আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাইকেল্যাঞ্জেলো অ্যান্টনিওনির সাক্ষাৎকার

সাহিত্যের সাইটhttp://www.samowiki.net। বইয়ের সাইট http://www.boierdokan.com

একবার আপনি বলেছিলেন, কেউ যদি সিনেমাটোগ্রাফিক গ্রামারের দুই-তিনটি মূল নিয়ম শিখে ফেলে তবে সে যা চায় তা-ই করতে পারবে। এমনকি এ নিয়ম ভাঙতেও পারবে। কোন নিয়মগুলোর কথা বলেছিলেন? সবচেয়ে সহজ নিয়মগুলো যেমন ক্রসকাটিং : যদি কোনো অভিনেতা ডান দিক দিয়ে সেটে প্রবেশ করে তবে তাকে বাম দিক দিয়ে বেরোতে হবেÑ এসব। সিনেমা স্কুলগুলোতে এ রকম হাজারো নিয়ম শেখানো হয়।

আর এগুলো ততোক্ষণই দরকারি যতোক্ষণ না কেউ মুভি তৈরি করতে শুরু করছে। অনেক সময় আমি কিছু দৃশ্য চিত্রায়ন করে দেখিয়েছি এগুলো কতো অপ্রয়োজনীয়। আপনি একটা নিয়ম ভাঙলেন আর কেউ এটা খেয়াল করলো না, তার মানে হলো দর্শকরা শুধু আপনার ভুলের ফলটা দেখতে চায়। এতে যদি কাজ হয় তো কে নিয়মের তোয়াক্কা করে! ক্রনিকল অফ লাভ আপনার প্রথম ফিচার ফিল্ম। এ মুভিতে অনেক বেশি উদ্ভাবনী ও সাহসী ক্যামেরার কাজ আছে দ্বিতীয় মুভি ক্যামেলি উইদাউট ক্যামেলিয়ার চেয়ে।

যেমন ক্যামেলিতে চরিত্রগুলো যখন ক্যামেরার দিকে আসছে তখন আপনি তাকে অনুসরণ করেছেন। এটা ক্যামেরার নিয়মের মধ্যে পড়ে। কিন্তু ক্রনিকলে অন্যরকম ঘটছে। পরের মুভিগুলোতে এ রকম রক্ষণশীল হলেন কেন? আমি এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবো না। আমি যখন শুটিং করি তখন কোনোভাবেই চিন্তা করি না কিভাবে আমি শুট করতে চাই।

আমি সাধারণভাবে শুট করি। আমার কৌশল একটা ফিল্ম থেকে অন্যটায় আলাদা হয়ে যায়। আর এ প্রক্রিয়ার পুরোটাই স্বভাবগত, এটা কোনো বিবেচনা বোধের ভিত্তিতে তৈরি হয় না। কিন্তু আমি মনে করি, আপনি ঠিকই বলেছেন যে, ক্যামেলি এর আগের মুভি ক্রনিকলের চেয়ে বেশি রক্ষণশীল। কারণ প্রথম মুভি শুটিং করার সময় আমি লং শট নিয়েছি, চরিত্রগুলোকে অনুসরণ করে।

এমন সিন যখন শেষ হয়েছে তখনো আমি ক্যামেরা নিয়ে তাদের অনুসরণ করেছি। আপনি জানেন, ক্রনিকল পরেরগুলোর চেয়ে বেশি সাহসী নয়। পরে আমি অনেক সময় নিযমগুলোকে ভেঙেছি। লা’আভেনচুরা ও ব্লো আপ দেখুন। ব্লো আপ আপনার মুভিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অরক্ষণশীল।

আপনি ঠিক বলেছেন যে, ব্লো আপ সবচেয়ে বেশি অরক্ষণশীল। কিন্তু এটা মন্টাজ ও ফটোগ্রাফির দিক থেকে অরক্ষণশীল। স্টেন্ট্রো সুপ্রিমেন্টালে (ইটালির ফিল্ম ইন্সটিটিউট) ওরা শেখায়, অ্যাকশন চলার সময় কখনোই শট কাটা যাবে না। তারপরও ব্লো আপে আমি সেটাই বারবার করেছি। পরবর্তীকালে আপনি কাটিংয়ের মুহূর্তটাকে মুছে ফেলতে চেয়েছেন আবশ্যিক ট্রানজিশনটাকে ভুলিয়ে দিতে।

