আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুখোশ-১

সুন্দর ও শান্তিময় পৃথিবী চাই

এমন একটা সময় ছিল যখন নামকরা অনেক কবি, সাহিত্যিক নিজের লম্বা বা জটিল নামটাকে লুকিয়ে রেখে সুন্দর এবং ছোট্ট ছদ্মনাম ধারণ করে লিখতে পছন্দ করতেন। এখনো অনেকে লেখেন। ঊদ্দেশ্য যদি মহৎ হয় কিংবা তিনি যদি আত্মপ্রচার বিমুখ হন তাতে তো দোষের কিছু নেই। বনফুল নামের প্রিয় লেখকটি যদি সাদামাটা রেস্তোঁরায় বিকেল বেলার সিঙারা, পুড়ি খাওয়ার আপনার নিত্যদিনকার বন্ধু বলাইচন্দ্র হন, তাহলে তো আর কৌতূহলের শেষ নেই! এর মজাই আলাদা। শুধুমাত্র কাছের লোকেরাই জানেন চারুবাকের আসল নাম কোনটি অথবা লুব্ধকই বা কে? সমস্যা তখনই দেখা দেয় যখন কেউ পুরুষ হয়েও মহিলার নাম ধারণ করে কিংবা হিন্দু হয়েও মুসলিম সেজে বেনামে নোংরা, বিশ্রী ও অযৌক্তিক ভাষায় সমাজে অনাচার, বিভেদ ও ঘৃণা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন ইন্টারনেট গ্রুপে এক বিলিয়নেরও বেশী মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসের বিরুদ্ধে বিরামহীনভাবে মসী চালিয়ে যান।

উগ্র, উন্মাদ বা ফ্যানাটিকদের কবলে পড়ে সারা পৃথিবী আজ অশান্ত। ধর্মীয় বা জাতিগত ফ্যানাটিক যেমন ভয়ংকর আবার এদের দমনে কট্টর বিরোধী হওয়াও কম ভয়াবহ নয়। নিজের বিশ্বাস যাই হোক না কেন (তাতে কারো যায় আসে ও না), কারও বিশ্বাসে আঘাত করাও যে জঘন্যতম অপরাধ তা তারা উদ্দেশ্যমুলক ভাবে না জানার ভান করেন বলে মনে হয়। এদেরকে ‘ব্যধিগ্রস্ত’ আখ্যায়িত করেই হয়তো মহান আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন পবিত্র কুর’আনে বলেছেন, ‘যখন তাদেরকে বলা হয় দুনিয়ার বুকে দাংগা, হাংগামা সৃষ্টি করোনা, তখন তারা বলে আমরা তো মীমাংসার পথ অবলম্বন করেছি। মনে রেখো, তারাই হাংগামা সৃষ্টিকারী, অথচ তারা উপলব্ধি করে না।

‘ (বাকারাঃ ১১-১২) এদের উদ্দেশ্যও হয়তো হবে ইসলামপন্থীরা তাদের নিয়েই ব্যস্ত থাকুক। আমরা তাই বিস্তারিতভাবে সেদিকে আলোচনায় যাব না, শুধু পাঠকদেরকে মুক্ত আকাশ সংস্কৃতির এই হীন অপতৎপরতা সম্পর্কে সচেতন করতে যেটুকু তুলে না ধরলেই নয়, সেটুকু নিয়েই আলোকপাত করব। সে যাহোক, দিন বদলেছে। নিজেকে লুকোনোর যত চেষ্টাই করা হোক না কেন, কম্পিউটার কিংবা ইন্টারনেটের এই যুগে আসল নামটা এক সময় নিজের ব্যক্তিগত সমস্ত গোপন খবরাদি নিয়ে বের হয়ে আসতে পারে। তখন একটি মিথ্যেকে প্রতিষ্ঠিত করতে শত শঠতা, মিথ্যে ও ভণিতার আশ্রয় নিতে হয়।

