলেন।
ধৈর্য ধরে সময় নিয়ে উত্তর শুনলেন ওসি সাহেব। সব শুনে আরো অবাক হলেন ওসি সাহেব।
স্বর্নগুলোন চুরি করে পলায়নরত লোকটি আশ্রয় চেয়ে উঠেছিল বুড়ো কাজের লোকটির বস্তির ঘরে, কয়দিন আত্মগোপন করবে বলে। লোকটি কিছুটা অসুস্থ ছিল বলে দয়া করে রাতের জন্য থাকতে দিতে রাজী হয়েছিলেন, রাজী করিয়েছিলেন নিজের বুড়ো স্ত্রীকেও।
সেই রাতেরেই এক গভীর প্রহরে কারো ফুপিয়ে কান্নার শব্দ শুনে জেগে উঠে চোর লোকটি। নিঃশব্দে জেগে উঠে দেখে বুড়ি মহিলা ফুপিয়ে কান্না করছে আর বুড়ো কাজের লোকটি মাথা নিচু করে বসে আছে। পরের দিন সকালে বৃত্যান্ত জেনে নেয় চোর লোকটি।
কাকতালীয়ভাবে বুড়ো লোকটির মনিবের ঘর থেকে খোয়া যাওয়া স্বর্নের জিনিষগুলো সেই চুরি করেছিল । মায়া পড়ে গিয়েছিল বুড়োবুড়ির প্রতি তার। নিজের চুরির দায় নির্দোষ বুড়ো লোকটি ঘাড়ে বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে জেনে অপরাধবোধের জন্ম নেয় চোর লোকটির মনে। প্রায়শ্চিত করার এই মোক্ষম সুযোগটি কাজে লাগানোর চিন্তা আসে ওর মাথায়। জীবনে একটিমাত্র হলেও ভাল কাজ করার জন্য মন আকুল হয়ে উঠে চোর লোকটির।
পরেরদিন সন্ধ্যায় মনস্থির করে যখন আশ্রয়দাতার ঘরে ফিরে তখন দেরি হয়ে গেছে, পুলিশ থানায় ধরে নিয়ে গেছে বুড়ো লোকটিকে। তারপর অনেকটা সাহস করেই থানায় আসা।
ছগির আলীকে হাজতে পাঠিয়ে দিয়ে জিনিষগুলো মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করলেন ওসি সাহেব। বুড়ো কাজের লোক সফি মিয়াকে ছেড়ে দেয়া হল আবার মনিব ভদ্রলোক আস্বাশ দিলেন কাজে পুনরবাসিত করার।
পরেরদিন সফি মিয়া থানায় উপস্থিত হলেন, হাতে একটি টিফিন যত্ন করে ধরা।
ওসি সাহেব সমাদর করে সামনের চেয়ারে বসতে দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন আসার হেতু।
"ছেলেটার চাচী খাবার পাঠিয়েছে, অনুমতি দেন ত। " এর মধ্যেই চোরের সাথে বুড়ো কাজের লোকটি চাচা ভাতিজার সম্পর্ক পাতিয়েছে জেনে মজা পেলেন ওসি সাহেব।
সহানুভুতির সাথে বললেন, "আপনি চাইলে দেখাও করতে পারেন। "
"সে আপনার অনেক মেহেরবানি, আসলে আমি একটু দেখাও করতে চেয়েছিলাম।
"
ছগির আলীর খোচা খোচা দাড়িমোচ গজিয়েছে মুখে, কিন্তু চেহারাটা বিষন্ন নয়। প্রশান্তির একটা আভা ছড়িয়ে আছে চোখে মুখে। সফি মিয়াকে দেখে মুখ আরো উজ্জল হয়ে উঠল ছগির আলীর।
"চাচী ভালা আছে নি চাচা মিয়া। " ছগির আলী চাচার প্রতি তার অনুরাগটি প্রকাশ করল চাচীর খবর নিয়ে।
"তোমার চাচী তোমার জন্য খাবার পাঠাইছে। টিফিনটা ছগির আলীর হাতে তুনে দেন সফি মিয়া। "
টিফিনটা খুলে নিয়ে খেতে বসে যায় ছগির আলী, কোন দবিধা করেনা। সস্নেহে তাকিয়ে দেখেন সফি মিয়া। খাওয়া শেষ হলে সুখের ঢেকুড় তুলে ছগির আলী।
একসময় একপাশে নির্জনে ডেকে নিয়ে ছগির আলীর চোখের দিকে পলকহীন চোখে তাকিয়ে সফি মিয়া শুধান, "আমাদের জন্য তুমি এত বড় ত্যাগ স্বীকার করলা?"
"চাচা মিয়া আমি স্বভাবে চোর, আর আপনে স্বর্নগুলান চুরি করছেন মাইয়ার সংসার বাচাইতে। "
"জীবনে আপনি একবারই চুরি করছেন তাও বিপদে পইরা এরজন্য আপনারে সারাজীবন খেসারত দিতে অইব কে? আর আমি সারাজীবন চুরি কইরাও পার পাইয়া যামু?
সারা জীবন চুরি করছি লোভে, এই প্রথম চুরি করলাম পুন্যের জন্য। "
"জামাইডা আমার সাথে এমুন আচরন করব বুঝতে পারিনাই, হঠাত কইরাই দশহাজার টাকার লাইগ্যা চাপ দিল আমি দিশা হারাইয়া ফালাইছিলাম, একটা মাত্র মাইয়াই আমার। "
হঠাত করেই সফি মিয়া ছগির আলীর হাত জড়িয়ে ধরেন, আবেগমাখা কন্ঠে বলেন, "তুমি কথা দাও আর চুরি করবা না। "
ছগির আলী সফি মিয়ার হাতদুটো আরো জোড়ে জড়িয়ে ধরে দৃঢ় কন্ঠে বলে, "কথা দিলাম।
"
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।