আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দিবসপুজারী উম্মত বনাম ১২ই রবিউল আউয়াল:-

আমি ভালবাসি আমার আল্লাহকে, প্রিয় রাসুল এবং আমার দেশকে। খোলামেলা কথা পছন্দ করি। অল্পতে কষ্ট পেয়ে বসি, আবার অল্পতেই ভুলে যাই সব দুখঃ। তবে কারো উপকার-অবদান ভুলতে পারিনা জীবনভর। পছন্দ করি উদার, স্বচ্ছ ও খোলামনের মানুষকে, ঘৃণা করি গোঁড়া ও অহংকারীকে।

মুসলিম মাত্রই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের জন্মে আনন্দিত,তাঁর জন্মে কোন মুসলিমই নাখোশ নন। তবে সেই খুশি প্রকাশের জন্য খৃষ্টানদের বড়দিনের অনুকরণে বিশেষ দিবস ঠিক করে নিয়ে আনন্দ মিছিল কিংবা মিস্টি বিতরণ অথবা নির্ধারিত গদ ইত্যাদি পাঠের সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই। যে রাসুল আমাদের মল-মু্ত্র ত্যগের পর পরিচ্ছিন্ন হওয়ার পদ্ধতিটুকুও বাতলে গেছেন, তিনি ঈমানের অন্যমত অঙ্গ তথা তাঁরপ্রতি ভালবাসা প্রকাশের পদ্ধতিটা বাতলে যাননি? যিনি ইবাদতের ক্ষেত্রেও মুসলমানদেরকে ইয়াহুদী খৃষ্টানদের ব্যতিক্রম করতে বলেছেন, সেই রাসুলের প্রতি ভালবাসা প্রকাশ করতে হবে তাদেরই পদ্ধতিতে! রাসুলসা: বছরে দু'টি ও সপ্তাহে গরীবের ঈদখ্যত ১টি-সর্বমোট ৩টি উৎসব দিয়ে গেছেন তার উম্মতকে। কৃষকের বোনা ফসলের মধ্যে গজানো আগাছার মতোই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতিষ্ঠিত ইসলামের ৩টি ঈদের সাথে ''ঈদে মীলাদুন্নবী'' নামে আরেকটি নতুন ঈদ স্থাপন করেছে কিছু কুসংস্কারাচ্ছন্ন মুসলিম। বোখারী ও মুসলিম একযোগে বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহর রাসুল সা: বলেছেন 'যে ব্যক্তি আমার প্রদত্ত দীনে কোন কিছু যুক্ত করবে, সেটা প্রত্যাখ্যাত হবে।

' ফসলের কল্যানে যেমন আগাছা পরিস্কার করতে হয়, সুন্নাতের পরিপালনের স্বার্থেই আমাদেরকে সেসব বিদআত তথা কুসংস্কারকে না বলতে হবে। যাদের ইশ্বরেরও সেশ নেই, উৎসবেরও শেষ নেই, তাদেরকেই মানায় নামে বেনাম মনগড়া ঈদ বা ফুর্তি উদযাপন করতে। অনেকে হয়তো বলবেন, গান-বাজনার অনুষ্ঠানের চেয়ে তো এটা ভাল। রাজনৈকি নেতাদের জন্মোৎসব পালনের চেয়ে নিশ্চই বিশ্বনবীর জন্মানন্দ কল্যানের। রাসুলকে ভুলে যাওয়া মানুষগুলোর স্মরণের জন্য এটা কতোইনা সুন্দর ব্যবস্থা।

তাদের উদ্দেশ্যে কুরআনের দু'টি আয়াত উদ্ধৃত করতে চাই। এক. ''কারো কাছে যদি তার নিজের মন্দ কর্ম (শয়তানের পক্ষ হতে) সুন্দর করে দেখানো হয় এবং সে ওটাকে উত্তম মনে করে (সে ব্যক্তি কি তার সমান যে আল্লাহ ও রাসুল কতৃক বর্ণীত সুন্দরকর্ম করে?) আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বিভ্রান্ত করেন এবং যাকে ইচ্ছা সৎ পথে পরিচালিত করেন। '' -সুরা ফা-তির৮ অন্যত্র আল্লাহ বলেন, (হে রাসুল) ''বলুন আমি কি তোমাদেরকে সেসব লোকদের কথা বলে দেবো, যারা (লাভবান হওয়ার পরিবর্তে) তাদের কৃত আমলে ক্ষতিগ্রস্থ? তারাই সেসব লোক, যাদের প্রচেষ্টা ইহলৌকিক জীবনে বিভ্রান্ত হয়। অথচ থারা মনে করে, তারা সৎকর্ম করছে। -সুরা কাহাফ ১০৩ সহীহ মুসলিমের বর্ণনামতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি সোমবারে সপ্তাহিক নফল রোযার ফজীলত বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, তোমরা সোমবারে রোযা রাখবে।

