আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রংহীন রংধনু

সূর্যস্নানে চল.... এইচএসসি শেষ করে চলে এলাম ঢাকায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য কোচিং শুরু করে দিলাম। আমার কোচিং সেন্টার ছিল ফার্মগেটে। কিন্তু থাকতাম রামপুরায়। একে তো দুরত্ব বেশী তারউপর জ্যাম হবার কারনে প্রতিনিয়ত আমাকে একটা দুর্বিষহ যাতায়াত করতে হত।

কিন্তু কিছুদিন পার হবার পর আর খারাপ লাগত না। এই যাতায়াতটাও অনেক এনজয় করতাম। আমি বাড্ডা লিংক রোড থেকে ৬ নং বাসে করে যেতাম এবং একই রুটে আসতাম। শনি, সোম আর বুধ। এই তিনটা দিন ছিল আমার কোচিং ডে।

মাসখানেক পার হয়ে গেল। একদিন কোচিং থেকে ফিরছি। লিংক রোডে নামলাম। লিংক রোডে নেমে রাস্তা পার হয়ে ‘সুপ্রভাত’ বাস ধরে আমাকে রামপুরা যেতে হবে। অনেক্ষন হয়ে গেল আমি রাস্তা পার হতে পারছিনা।

রাস্তায় গাড়িঘোড়া বেশী এবং সবগুলোই এত দ্রুত যাচ্ছে যে রাস্তা পার হতে পারছি না। শুধু আমি একাই নই আরো বেশ কিছু মানুষজন আমার সাথেই দাড়িয়ে আছেন রাস্তা পার হওয়ার জন্য। আমি দাড়িয়ে থেকে অধৈর্য হয়ে গেলাম। গাড়িগুলোর দিকে হাত দেখিয়ে পার হতে শুরু করে দিলাম। কিন্তু গাড়িগুলোর দ্রুত গতির জন্য অর্ধেক রাস্তা পার হতেই হুট করে আমাকে থেমে যেতে হল।

ঠিক তখনি অনুভব করলাম কোন কোমল স্পর্ষি হাত আমার হাত ধরল। এবং বাকি রাস্তাটা আমার হাত ধরেই পার হল। তাড়াহুড়ায় থাকায় কে আমার হাত ধরল তা দেখাই হল না। রাস্তা পার হয়েই তিনি আমার হাত ছেড়ে দিয়ে চলে গেলেন। শর্ট কামিজ আর জিন্স পরা গলায় ওড়না পেচানো হাতে একটি ব্যাগ মেয়েটির।

উল্টা ঘুরে যাওয়ায় চেহারা দেখতে পেলাম না, মনে হয় সে লজ্জা পেয়েছে। কিন্তু আকস্যিক ঘটনাটায় খুব মজা পেলাম আমি। মনে মনেই হাসতে লাগলাম। পরদিন কোচিং থেকে ফেরার সময় লিংক রোডে রাস্তা পার হয়ে সুপ্রভাত বাসের জন্য অপেক্ষা করছি। কেউ একজন বলল, “সেদিনের জন্য ধন্যবাদ”।

আশে পাশে তাকিয়ে দেখি কেউই আমার দিকে তাকিয়ে নাই। ভুল শুনেছি ভেবে ইগনোর করলাম। কিন্তু মনে হল কেউ আবার বলল, “শুনেছেন”? তখন পিছনে তাকিয়ে দেখি একটি মেয়ে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। জিজ্ঞাসা করলাম, “আমাকে বলছেন”? সে সামনে এসে পাশে দাড়িয়ে বলল, - জি আপনাকেই বলছি। - ও আচ্ছা।

তা কোন দিনের জন্য ধন্যবাদ? - কেন আপনি কি প্রতিদিনই রাস্তায় রাস্তায় মানুষকে হেল্প করে বেড়ান নাকি? - জি। ঠিকি বলেছেন আমি প্রতিদিনই মানুষকে হেল্প করে বেড়াই। এই যে একটু আগে একটা ফকিরকে ২ টাকা দিয়ে হেল্প করলাম। কথাটা শেষ হতে না হতেই আমার সামনে সুপ্রভাত বাসটি এসে দাড়াল আর আমিও লাফ দিয়ে উঠে গেলাম। তার কোন কথা শোনার অপেক্ষা করলাম না।