অবশ্য মাঝে মধ্যে নির্দোষেরাও যে ‘ভিকটিমাইজ্‌ড’ হন না তাও কিন্ত নয়। ঘরের মধ্যে বসেই ঐতিহাসিকভাবে চরম মুসলিম বিদ্বেষী ও বাংলাদেশের সাথে কুটনৈতিক সম্পর্ক না থাকা ইসরায়েলের কে বন্ধু তা জানাও আজ অসাধ্য নয়। সার্চ ইঞ্জিন গুগ্‌ল এ টাইপ করুন ‘আর ইউ ফ্রেন্ড অফ্‌ ইসরায়িল’, দেখবেন ঠিকই চলে আসছে ২৭১ নম্বরে সালাহউদ্দিন শোয়েব চৌধুরীর নাম১ । অথচ বেচারা কতবারই না অস্বীকার করেছেন! কৌতুহলী পাঠকদের জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটসমূহ দেয়ারও চেষ্টা করব যাতে করে তারা ব্রাউজ করে পরে আরো অনেক তথ্য জেনে নিতে পারেন। বিভিন্ন ই-গ্রুপে বছর চারেক আগে ‘রুদ্র মুহম্মদ’ নামে ইসলামকে তুলোধুনো করে নিয়মিত লিখত।

পরে তার কম্পিউটারে কৃত এক্রোবেট পিডিএফ ফাইলের প্রপার্টিজ এবং আইপি এড্রেস তালাশ করে দেখা গেল ‘রুদ্র মুহম্মদ’ নামের মুখোশধারী হলেন স্বঘোষিত নাস্তিক সিংগাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ছাত্র অভিজিত রায়। মুক্তমনা ও ভিন্নমত নামের চরম ফ্যাসিস্ট দুটি ওয়েবসাইট ও ইয়াহুগ্রুপের কর্ণধার। সাথে রেখেছেন গুটি কতেক মুখোশধারী ‘কুদ্দুস খান’, ‘মেহুল কামদার’, ও ‘বিপ্লব পাল’ কে। তসলিমা নাসরিনের কবিতা “..............পাখি হয়ে ফিরব একদিন” ছেপে ও তার গুণকীর্তনের মধ্য দিয়ে সম্প্রতি মুক্তমনার নিবেদন ‘মুক্তান্বেষা’ র প্রথম বর্ষ , প্রথম সংখ্যা বের হলো ঢাকার ৬/৭ সেগুন বাগিচা ও বি/৬ ডোমিনো এল্ডোরাডো থেকে। যোগাযোগের জন্য নাম দেয়া হয়েছে সাইফুর রহমান তপনের২ ।

এ দুটি ওয়েবসাইট ও ইয়াহু গ্রুপের কাজই হলো অশালীন ও নীতিবিবর্জিত পন্থা অবলম্বন করে ইসলাম ও বাংলাদেশের নেতিবাচক দিক তুলে ধরে লিখে দ্রুত ইন্টারনেটে পোস্ট করা। এক্ষেত্রে সবচেয়ে সহজ ও নিরাপদ পথ হিসেবে নিজেদের আসল নাম আড়াল করাকে তারা পছন্দ করেন। যেমন, এক ‘আলমগীর’ লিখেছেন ‘নিরাপত্তার গ্যারান্টি দিন, মুখোশ ছুঁড়ে ফেলি৩ । রসুলের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কুৎসিত চিত্র অংকনে ব্যস্ত সেতারা হাশেমের পরিচয় খুঁজতে গিয়ে দেখা গেল বস্ততই তিনি একজন পৌঢ় পুরুষ, আসল নাম মহিউদ্দীন। নিউইয়র্কে থাকেন, বামপন্থী ঘেঁষা সংসদের আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে থাকেন কখনো কখনো ৪ ।