কারণ এদিনে আমার জন্ম হয়েছে। রাসুলের জন্মদিন উপলক্ষে এ একটি বক্তব্য তথা আমল ছাড়া আর কিছুই নেই হাদীসের বিশাল ভাণ্ডারে। সুতরাং নবী জন্মের নামে কিছু করতে হলে সেটা বার্ষিক নয়, অবশ্যই করতে হবে সপ্তাহিক; এবং সেটা হলো প্রতি সোমবারে রোযা রাখা। হাদীসের নির্দেশনা মাপিক সপ্তাহিক রোযা না রেখে আমরা বরং বছরে একদিন মনগড়া মীলাদুন্নবী পালনের নামে নিয়মিত খাবারে সাথে মিষ্টি-শিন্নির অতিভোজন করি! আজকের মীলাদ পড়ে নবীপ্রেম জাহির করার হিড়িক দেখে দেড় হাজার বছরের পুরাতন ইসলামের কাছেই নতুন করে তার জন্মের উদ্দেশ্যটা জানতে বড় ইচ্ছে করে। ইসলামে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মটাই মুখ্য, নাকি তার আনীত দীন? তাঁর জন্মোৎসব পালনের আনুষ্ঠানিকতায় মানবতার মুক্তি, নাকি জীবনের সব ক্ষেত্রে তাঁর অনুকরণেই নিহিত আছে মানব জাতির কল্যান? সাধারণ মুসলমানদের ইসলামচর্চাদৃষ্টে মনে হয় রাসুলের আনীত দীনের পূর্ণ অনুকরণের চেয়ে তাঁর জন্মোৎসবের কৃত্রিম আবেগ ও আনন্দে আহলাদিত হওয়াই গুরুত্বপূর্ণ।

ইসলামের জন্ম পূর্ববর্তী একটি ঘটনা অবশ্য এ বিষয়ে কিছুটা ধারণা দেয়। মাতৃগর্ভেই পিতৃহারা রাসুলের জন্মের আনন্দে আনন্দিত হয়ে চাচা আবু লাহাব ভাতিজা জন্মের সংবাদ বহনকারীনি কৃতদাসীকে চিরতরে মুক্ত করে দিয়েছিলেন। কিন্তু আল্লাহর দেওয়া জীবনাদর্শের সম্মুখে মাথা নত করার প্রশ্নে ভাতুষ্পুত্র রাসুলের অনুকরণ করেননি তিনি। ফলে নবী জন্মের আনন্দ উদযাপনের বিরল এই ত্যগের পরও তার মুক্তি না মেলার ঘোষণা এসেছে কুরআনে। পক্ষান্তরে সাহাবীগন আল্লাহর নবীর জন্ম কেন্দ্রিক কোন জিলাপী বা রেলি নির্ভর কোন আনুষ্ঠানিকতা পালন না করেও শুধু জীবনের প্রতিটি স্তরে তাঁর পূর্ণ অনুকরণের বিনিময়ে পেয়েছেন আল্লাহর সন্তুষ্টির শুভ সংবাদ।

জীবনাদর্শ হিসেবে ব্যঙ্গের ছাতার মতো গজানো যদুমদুর বাদ-মতবাদের সয়লাবে দিশেহারা ও নবীর আদর্শ থেকে যোজন যোজন দূরে থাকা মুসলমানদের একেকজন একেক নৌকার মাঝি হয়েও যখন নবী জন্মের আনন্দ উদযাপনে অকৃপণতার মাধ্যমে মুসলমানিত্ব জাহির এবং নবীপ্রেমের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করতে চান, তখন মনে হয় আবু লাহাব যদি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মের সময় তাঁর আগমনের উদ্দেশ্য ও মিশন সম্পর্কে জানতে পারতো, তবে আনন্দ-ফুর্তির পরিবর্তে হয়তো তাঁকে অঙ্কুরেই শেষ করে ফেলতো চাইতো আসলে দিবস কেন্দ্রিক ইসলাম পালন ও আনন্দ উদযাপন করা সহজ হওয়ায় এব্যপারে নামধারী মুসলিমরা সিদ্ধহস্ত, এমনকি কোন সরকারও সহায়তা করতে কার্পণ্য করে না। মুশকিল হলো রাসুলের অনুকরণ করতে গিয়ে শীতের দিনে কনকনে ঠান্ডা উপেক্ষা করে ফজরের জামাতে হাজির হওয়া এবং ব্যক্তি-রাষ্ট্র ও সমাজের সর্বত্র ইসলাম চর্চা করাটা্। এজন্য সেগুলো নিয়ে কেউ জোরালো ভাষায় কিছু বললেই বলা হয় ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি, আর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মের ফুর্তি করতে গিয়ে রাস্তা বন্ধ করে মিছিল বার করলেও বাহবা, মিডিয়ায় কভাবেরজ। আসলে ইসলামের মুর্খ অনুসারীরা ইসলামের ভাল মন্দ প্রয়োজনীয় অপ্রয়োজনীয় বিষয় চিন্হিত না করতে পারলে কি হবে, ইসলাম বিদ্বেষীরা ঠিকই পারে। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.