কোচিংটা বেশ ভাল জাচ্ছিল। আমি নিয়মিত পড়ালেখা করতাম। কোচিং এর টপ স্কোরারদের মাঝে আমি একজন। মাঝে মাঝে মনে হত ঢাবিতে পড়ার স্বপ্ন হয়তবা পুরন হতে চলেছে। কোচিং এ ভাল করলে পড়ালেখার জন্য আরো উৎসাহ পেতাম।

সেদিন কোচিং এর একটি পরীক্ষায় আমার ব্যাচে আমি টপ করেছি। বেজায় খুশি আমি। কোচিং থেকে ফেরার সময় বাসটা লিংক রোড না গিয়ে আমাকে গুলশান-১ এই নামিয়ে দিল। তাতেও আমার মন খারাপ হল না। গুলশান মোড় থেকে লিংক রোডের রাস্তাটা অল্প একটু।

হেটেই যাওয়া যায়। আর এ রাস্তাটাও আমার বেশ পছন্দ। রাস্তার মাঝ দিয়ে বড় বড় গাছ আর দুই পাশে সুবিশাল লেক। সব সময়ই ছায়া ছায়া হয়ে থাকে। একটা মায়াবি রূপ আছে রাস্তাটার।

গুলশান মোড় থেকে হাটতে শুরু করলাম। একটু পরই শুনতে পেলাম কেউ ডাকছে, “এই যে ভাবধারী ব্যক্তি, হ্যাল্লো, শুনছেন”? আমাকে কেউ ডাকছে কিনা ভেবে আমি দাড়িয়ে পেছন ফিরে তাকালাম। দেখলাম একটি মেয়ে আমার দিকেই এগিয়ে আসছে। অসম্ভব সুন্দরী, মায়াবী চেহারা আর কিছুটা শিশু সুলভ ভঙ্গি। নাহ আমি তো এমন কাওকে চিনি না, মনে হতেই আমি উল্টা ঘুরে হাটা শুরু করে দিলাম।

“কি হল? চলে যাচ্ছেন কেন? থামুন”! এবার থামতেই হল। হন্তদন্ত হয়ে হেটে আসল সে। - আপনাকে আমার দরকার আছে! - আপনাকে তো আমি চিনতে পারছি না। এবং আমি ভাবধারীও নই। - চিনতে পারছেন না? আপনার কি শর্ট টাইম মেমরি লস জাতীয় অসুখ আছে নাকি? - না আমার এ জাতীয় কোন অসুখ নাই।

আজকেও কোচিং এ আমি টপ করেছি। ইতিমধ্যে আমি আবার হাটা শুরু করে দিয়েছি। সে আমার পাশে পাশে হাটছে আর কথা বলছে। - তাই? কিসের কোচিং করছেন আপনি? - এডমিশন কোচিং। - কিসের এডমিশন কোচিং? - এটাও বুঝেন না? ক্লাস ওয়ানে ভর্তি হব।

তাই কোচিং করছি। - আচ্ছা আচ্ছা বুঝলাম। কোথায় পড়ার ইচ্ছা? বুয়েট মেডিকেল? - ঢাবি। - বুয়েট মেডিকেল দিবেন না কেন? পয়েন্ট নাই? এবার আমি চোখ বড় করে তাকালাম। আমার মেজাজ খারাপ হচ্ছে।

- আপনি কি আমাকে বুয়েট মেডিকেলে ভর্তি করানোর জন্য ডাকছিলেন? আলাদিনের চেরাগ আছে নাকি কাছে?? সে তখন তার ব্যাগের মধ্যে কিছু খোজাখুজি শুরু করল। একটু পর একটা ২ টাকার নোট বের করে দিল। - নেন। - কিসের জন্য? - সেদিন আমাকে রাস্তা পার করে দেবার জন্য। - ও আচ্ছা ।

তার মানে আপনি সেই মেয়ে? আর আপনি চাইছেন সেদিন আপনাকে রাস্তা পার করে দিয়ে যে মহানুভবতা দেখিয়েছি তা ২টাকা দিয়ে আপনার কাছে বেচে দিতে??? - জি। ঠিকি ধরেছেন। আপনার মহানুভবতা আমার দরকার নাই। বুঝলাম আগের দিন ফকিরকে হেল্প করার উদাহরন টানায় তার গায়ে লেগেছে। এজন্যেই আমাকে ডেকে ২টাকা দিচ্ছে।

আমি ধন্যবাদ দিয়ে টাকাটা নিয়ে নিলাম। লিংক রোডেও পৌছে গেছি। আমি বাস ধরে চলে এলাম। উনি কোথায় গেল আর খেয়াল করি নি। পরদিনও কোচিং থেকে ফেরার সময় গুলশান মোড়ে নামলাম।

