এমনকি কোনো বিষয়ে অনুসন্ধান করলে তাও সংরক্ষণ করে রাখে প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে কীভাবে প্রতিষ্ঠানগুলো এত মানুষের তথ্য সংরক্ষণ করে রাখে, তা এখনও বাইরের মানুষের কাছে এক রহস্য। সম্প্রতি ইন্টারনেট জায়ান্ট ইয়াহু এ প্রসঙ্গে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে তারা কোম্পানিগুলোর গ্রাহকদের অনলাইন তথ্য সংরক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছে।
অনলাইন কোম্পানিগুলোর তথ্য সংগ্রহের বিষয়টি অনেক ইন্টারনেট গ্রাহকই ভালো চোখে দেখেন না।
তারা এ বিষয়টিকে ব্যক্তিগত তথ্যের উপর আক্রমণ হিসেবেই দেখেন এবং তারা চান না তাদের তথ্য কোম্পানিগুলো সংরক্ষণ করুক। তবে এ বিষয়ে অ্যামাজন ডটকমের সাবেক প্রধান গবেষক এবং বর্তমানে স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পদার্থবিজ্ঞানী আন্দ্রেয়াস ওয়েনড জানিয়েছেন, আসলে কোন বিষয়টি গোপনীয়, তা নিয়ে অনেক মানুষেরই স্পষ্ট ধারণা নেই।
এ ক্ষেত্রে একটি বিখ্যাত অনলাইন প্রতিষ্ঠানের কথা বলা যেতে পারে। যেমন অনলাইনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান গুগল সার্চ ইঞ্জিনের জন্য এতই বিখ্যাত যে, একে এখন সার্চ জায়ান্ট বলা হয়। সার্চ সেবা ছাড়াও গুগলের আরও অনেক সেবা রয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটি ২০০৯ সালে গুগল ড্যাশবোর্ড নামে একটি সেবা শুরু করেছিল, যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি ব্যবহারকারীর কোন কোন ডেটা সংরক্ষণ করছে, তা দেখা যেত। এ সেবাটি ব্যবহারের জন্য ব্যবহারকারীকে শুধু তার অ্যাকাউন্টে লগ-ইন করতে হত।
এ সেবাটি ব্যবহার করলে নতুন যে কেউ অবাক হবেন। এ পর্যন্ত আপনি গুগলে যা সার্চ করেছেন, যত মেইল পাঠিয়েছেন ও পেয়েছেন, এমনকি ইউটিউবেও যেসব ভিডিও দেখেছেন তার সব তথ্যই সংরক্ষিত আছে। ব্যবহারকারীরা চাইলে গুগলের সংরক্ষিত তথ্য মুছে দেওয়ার সুযোগও রয়েছে।
তবে সব প্রতিষ্ঠান এ সুবিধা দেয় না।
আপনার কাজের এ ডেটাগুলো প্রকৃতপক্ষে প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবহার করে বিজ্ঞাপনের জন্য। যেমন, এক নারী অভিযোগ করেছিলেন, তিনি সিডনির ফ্লাইট বুক করার পরপরই তার মেইলে সিডনির বেশ কিছু হোটেলের বিজ্ঞাপন চলে এসেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের পুলিশ একটি কম্পিউটার প্রতিষ্ঠানের কর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তিনি ইন্টারনেটে প্রেশার কুকার বোমা নিয়ে তথ্য অনুসন্ধান করেছিলেন।
কিছুদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন ম্যারাথনে ব্যবহৃত বোমাটি প্রেশার কুকারের ভেতর স্থাপন করা হয়েছিল। তবে বোস্টনের ঘটনার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।
তথ্য সংরক্ষণের কিছু ইতিবাচক দিকও রয়েছে। তথ্য সংরক্ষিত থাকায় নিরাপরাধ অনেক ব্যক্তি অনেকসময় বিভিন্ন আইনি ঝামেলা থেকে রক্ষা পায়। সংরক্ষিত ডেটার মাধ্যমে নির্দোষরা প্রমাণ করতে পারে, সাইবার অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ছিল না।
হারিয়ে যাওয়া তথ্য খুঁজে পেতেও তথ্য সংরক্ষণের প্রক্রিয়াটি বেশ কার্যকর।
আবার ভিন্নভাবে চিন্তা করলে, এ তথ্য সংরক্ষণের প্রক্রিয়াটির উপকারী কিছু দিকও রয়েছে। এসব তথ্য ই-কমার্স বৃদ্ধিতে সাহায্য করছে। একজন মানুষ কী চান, কী তার পছন্দ-- সে তথ্যগুলো বিভিন্ন অনলাইন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা সহজেই জানতে পারছেন, যা হয়তো স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় জানাটা বেশ কষ্টসাধ্য হত। এরপর এসব তথ্য ব্যবহার করে তারা তাদের পণ্য বা সেবা সম্পর্কে একত্রে অনেক মানুষকে সহজেই জানাতে পারছেন।
মানুষের চাহিদা সম্পর্কে জানা এবং সে অনুযায়ী বিশ্বকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াটি অনেকটাই সম্ভব হয়েছে তথ্য সংরক্ষণের এ বিষয়টির কারণে। তবে প্রতিটি বিষয় সম্পর্কেই মানুষের ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি কাজ করে।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অনলাইনে নারীদের মাতৃত্বজনিত ভিটামিন ও বিভিন্ন পণ্য কেনার উপর খেয়াল রাখে। কেনাকাটার এ ধরন বিশ্লেষণ করে তারা নির্দিষ্ট ক্রেতার শিশু আগমনের পূর্বাভাষ দেয় এবং সে অনুযায়ী বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপন সরবরাহ করে। এভাবেই কোনো শিশু জন্মের আগেই তার জন্য শুরু হয় প্রতিষ্ঠানগুলোর বাণিজ্যিক কার্যকলাপ।
একজন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী হিসেবে আপনার কাছে বিষয়টি খারাপ মনে হতে পারে। আবার এ বিষয়টি অনেকের কাছে চমৎকার একটি পদক্ষেপও মনে হতে পারে। এটি আমাদের আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে এমনটাও চিন্তা করতে পারেন অনেকে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।