নিজেকে নিয়ে কিছু একটা লেখার চেষ্টা, এখোনো করে যাচ্ছি . . .
ঈদ ও পূজা উতসবের ছুটি শেষে আজই প্রথম অফিসে সবাইকে একসাথে পাওয়া গেল, এখনও উতসবের আমেজটা কিছুটা কমেনি, যেহেতু লম্বা ছুটি শেষে উতসবের আমেজে সবার সাথে দেখা, কোলাকুলি, শুভেচ্ছা বিনিময়, অভিনন্দন কোনটাই বাদ ছিলনা, ঈদের কোলাকুলির হিড়িক দেখে বস তো বলেই বসলেন "**ঈদের কোলাকুলি না এক্সপায়ার্ড হয়ে গিয়েছে, এখন আবার কিসের কোলাকুলি**" আমিও কম কিসের, জবাবে জানিয়ে দিলাম "*বস, কোরবানীরটা এখনই সেরে নিচ্ছি*"
আমাদের অফিসটা অন্য যেকোন অফিস থেকে বেশ অন্যরকম, সমস্ত সাম্প্রদায়িকতার উর্ধ্বে থেকে যে যার উতসব পালন করে চলেছে এবং তা শুধু নির্দিষ্ট ধর্মবলাম্বীদের মধ্যে আনন্দটুকু সীমাবদ্ধ থাকেনা, সবার সাথে শেয়ার করার সুযোগ থাকে, এবার যেহেুত ঈদ ও পূজা ছুটি শেষে একসাথে মিলিত হওয়া গেল তাই আনন্দটাও বেশী।
এ্যডমিন, একাউন্টস, কমার্শিয়াল, সেলস মার্কেটিং এর সব কলিগদেরকে নিয়ে আজ আয়োজন করা হয়েছিল "ঈদ ও পূজা পূর্ণমিলনী", সবাইকে আগেই জানিয়ে দেয়অ হয়েছিল আজকের এই আয়োজনের কথা, তাই অফিসে যেমন সাজ সাজ রব ছিল, তেমনি সবার পোষাকও বলে দিচ্ছিল সেরকমই কিছু।
সারাটা দিন দারুন মজা করেছি, বিশাল খাওয়া দাওয়ার আয়োজন ছিল, আর ছোট ছোট প্রতিযোগীতামূলক খেলা আবার তাতে পুরষ্কার, দেখা গেল কেউ গান গাইছে, গানের গলা না তারপরেও পরিচিত মন্ডলে যখন সুযোগ পেয়েছে শুরু করে দিল বেসুরা গলায় গান, গানের সম্মান বাচাতে আমরাও সে সুরে সুর মেলালাম, আমাদের ডিপার্টমেন্টের ম্যাডাম বস, অসাধারাণ এক্সপ্রেসন দিয়ে কবিতা পাঠ করলেন, সবাই তো মুগ্ধ, এত রাগী মানুষ কিন্তু তার ভিতরে এত সাহিত্য, ভাবতেই অবাক লাগে এত কাছে থেকেও ম্যাডাম যে এত সুন্দর করে কবিতা পাঠ করতে পারেন জানাই ছিলনা, আমার কলিগ তিনি বেশ ধীর স্থির প্রকৃতির মানুষ সে কিনা ছোটবেলার সব দুষ্টুমীগুলো স্মৃতিচারণ করলেন, কল্পনাই আনা যায়না তিনি এত পাকা ছিলেন, মেয়েদের মধ্যে কেউ কেউ তখন "*ভিজে বেড়াল*" বলা শুরু করে দিয়েছে। বস, এক একজনকে সামনে ডাকছেন আর একটি করে মজার প্রশ্ন করছেন, উত্তর দিতেই হবে, নির্ভয়ে, এক জুনিয়র কলিগকে জিজ্ঞেস করা হল এই ঈদে তার আফসোস কি? নির্ভয়ে, সাহসী কন্ঠে উত্তর এল "***বস, সবার সাথেই কোলাকুলি করতে পেরেছি, কিন্তু এই অফিসের ম্যাডামদের সাথে কোলাকুলি সম্ভব হয়নাই***" সবাই - থ- কেউ মুখ খুলে কিছু বলেও না আবার এদিকে হাসতে হাসতে গড়া, বস পুরা থেমে গেলেন। অফিসের সুন্দরী সেলসের মেয়েকে বলতে বলা হল স্মরনীয় একটি ঘটনা, মেয়েটি হাটে হাড়ি ভেঙ্গে দিয়ে, আমার সাথে তার রিকশায় ভ্রমণ কাহিনী অবলিলায় বলে গেল, এবারও সবাই তাজ্জব, সবার চোখ আমার দিকে, বিভিন্ন কমেন্টে কমেন্টে আমার পুরা অবস্থা কাহিল করল।
বস তো বলেই বসলেন "**ওই মিয়াকে দেখে মনে হয় ভাল, কিছুই বোঝেনা, কিন্তু এসব কি, ডুবে ডুবে জল খাও, আর আমরা জানলেই সমস্যা**" বসকে মূল ঘটনা বলার আগেই সবাই ক্ষেপাতে শুরু করল। অনেক মজা শেষে এবার খাওয়ার পালা।
খাওয়া শেষে সবার উপস্থিতিতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বেশ কিছু কথা বললেন, সর্বশেষ ছিল প্রতিযোগিতা, একটু ব্যতিক্রম, একটি বাংলায় টেক্সট দেয়া আছে লিখতে হবে ঠিকই কোন বর্ণের উপর মাত্রা দেয়া চলবেনা, একিউরেসি ৯৫আপ হতে হবে তবেই বিজয়ী হওয়া যাবে এই শর্তে বস থেকে শুরু করে জুনিয়র পর্যন্ত এটেন্ড করল, পুরষ্কার হিসেবে ছিল স্টার সিনেপ্লেক্সে "ঘোষ্ট রাইডারে"র ৩টি টিকেট। যাই হোক অন্যসবখানে বিফল হলেও এখানে সফল,আমি ছাড়াও আরও ২জন পেল পুরষ্কার হিসেবে টিকেট।
এটা শুধু আমার অফিসের চিত্র, একদিন আমরা কাজ না করে মজা করেছি সবাইকে নিয়ে, দিনের বিচারে একদিন খুব বেশী দিন নয় কিন্তু একদিনের এ অনুপ্রেরণা আমাদেরকে পরবর্তী দিনগুলোতে আরো উতসাহীত করবে নিশ্চিত এবং সম্পর্ককে আরো সোহার্দপূর্ণ করবে।
এভাবে যদি আমাদের কর্ম পরিবেশকে আরো আনন্দময় করে তুলতে পারি তাহলে কর্মস্পৃহা যেমন বাড়বে তেমনি জীবনের স্মৃতির ভান্ডারে জমা হবে কিছু অসাধারণ ঘটনা। যার জন্য দরকার সামান্য একটু আগ্রহ এবং সদিচ্ছা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।