গাইলে আছি, মাইরে আছি, ভাল বল্লে তাতেও তালি
হিন্দু ধর্মাবলম্বী প্রায় ২ হাজার ৫শত জন অধ্যুষিত একটি গ্রামের নাম মাকালকান্দি। হবিগঞ্জের নবিগগঞ্জ উপজেলার একটি গ্রাম।
১৮ আগস্ট ১৯৭১। সকাল থেকে শুরু হয়ে গেল মহা ধুমধাম। চারদিকে হৈ চৈ।
গ্রামের পূর্বহাটী, পশ্চিমহাটী, সরকার বাড়ি ও চৌধুরী বাড়ি প্রাঙ্গণের মনসা পূজা উৎসবে গ্রামের আবালবৃন্দবনিতা সবাই মুখরিত। এমন এক সময় হঠাৎ করে অবিরাম গুলির শব্দ। ভণ্ডুল হয়ে যায় আনন্দ উৎসব। প্রাণ নিয়ে ছুটাছুটি, গগণবিদারী আর্তচিৎকার। মুহুর্তেই লাশের স্তুপ, গ্রামজুড়ে জ্বলে উঠে আগুনের লেলিহান শিখা।
মাত্র কয়েক মিনিটেই নিশ্চুপ প্রাণহীন হয়ে যায় সম্পূর্ণ গ্রাম। অতঃপর লাশ নিয়ে শেয়াল কুকুরের টানাটানি।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে এমনি এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছিল। ঘটনার দিন কয়েকটি বড় নৌকায় রাজাকারদের সহযোগিতায় কয়েকশ পাক হানাদার বাহিনীর সদস্য হঠাৎ করে ঘিরে ফেলে গ্রামটিকে। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই অবিরাম গুলিবর্ষণ শুরু করে হায়েনারা।
নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোরদের জড়ো করে গুলি করে হত্যা করে। যাদের ঘাটে নৌকা ছিল, তাদের কেউ কেউ পানিতে পড়ে, সাঁতার কেটে প্রাণ নিয়ে পালালেও এ গ্রামে আটকে পড়া ২৭০টি তাজা প্রাণ ওই দিন কেড়ে নেয় হায়েনাদের বুলেট।
মুহুর্তেই জনশুন্য হয়ে যায় পুরো গ্রাম। লাশগুলো যেখানে যে অবস্থায় পড়েছিল সেখানেই থাকে। পালিয়ে যাওয়া লোকেরা আর পিছু ফিরে তাকায়নি।
তারা দেশে যুদ্ধ চলাকালীন প্রায় ৪ মাস এ গ্রামে ছিল না। স্বাধীন বাংলা ঘোষণার পর একে একে ফিরে আসে গ্রামবাসী। পরবর্তী সময়ে পোড়া কাঠ, খড় ও লাশের কংকাল সরিয়ে পরিস্কার করে নিজ নিজ ভিটায় নতুন করে বসবাস শুরু হয়।
---------------------------------------------------------------------
১৯৮৯ সালে এই গ্রামে গিয়েছিলাম। বর্ষায় পানিবন্দি এক জনপদ।
সেখানেই বাবা আর চাচার মুখে শুনেছিলাম ইতিহাসের এই টুকরুটা। হাওর সেদিন উত্তাল ছিল। তাই অনেক্ষন মাকালকান্দির ঘাটে আটকে ছিলাম। এখন, আজ যখন সেই দিন আর ১৯৭১ এর ভয়ঙ্কর দিন মেলাই, মাথা ঝিম মেরে উঠে। যারা বেঁচে গিয়েছিল তারা সেই উত্তাল হাওরটা কিভাবে পড়ি দিয়েছিল?
অনেক শিশু নাকি ঝাপ দিয়েছিল পানিতে... আহ্ আর ভাবতে ভাল লাগেনা।
** একটা ফোটনোট দেই: কুকুর বিড়াল লাশ নিয়ে টানাহেচড়া করে। এটাই নিয়ম। কারো জন্যা কাঁদবে এটা আশা করা ঠিকনা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।