যেন আপনি দর্শককে স্বস্তি থেকে দূরে রাখতে চান। এ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আপনার পরবর্তী মুভিগুলো শ্লথ ও নির্দিষ্ট গল্প বলে গেছে। আপনি কি এ ধরনের কাট ব্যবহার করে চঞ্চলতা অর্জন করতে চেয়েছেন? যদি তাই হয় তবে এটা পুরোপুরি স্বভাবগত। আমি ভেবেচিন্তে কিছু করিনি। আপনি একটা সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ডিরেক্টররা বাইসাইকেল সমস্যা দূরীভূত করেছে।

আমি এটা দিয়ে কি বোঝাতে চেয়েছিলাম? আমার মনে হয়েছিল, আপনি চরিত্রের সামাজিক প্রণোদনার কথা বোঝাতে চেয়েছেন। আর আপনি অবশ্যই ব্যক্তিত্বের ক্ষমতার ওপর জোর দিতে চেয়েছেন। ব্যক্তিকে সমাজের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে চেয়েছেন। আপনার চরিত্রগুলো সামাজিক কারণ দ্বারা চালিত না হলেও তারা সামজিক পরিপ্রেক্ষিতের মধ্যেই অবস্থান করে। এটা আপনার মুভিকে দারুণ গভীরতা দিয়েছে।

আপনি জানেন, আমি কি করতে চাই। শূন্যস্থানে চরিত্রগুলোকে নিয়ে কাজ করলে দর্শকরা চরিত্রের ব্যাকগ্রাউন্ডটা কল্পনা করে নিতে পারে। এখন পর্যন্ত আমি এমন কোনো শট নিইনি যার ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে শট নেয়ার আগে আলোচনা করা হয়নি। চরিত্রের পেছনে কি আছে সেটা নিয়ে আলোচনা করেছি। কারণ মানুষ ও তার পরিপার্শ্বের সম্পর্ক আমার কাছে প্রধান বিবেচ্য বিষয়।

আমি সাধারণভাবে বলতে চাই, আমি চাই চরিত্ররা বলুক তারা কোন ধরনের ব্যাকগ্রাউন্ড চায়। যদি সেটা দৃশ্যমান না হয় তারপরও আমি সেটা দিতে চাই। আমি চাই তাদের পরিপার্শ্ব ও সামাজিক প্রেক্ষাপটের বাইরেও তাদের পূর্ণভাবে বোঝা সম্ভব হোক। এটা ঘটুক শূন্যস্থানেও। অর্থাৎ আপনি ডিটেইলের কথা বলছেন।

আপনি চরিত্রগুলোকে তাদের ব্যাকগ্রাউন্ডের সঙ্গে যুক্ত করছেন। কেউ যদি আপনার মুভির ভেতর দিয়ে যায়, তবে দেখবে আপনি সংলাপের ওপর খুব কম নির্ভর করছেন। বস্তুগত পরিপ্রেক্ষিতের সাহায্যে চরিত্রকে স্টাবলিস করতে চাইছেন। হ্যা। আপনার মুভিতে মানবিক দায়িত্ববোধের একটা চেহারা দেখতে পাই।

এ বোধ ছাড়া আমি কোনো শিল্পের কথা ভাবতে পারি না। আমি ব্যাপারটা পরিষ্কার করতে পারি একটা কথা বলে। সেটা হলো আমি শুধু অনুভূতির কথা বলি। আমি সমাজতাত্ত্বিক নই, আবার রাজনীতিকও নই। আমি যা করতে পারি তা হলো নিজের জন্য ভাবতে পারি সামনের দিকটা কেমন হতে পারে।

আজকাল আমরা নিজেদের কিছু কৌতূহলকর বাস্তবতার সামনে দেখতে পাই। যেমন বর্তমানে তরুণদের আন্দোলনগুলো এক ধরনের নৈরাজ্যের মধ্যে জন্মায়। এ নৈরাজ্য নতুন সমাজের দিকনির্দেশনা দেয় যা হবে আরো বেশি মুক্ত। অন্যদিকে এ তরুণরা নিজেদের মরমিয়া বলে পরিচয় দেয়। স্বীকার করতেই হবে, এটা আমাকে বিরক্ত করে।