হাটা শুরু করলাম। কিছুদুর যেতেই সেই মেয়েঠিকে আবার চোখে পড়ল। সেও আমাকে খেয়াল করল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, - ভাল আছেন? - আপনি কি কোন ডিটেক্টিভ? আমার পিছে ঘুরঘুর করছেন কেন? - আমি? আমি ঘুরঘুর করছি না আপনি করছেন? - আমি করব কেন? আমি প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে যাই। - জি জনাবা।

আমিও প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়েই যাই। - আচ্ছা বাদ দেন। আপনাকে যে ২ টাকা দিয়েছিলাম ওটা দিয়ে কি করেছেন? - ওহ! ওটা একটা ফকিরকে দিয়ে দিয়েছি এবং পুনরায় মহানুভবতা খরিদ করে নিয়েছি। - হিহিহি... আপনি তো ভালই মজা করতে পারেন। - ধন্যবাদ।

- তা আপনার নাম কি? - রক্তিম। আপনার? - প্রীতি এভাবে কথা হতে থাকলো। সে তার সম্পর্কে বলল। তার বাসা বাড্ডাতে। সেও আমার ইয়ারেই কিন্তু সে এত কষ্ট করে এডমিশন দিবে না।

বাবাকে মানিয়ে নিয়েছে যে সে ব্র্যাকে বিবিএ পড়বে আর বাবাও রাজি হয়েছে। এইচএসসি শেষ করে ঘরে বসে বসে ফ্রি সময় কাটাচ্ছে দেখে এক আন্টি তার মেয়েকে পড়ানোর অফার দিয়েছে। আর এই অফারকে সেও ভাল ভাবে কাজে লাগাচ্ছে। আন্টির বাসা গুলশানে তাই তাকে এই রাস্তা দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করতে হয়। এরপর থেকে আমিও প্রতিদিন গুলশান মোড়েই নামতাম আর বাকি রাস্তাটা হেটে যেতাম।

সেও একই সময় আসত। দুজন মিলে এই ছোট্ট রাস্তাটুকু হেটে যাওয়া ও নানা রকম উদ্ভট গল্পগুলো বেশ উপভোগ্য ছিল। কিন্তু আমরা তখনো আপনি আপনি করেই কথা বলতাম। একদিন আমার কোচিং থেকে ফিরতে একটু দেরী হল। দেখলাম সে দাড়িয়ে আছে।

আমি তাকে দেখেই বললাম, - আই এম সরি। আমার আসতে লেট হয়ে গেল। - এত সরি টরি বলার দরকার নাই। আমিও মাত্র আসলাম। - ও আচ্ছা।

কোথায় ছিলেন এতক্ষন? - বয়ফ্রেন্ডের সাথে। - ওহহ। তাহলে এত তাড়াতাড়ি চলে এলেন যে? - ব্রেক আপ করে আসলাম। - সো স্যাড। আই এম সরি।

- আবারো সরি সরি করছেন? আমি বেজায় খুশি আর আপনি সরি সরি করছেন? - তাই নাকি। এত যখন খুশি তাহলে আমাকে মিষ্টি খাওয়ান। - খাবেন? চলেন খাওয়াই। আমরা ঘুরে আবার গুলশান মোড়ে গেলাম। একটা মিষ্টির দোকানে ঢুকলাম।

দোকানটার নাম ‘রস’। বেশ কয়েকটা মিষ্টি খেলাম আমি। দোকান থেকে বের হয়ে আসতে আসতে সে আমাকে প্রশ্ন করলো, - আচ্ছা আমরা কি বন্ধু? - কেন? আমাকে আপনার বন্ধু মনে হয় না? - না সেটা না। আমরা তো বন্ধুর মতই কিন্তু আমরা তো আপনি আপনি করে কথা বলি। - হাহাহা... এটা আর এমন কি? - না আপনি আপনি করে বললে দুরত্ব বেশী মনে হয়।

- দুরত্ব বেশী থাকাই তো ভাল। এবার সে চুপ করে গেল। আর কোন কথা বলল না। একটু পর আমিই নিরবতা ভাঙলাম। - তোমাকে একটা প্রশ্ন করব? - কি আমার বয় ফ্রেন্ডের কথা জানতে চাও? - হুম।

