একজন আমি, একজন হারিয়ে যাওয়া এবং একজন দূর প্রবাসী
স্কুল কলেজ পার করে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। পেছনে ফিরে তাকাতে গেলে অনেক কথাই মনে পড়ে। এর মধ্যে যেই অভ্যাসটা আজও ফেলে দিতে পারিনি তাহল ২য় বার আকিকার অভ্যাস। আকিকার প্রতি আমি এবং আমার গুটিকতক বন্ধুর খুবই আকর্ষণ। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেও মানুষের আকিকা করার অভ্যাস ত্যাগ করতে পারিনি।
সাধে কি আর বলে ঢেকি স্বর্গে গেলেও ধান মাড়াই করে। প্রথম নামকরণ করা শুরু করা হয় ক্লাস ৩ তে থাকতে। ক্লাসে দুইটা শারমিন ছিল। একটাকে ক্যাপ্টেইন শারমিন তো আরেকটাকে লম্বু শারমিন নাম দেয়া হল। তারপর আমাদের একটা ম্যাডাম ছিল নাজ ম্যাডাম।
এই ম্যাডাম-এর শিক্ষক আর ছাত্রের মধ্যে সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত তা নিয়ে কোনোই জ্ঞান ছিল না। মাদ্রাসার রাগী হুজুরদের থেকেও খারাপ ব্যবহার করতেন তিনি। তার নাম দেয়া হল “নাচতে না জানলে উঠান বাঁকা” ম্যাডাম। কারন তার কথার একটু এদিক ওদিক হলেই শাস্তি হিসাবে নীলডাউন অবধারিত ছিল। তারপর আমাদের ফার্স্ট বয়ের নাম দেয়া হলো “ছ্যাকা বাবু”।
কারণটা কি তা তো বুঝতেই পারা যাচ্ছে। এই গাধার একটা মাইয়ারে বলা নাই কওয়া নাই পছন্দ হয়ে গেল। তাও আবার কি অন্য ক্লাসের ফার্স্ট গার্ল আর ওই ক্লাসের সে ক্যাপ্টেনও। বেচারা গাধাটা কয়েকদিন ঘুইরা ওই মাইয়ারে প্রপোজ করলো। মাইয়ার বুদ্ধি আছে।
ওর সাথে কথা বলতে লাগল আর সেকেন্ড ক্যাপ্টেন রে পাঠাইলো আমাদের ক্লাস টিচার কে ডাক দিতে। ছেলে তো মহা খুশি। মাইয়া বোধহয় পইটা গেসে। একটু পর ক্লাস টিচার আইসা ওরে ধইরা নিয়া গেল। ওর কপাল ভালো ফার্স্ট বয় ছিল বইলা স্যার ওরে না মাইরা ছাইড়া দিসে।
এরপর ক্লাস টেন এ থাকতে এক পোলার নাম দেয়া হইল ঋষি। ছেলের নাম ছিলো রিচি। না নামের মিল বইলা ঋষি দেয়া হয় নাই। ওর সাথে আমার ক্লাস ৩ তে থাকতেই পরিচয় ছিল। তখন খুবই সাধাসিধে ছিল।
এই ৭বছরে কি হইসে কে জানে। এখন কথায় কথায় খালি জ্ঞান বাক্য ছাড়তো। তাই ওর নাম দেয়া হইলো ঋষি। এরপর আসি কলেজ জীবনে। কলেজের প্রিন্সিপালকে দিয়াই নাম করণের শুরু হইল।
মহিলা যখন হাটতো,দেইখা মনে হইতো যেন পুকুর বা কুপ থেইকা পানি আনার জন্য কোমড়ে কলসি নিয়া হাটতাসে। তাই তার নাম দেয়া হইল কলসি ম্যাডাম। আমাদের ক্লাস টিচারের নাম দিলাম হোপলেস। কারন তার কথা বার্তা শুইনা যদি আমরা কাজ করতাম তাহলে আমাদের আর এইচ এস সি পাস করা লাগতো না। আমাদের লাইগা তার সব কথাই ছিল নিরাশার বানী।
তাই তার নাম দিয়া হইল হোপলেস। ভাইসপ্রিন্সিপাল এর নাম এর সাথে ম্যাচ কইরা আমরা তারে ডাকতাম বেত্তমিজ(স্যারের নাম তমিজ)। আমাদের পদার্থ ল্যাব স্যারের নাম দেয়া হইসিল ফার্স্ট বয়। তিনি নাকি কোন কালে নটরডেমের ফার্স্ট বয় ছিল। এই হইল তার পরিচয়।
তাই তার সুনাম করার জন্যই ফার্স্ট বয় নামে ডাকা হইতো। এইভাবে আরো অনেকের ২য় বার আকিকা করা হইসে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠার পর সবচেয়ে আলোচিত নাম করন হল” হাইপোথ্যাটিকাল গাই” । ঐ ব্যাটা স্যাররে শুধু হাইপোথ্যাটিকালি বুঝাইতে কয়। আরেক মেয়ের নাম করণ করা হইসে গামা।
মেয়ে দেখতে নাকি উপজাতিদের মত। আমাদের এপার্টমেণ্টের একমেয়ের এই একই কারণে নাম দেয়া হইসে বার্মিজ। আর ওইদিন স্যারের ইভালুইশোন করতে আসা স্টুডেন্ট-এর নাম দেয়া হইসে “ শ্রীমতি হস্তি”। এখনো অনেক সময় আসে হাতে। এভাবে আমি ও আমার বন্ধুদের নামকরন আরো যুগ যুগ ধরে চলবে বলেই আশা করছি।
এই জন্য আপনাদের দোয়া চাই।
২য় আকিকা
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।