আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সুদ থেকে মুক্তি পাক নিরন্ন মানুষেরা



দরিদ্র কৃষক শাহজাদা শেখ একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) থেকে ১০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ফসল আবাদ করেছিলেন। বন্যায় ফসল ভেসে গেছে, এখন ঘরে খাবার নেই। এই অবস্থায়ও ঋণের কিস্তি দিতে বাধ্য হচ্ছেন তিনি। এমনকি যখন বাড়িতে বুকসমান পানি ছিল, তখনো এনজিও কর্মীরা এসে ঋণের কিস্তি নিয়ে গেছেন। 'এক টেকা কম দিলেও নেয় না।

ঘরে ভাত নাই, পুলাপানে উপাস থাহে, তাও কিস্তি দিবার লাগে। ' বলছিলেন জামালপুরের মাদারগঞ্জ পৌরসভার গাবের গ্রামের শাহজাদা শেখ। একই গ্রামের সামজোহা আরেকটি এনজিও থেকে পাঁচ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। সপ্তাহে তাঁকে দেড় শ টাকা কিস্তি শোধ করতে হয়। বন্যার পর মাঝেমধ্যে দিনমজুরি করে যা আয় হয়, তা দিয়ে সন্তানের মুখে দুই বেলা খাবার তুলে দিতে না পারলেও কিস্তির টাকা জমাতে হয়।

সামজোহা বলেন, 'মইরা গেলেও কিস্তি দেওয়ার লাগব। খাওয়া বাদ দিয়া কিস্তি দেওয়া লাগব। ' ছোট ছোট কিস্তিতে প্রতি সপ্তাহে ঋণ পরিশোধ করা যায় বলে ক্ষুদ্রঋণ অনেকের কাছেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে তাদের অনেকেই মেরুদণ্ড একটু সোজা করে দাঁড়াতে পেরেছে। গাবের গ্রামের কুসুম বলছিলেন, 'আংগো দুই-চার, পঞ্চাশ শতাংশ সম্পত্তি নাই যে ব্যাংকে যামু।

সুমিতিতে (এনজিও) গেলে ইন-টিন (ঋণ) পাওয়া যায়। ' কিন্তু দরিদ্র অনেক বন্যার্তর কাছে এখন এই কিস্তিই আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। যাদের আয়-রোজগার আছে, তাদের আয়ের সিংহভাগই চলে যাচ্ছে ঋণের কিস্তিতে। অনেকে সুদে ধারদেনা করে কিস্তি দিচ্ছে। তাদের অনেকেই চাইছে ঋণের কিস্তি যেন আপাতত স্থগিত রাখা হয়।

গ্রামাঞ্চলে ঋণ দেয় এমন অনেক এনজিওই জানিয়েছে, তারা বন্যাদুর্গত এলাকায় কিস্তি আদায়ে চাপাচাপি না করতে নির্দেশ পাঠিয়েছে। কোনো কোনো এনজিও বলছে, তারা কিস্তির টাকা নেওয়া স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে বিভিন্ন এলাকা থেকে এখনো কিস্তির জন্য জোরাজুরি করার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। অনেক জায়গায় বলা হচ্ছে, কিস্তি না দিলে পরবর্তী সময়ে নতুন করে ঋণ পাওয়া যাবে না। এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ প্রথম আলোকে বলেছেন, 'এনজিওরা বলছে, তারা দারিদ্র্য বিমোচনে নেমেছে।

সে ক্ষেত্রে ঋণের কিস্তি স্থগিত তাদের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত ছিল। ' সৌজন্যে : প্রথম আলো, ৩ সেপ্টেম্বর ২০০৭

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।