- আমার কোন বয় ফ্রেন্ড নেই। আজকে আন্টি আমাকে বেতন দিসে। তাই তোমাকে মিষ্টি খাওয়ালাম। - ও বুঝলাম। কিন্তু তোমার বিএফ নাই এটা বেশ সন্দেহযুক্ত।

- কেন? - আজকালকার মেয়েদের বয়ফ্রেন্ড থাকবে না এটা কিঞ্চিত অসম্ভব ব্যাপার। - মোটেই না। আমার নাই কখনো ছিলও না। - এর কারন? - আমার পিছে সব সময়ই মেলা ছেলে ঘোরে বাট আমি টাইম দেই না কাওকে। আর এজন্যেই মনে হয় ঘুরে ঘুরে মরা ছেলেদের সংখ্যাও বেশী।

আমি এটা এনজয় করি। ফ্র্যাংকলি সেইং। - বাপরে! মারাত্মক কারন। - আমরা লিংকরোড মোড়ে চলে এসেছি। টাটা।

এভাবে প্রতিদিন আমরা গল্প করতে করতে আসতাম। গল্পের মাঝে হাসিতে ফেটে পড়তাম। আমাদের হাসি দেখে রাস্তার আশেপাশের লোকজন হা করে তাকিয়ে থাকত। সময় যেতেই থাকল আমরাও ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে গেলাম। আমাদের বন্ধুত্বের মাঝে সমস্যা হতেও খুব বেশী সময় লাগল না।

আমার এডমিশন পরীক্ষার আর মাত্র এক মাস বাকি। পড়ালেখার অনেক চাপ। কোচিং এ লাগাতার পরীক্ষা চলছে। আমারো পড়ালেখা বাড়ানোর দরকার। আরো মনোযগী হওয়া দরকার।

এদিকে ঢাকায় আসার পর আমি পুরাই একা হয়ে গেছি। আমার সাথে গল্প করার মত কেউ নাই। কোন বন্ধুও নেই যার সাথে বিকেল বেলা বাইরে যেয়ে হাওয়া খেয়ে আসব। একবারে নির্মম নিরামিষ জীবনযাপন করছিলাম। যখনি একাকিত্ব অনূভব করতাম তখনি প্রীতির কথা মনে হতে শুরু হল।

মনে হতে লাগল প্রীতির সাথে কথা বলতে পারলে একটু ভাল হত। একদিন পর পর কোচিং। মাঝখানের দিনটা বড়ই বোরিং মনে হত। সমস্যা আরো বেড়ে যেতে লাগল যখন খেয়াল করলাম কয়েকদিন ধরে প্রীতি খুব চুপচাপ। আগের মত উচ্ছলতা খুজে পাচ্ছি না।

কোন বিষয় নিয়ে চিন্তিত। আমি জিজ্ঞাসা করলাম। কিছুই হয়নি বলল। ভিতর ভিতর আমিও কেমন যেন বিষন্নতা অনুভব করছি। পরীক্ষার পড়াগুলো শেষ করতে পারছি না।

অস্থিরতা কাজ করছে। সারাদিন প্রীতির চেহারা সামনে ভাসছে। বুঝতে বাকি থাকল না আমি কোন খারাপ রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছি। এটা এখন ভাবাই যাবে না কারন সামনে আমার পরীক্ষা। এ ঝামেলা থেকে আমাকে মুক্ত হতেই হবে।

মনকে বুঝিয়ে দিলাম। শক্ত করে বুঝিয়ে দিলাম। কোচিং শেষ করে ব্যাচ মেটদের অনুরোধে ওদের সাথে ঢাবি ক্যাম্পাসে গেলাম ঘুরতে। অনেক্ষন ওদের সাথে সময় কাটালাম। ঘুরে আসতে আসতে আমার প্রায় ৩ ঘন্টা লেট।

খারাপ লাগছিল ভেবে যে আজ প্রীতির সাথে দেখা হল না। গুলশান মোড়ে নেমে কিছুদুর এগুতেই আমি থ হয়ে গেলাম। প্রীতি দাড়িয়ে আছে। খুবই অপ্রত্যাশিত। কারো জন্য এতক্ষন দাড়িয়ে থাকা যায় না।

ওর কাছে গিয়ে আমি আরো ভয় পেয়ে গেলাম। ওর ফর্সা চোখগুলো লাল হয়ে আছে। চোখগুলো ফুলে আছে যেন কতদিন ঘুমায়নি। আমি কিছু বলার সাহস পাচ্ছিলাম না। শুধু বললাম, ‘চল’।