এদের মধ্যে সম্ভবত সবচে’ এগিয়ে রয়েছেন কানাডার টরোন্টোতে বসবাসরত ‘ফতেমোল্লা’। আসল নাম হাসান মাহমুদ। বাংলারইসলাম ডট কম নামে একটি ওয়েবসাইট চালান তিনি। ইচ্ছেমত ইসলামের বিরুদ্ধে মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়ে লিখে চলেছেন অবিরত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বায়োকেমিস্ট্রিতে লেখাপড়া করলেও এখন তিনি কট্টর সেক্যুলারিস্ট ও মুসলিম নামধারীদের নিয়ে ইসলাম বিরোধী সংগঠন মুসলিম কানাডিয়ান কংগ্রেস বা এমসিসি’র শারীয়া অ্যান্ড ইসলামিক ল’ বিভাগের ডিরেক্টর।

সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা পাকিস্থানের তারেক ফাতাহ্‌। উল্লেখ্য, মুসলিম সার্কেল অফ কানাডা বা এমসিসি নামে আরেকটি সংগঠনের অস্তিত্ব রয়েছে যারা কিনা বাংলাদেশীদের সমস্যা ও সত্যিকার ইসলামের দাওয়াত দিয়ে চলেছে। যাহোক, মুসলিম নাম ব্যবহার করে পশুত্বেরও বিরোধী সমকামী আন্দোলনকেও ইসলামের সহমত মানবাধিকার আখ্যা দিয়ে তারেক ফাতাহ্ ও ফতেমোল্লার দল কিভাবে মুসলমানদের সর্বনাশ করে চলেছে তা কৌতুহলী পাঠকেরা তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট মুসলিমকানাডিয়ানকংগ্রেস ডট অর্গ ব্রাউজ করলেই বুঝতে পারবেন। ২০০৫ সালে কানাডার অন্টারিও প্রদেশে পারিবারিক সমস্যা সমাধানের জন্য আর্বিট্রেশন এ্যাক্টকে বিভিন্ন ধর্মীয় কোর্টে স্থানান্তরের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আন্দোলন চালাতে গিয়ে শারীয়া আইন নিয়ে ঘৃণ্য ও কুৎসিত অপপ্রচারে মেতে ওঠে এই এমসিসি। ড: তাজ হাশমীকে সাথে করে ফতেমোল্লা তার নিজের ভাষায় '৭১-র মত গর্জে উঠে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।

নিয়তের পরিহাসে এবার তিনি সহযোদ্ধা হিসেবে বাংগালীর বদলে পেয়েছেন পাকিস্তানী তারেক ফাতাহসহ ইয়াজিদী, পারসিক, বাহাঈ, কালদিয়ান, ইসমাইলী, কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের মুসলিম নামধারী অন্য ধর্মের কিছু অনুসারী, যাদের সম্মন্ধে আমেরিকা ও কানাডার মুসলিম স্কলাররা নাম বিভ্রাটে পড়ে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সর্বদা সতর্ক করেন। পাঠকরা হয়তো জেনে থাকবেন, মধ্যপ্রাচ্যের সব দেশে ইসলাম ছাড়া অন্য সব ধর্মের অনুসারীরাও আরবি ভাষাভাষী হওয়ায় মুসলিম ধরণের নাম (যেমন, রইস, মাহমুদ, আব্বাস, নাফিস, আব্দুল্লাহ ইত্যাদি) ও ইসলামী পরিভাষা (যেমন আল্লাহ, সালাম, জাযাকাল্লাহ ইত্যাদি) ব্যবহারসহ সুন্দর করে কুর’আন তেলয়াত ও লম্বা সাদা মাথা ঢাকা কোর্তা পরিধান করেন। অথচ বিশ্বাসে ইসলামের সাথে আকাশ পাতাল ফারাক। যেমন, ইরাকে ঈসা (আঃ) এর জন্মেরো আগে থেকে আজ পর্যন্ত ক্ষুদ্র ইয়াজিদী সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব রয়েছে যারা ঘোষণা দিয়ে শয়তানের ঊপাসনা করে, পারসিকরা এখনো আগুন জালিয়ে চারদিকে জড়ো হয়ে আগুনের নিকট ভাল-মন্দ প্রার্থণা করে, কাদিয়ানীদের কথা নাইবা বললাম ইত্যাদি । উক্ত এমসিসি’র ক্ষুদ্র এ দল কানাডা সরকারের উদার ও মুক্তনীতির আনুকূল্যে বিভিন্ন টক শো’তে অংশ নিয়ে ‘পলিটিকেল ইসলাম’ থেকে সরে রসুল (সাঃ) এর জন্মেরো ছয়শো বছর পরে বিস্তৃত ‘সুফী ইসলাম’এর দিকে আসতে মুসলমানদেরকে নসিহত করেন যদিও নিজেরা কোনটিতেই আস্থা রাখেন বলে প্রতীয়মান হয় না।

