আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হলোকাস্ট ও এক পোলিশ বৃদ্ধা

সময়, কবিতা, ছোটগল্প, দেশ, দেশাচার

পোল্যান্ড থেকে এসেছেন ভদ্রমহিলা। আশির কাছাকাছি বয়েস। তারপরও চলাফেরায় অনেকটাই শক্ত মনে হলো। কনসেনট্রেশন ক্যম্পের সামনে বেশ ভীড়। শরতের স্নিগ্ধ সকালকে এতগুলো মানুষ হিটলার ও তার নাজী বাহিনীর বর্বরতাকে মনে করতে এসেছেন, ভেবে অবাক হলাম।

আমাদের গাইড ক্যাম্পে ঢোকার দরজায় সে সময়কে স্মরণ করে বেশ ছোটখাট একটা বক্তৃতা দিলেন। জানালায় আঙ্গুল তুলে বাইরের ব্যারাকগুলো দেখিয়ে আমাদের মনযোগ আকর্ষন করলেন। ঠিক তক্ষুনি বলে উঠলেন ভদ্রমহিলা, - ঠিক! ঠিক, ওখান থেকেই ভয়াবহ চেচামেচি শুনতে পেতাম আমরা! আমাদের সবার দৃষ্টি আর মনোযোগ গাইডকে ছেড়ে মহিলার উপরেই পড়ল। মনে হল, তাতে কিছুটি অপ্রস্তুতই হলেন তিনি। - আমি জানি, আমি জানি! জীবনের অনেকটা সময় এখানে কাটিয়েছি, আমি জানবো না তো কে জানবে? কী এক অমানুষিক সময়.... আমরা কি মানুষ ছিলাম? গাইড গলাখাকারি দিয়ে আবার নিজের দিকে মনযোগ কেড়ে নিলেন।

বাকী দেড়টি ঘন্টা ক্যাম্পের ভেতরে ও চত্তরে ঘুরে বেড়ানোর সময়ে সরাসরা কিছুই বললেন না ভদ্রমহিলা। শুধুমাত্র আপন মনেই বিড়বিড় করলেন। বেরিয়ে আসার পর ভদ্রমহিলাকে ঘিরে মোটামুটি একটি ভীড় জমে গেলো। অনেকেই নানা প্রশ্ন করলেন, তিনি সে সব প্রশ্নের উত্তরও দিলেন। একজন বললেন, - আপনি যে চেচামেচির কথা বললেন, তাই আমার মনে ধরেছে বেশী।

আহা! কতোটা অত্যাচার হলে মানুষ এতোটা চেচামেচি আর আর্ত চিতকার করতে পারে! এবার মনে হলো কিছুটা রেগে গেলেন ভদ্রমহিলা। একটা অবর্ননীয় অস্থিরতা ফুটে উঠল চেহারায়। - আপনারা কি কিছুই জানেন না? কি ইতিহাস পড়েছেন? কয়েদীরা চেচামেচি করেবেন কোন শক্তিতে? এতোটা অত্যাচার, এতোটা বর্বরতা! তাদের চেচামেচি আর আর্তনাদের ক্ষমতাও ছিলনা! বোবা হয়ে গিয়েছিল সবাই। আমি পাহাড়াদারদের চেচামেচির কথা বলছি। তারা ওখানে ঘুরে ঘুরে যেভাবে চিতকার করে আদেশ দিয়ে যেত, সেই চেচামেচির কথা পরিস্কার মনে আছে আমার!


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।