ও আমার হাত ধরল এবং আমার সাথে হাটতে থাকল। আমি কিছু বললাম না। নিরবতাটা রাস্তাটাকে অনেক বড় করে দিচ্ছিল। লিংক রোড মোড়ে এসে পৌছলাম। প্রীতি আমার হাত ছেড়ে দিয়ে একটা কাগজ ধরিয়ে দিয়ে চলে গেল।

আমি ‘সুপ্রভাত’ বাসে উঠে গেলাম। বাসে উঠে কাগজটা বের করলাম। তাতে লেখা ছিল, “আমার আকাশের রংধুনুটির সবকটি রং হারিয়ে গেছে। তোমার রঙে রাঙিয়ে দেবে“? এবং সাথে একটি মোবাইল নম্বর ছিল। আমার হার্টবিট প্রচন্ড জোরে চলছে।

আমি বুঝলাম আমি এক মায়ার জালে আটকা পড়ে গেছি। আমাকে এ জাল থেকে বের হতেই হবে। যত কষ্টই হোক আমার স্বপ্ন, আমার পরিবারের স্বপ্ন পুরনে বাধা আসতে পারে এমন কোন কিছুকেই প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। আমার মনকে আরো শক্ত করতে হবে। স্বার্থপর হতে হবে।

আমাকে যে ঢাবিতে চান্স পেতেই হবে। আমি কাগজটা বাসের জানালা দিয়ে বাইরে ছুড়ে দিলাম। পরদিন থেকে আমার যাতায়াতের রুটটাও বদলে গেল। এরপর মৌচাক থেকে বাসে করে যেতাম আসতাম। ৬ মাস পর... ঢাবিতে চান্স পেয়ে গেছি।

একটা সেমিস্টারও শেষ হয়ে গেল। এক্সাম শেষ করে আমি আর আমার বন্ধু রিমন বিকালে বসুন্ধরা সিটিতে গেলাম। উদ্দেশ্য: উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘোরাঘুরি। বসুন্ধরা সিটির ৮ তলায় উঠেই আমি আৎকে উঠলাম। আমি কি ঠিক দেখছি? ওটা কি প্রীতি? সেও আমার দিকে তাকিয়ে আছে, একটু পর চোখ ঘুরিয়ে নিল।

আমি কাছে গেলাম। - প্রীতি? - জি। আমাকে বলছেন? - হ্যা আপনাকেই বলছি। - আমি তো আপনাকে চিনতে পারছি না। - কেন আপনার কি শর্ট টাইম মেমরি লস জাতীয় অসুখ আছে নাকি? - মোটেই না।

আজকে আমার ফার্স্ট সেম এর রেজাল্ট দিছে। আমি টপ করেছি। - তোমার সাথে একটু কথা বলা যাবে? প্রীতি ওর বান্ধবীদের কাছ থেকে সরে আসল। - বল কি বলতে চাও? - আমার আকাশের রংধুনুটির সবকটি রং হারিয়ে গেছে। তোমার রঙে রাঙিয়ে দেবে? - কোথায় ছিলা এতদিন? আমার কথা কি একবারও মনে হয়নি? আমার কি হয়েছিল তা কি জানতে ইচ্ছা করেছে কখনো? - আমাকে কি প্রায়শ্চিত্তের একটা সুযোগ দিবে? - উহু।

সম্ভব না। ও চলে যেতে লাগল। কয়েক কদম এগুতেই আমি ডাক দিলাম। ও ঘুরে দাড়ালো। “প্রীতি! I love you”! ও কাছে আসল।

বলল, “I hate you! I hate you! I hate you!” বলে চলে গেল। ওর রাগ ক্ষোভ হতাশা সব কিছু কন্ঠ দিয়ে বের হল, বুঝতে পারলাম। আমি দাড়িয়েই থাকলাম। বেশ কিছুদুর যেয়ে ও হঠাৎ থেমে গেল। আবারো ফেরত আসল।

“আগামীকাল বিকাল ৪ টা। গুলশান মোড়”। বলেই দ্রুত গতিতে হেটে চলে গেল। দ্রষ্টব্য: ১। গল্পটি কাল্পনিক এবং বানোয়াট।

২। গল্পটি এর আগে ফেসবুকে কয়েকটি পেজে প্রকাশিত হয়েছে। সেগুলোতে লেখকের নাম ‘রক্তিম অভ্র’ দেয়া আছে। নামটি আমার বেশ পছন্দ তাই এই নাম ব্যবহার করেছি। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।