এরা শারীয়া আইনকে ইসলাম বিরোধী আখ্যায়িত করে একে শুদ্ধ পথে নিয়ে আসার প্রত্যয় ব্যক্ত করার দূঃসাহস দেখান (দৈনিক নিউএজ, ১৮ই এপ্রিল, ২০০৫)। অনলাইন সাপ্তাহিকী ‘সাপ্তাহিক ২০০০’ এর জন্য অটোয়ায় থাকা ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটনের সাথে সাক্ষাৎকারে ফতেমোল্লা বলেছেন, ‘পয়গম্বর’ মানে হলো পয়গাম অর্থাৎ বার্তাবাহক, রাজনীতিক নয়। কোরআন শেষ নবীকে শুধু পয়গাম পৌছে দিতে বলেছে এবং বলেছে -‘ তুমি তাদের শাসক নও। ‘ সংগীত সম্মন্ধে বলেছেন, সমস্ত সৃষ্টিটাই তো একটা সংগীত, কোরআন নিজেই এক মহাসংগীত। হজরত দাউদ (আঃ) নিজেই সংগীতজ্ঞ ছিলেন৫।

ফতেমোল্লাকে সম্বোধণ করে ডঃ তাজ হাশমী লিখেছেন, আমি বিশ্বাস করি শুধুমাত্র কুর’আনের শিক্ষাদানের মাধ্যমে ইসলামকে পরিশুদ্ধ করার এখনোই উপযুক্ত সময়, ইমাম বুখারী-গাজ্জালী-আবু হানিফা (যাদের সাথে এ যুগের বান্না-কুতুব-মওদূদীও রয়েছেন) যা করতে বলেছেন তার মাধ্যমে নয় (দৈনিক নিউএজ, ১৮ই এপ্রিল, ২০০৫)। উল্লেখ্য, ডঃ তাজ হাশমী কানাডার ভ্যানকোভারে সিমন ফ্রেজার বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামের ইতিহাস পড়ান, ‘নো টু পলিটিকেল ইসলাম’ এর কনভেনর এবং ‘উইমেন এন্ড ইসলাম ইন বাংলাদেশ’ গ্রন্থের লেখক। নিউইয়র্ক ও নিউ অরলিয়েন্স থেকে ডঃ জাফর উল্লাহ নামে আরেকজন অধ্যাপক নেটে ইসলামের বিরুদ্ধে ক্লান্তিহীনভাবে যাচ্ছে তাই লিখে মুসলিমদেরকে উস্কে দেয়ার কাজে লিপ্ত রয়েছেন। তরুন ইসলামী চিন্তাবিদ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি শিক্ষার্থী মুঃ সাইদুল ইসলামের এক ক্ষুরধার লেখার জবাব এনএফবি (News From Bangladesh)-তে এভাবে দিয়েছেন, বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ইন্টারনেট ফ্রি থিংকাররা মুহম্মদের বাণী (মুসলিমরা যাকে কুরআন বলে)-কে সম্পুর্ণ প্রত্যাখান করেছেন৬ । এসব জ্ঞান পাপীরা মুসলিম ও বাংলাদেশ বিদ্বেষী পশ্চিম বাংলার এক শ্রেণীর লেখকদের সাথে করে জায়নবাদীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ওয়েব সাইটসমূহে ইসলামকে বিশ্বের সমস্ত অশান্তির মুল কারণ এবং বাংলাদেশের সমস্ত সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের পেছনে ইসলামের গন্ধ খুঁজে বের করার নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

২য় পর্ব এখানে


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।