আমি জানি না এটা নিয়ে আর কি ভাবা যায়। আমি চাই না যা আমি বলছি তা প্রচারের মতো শোনাক বা আধুনিক সমাজের বিশ্লেষণের মতো কিছু শোনাক। এ অনুভূতিগুলোই শুধু আমার আছে। আমি পৃথিবীতে সবচেয়ে কম হিসাবি মানুষ। আপনি কি আশাবাদী? এ রকম লোক আমার চারপাশে আছে।

নিজেদের দুর্বল ও সবল বৈশিষ্ট্য নিয়ে তারা বৈপরীত্যে ভরা। আবার চরিত্রগুলো ধোয়াশা। তাদের সেটাই বলুন। আমি কিছু মনে করবো না। আমি নিজেই অস্পষ্ট।

কে নয়? বিখ্যাত ডিরেক্টর হওয়ার মাধ্যমে কি মানুষের সঙ্গে আপনার সমস্যা হয়? হয়। কখনো কখনো আমার দর্শক হওয়াটা বিপত্তি তৈরি করে। আমি উপস্থিত হলে লোকে কিছুটা ঘনিষ্ঠতা অনুভব করে, আমিও কিছুটা অনুভব করি। কারণ আমি প্রাকৃতিক পরিবেশের অংশ হতে চাই। আমি কিছু কৌশল অবলম্বন করি যাতে তেমন অবস্থায় পর্যবেক্ষণের কাজ করতে পারি।

কিন্তু সমস্যা হয় তখন যখন আমি বুঝতে পারি লোকগুলো বিরক্তিকর। আপনার মুভির বিষয় ইটালিয়ান উচ্চবিত্তদের জীবন। আপনি পছন্দ নাকি বিষয় কোনটা খুজতে এখানে ঢুকেছেন? পার্থক্য তৈরি করা খুব কঠিন। লোকে কোনো একটা গ্রুপের লোকের সঙ্গে মেশে কারণ হয় দরকার নয়তো সে তা চায়। কোনো বিশেষ কারণ না থাকলেও অসংখ্য কারণ থাকতে পারে।

কখনো কখনো কেউ একজন যেখানে আছে সেখানে থাকার কারণে অদ্ভুত আনন্দ পেতে পারে। এটা একটা কারণ হতে পারে। কেন নয়? আমি সে রকম ঠাণ্ডা মাথার লোক নই যারা চারপাশে যা শুনছে তা সন্তর্পণে লিখে রাখে। আমি সহজ ও স্বাভাবিক জীবন যাপনের চেষ্টা করি। আমার ভেতরে যা থাকে তা আকার চেষ্টা করি।

জন আপডাইক একবার বলেছিলেন, শিল্পী হওয়াটা ভয়ঙ্কর ব্যাপার। কারণ এটা একজনের দুঃখকে মুহূর্তের মধ্যে লাভজনক করে তুলতে পারে। আজকাল আমি শিল্পী শব্দটা ব্যবহার করতে চাই না। কারণ এতে মনে হয় এটা আলাদা কিছু। কেউ যদি তার বেদনা থেকে লাভ করতে পারে তাহলে তো খুব ভালো।

আমি বেদনা ভুলে থাকার সবচেয়ে সুন্দর উপায়টা খুজে নিতে চাই। আজকাল শব্দটা বললেন কেন? শিল্পী হওয়াটা আগে কি অন্যরকম ছিল? অবশ্যই। রেনেসার সময় সবকিছুই শিল্প দ্বারা প্রভাবিত ছিল। এখন পৃথিবীটা শিল্পের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এমনই যে, আমি শৈল্পিক কর্মকাণ্ডের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত।

তাহলে এখন কোনটা কাজে আসে? আমি জানি না। আপনি জানেন না? আপনি জানেন? হ্যা। তাহলে আমাকে বলুন। আপনি এটা আমাকে জিজ্ঞাসা করছেন? তাহলে বলুন ত্রুফোর মুভির কাজ কি? আমার মনে হয় তার মুভি নদীর মতো। দেখতে ভালো লাগে।

স্নান করতে ইচ্ছা হয়। খুব আনন্দদায়ক ও সুন্দর। তারপর পানি প্রবাহ চলে যায়। সুন্দর অনুভূতির খুব সামান্যই অবশিষ্ট থাকে। আমার আবার নোংরা লাগে।

আবার গোসলের দরকার পড়ে। আপনি কি মনে করেন মুভির দৃশ্যগুলো মনে রাখার মতো নয়? হ্যা। এটা হলো এর একটা অংশ। না, তার ইমেজ গদারের মতোই শক্তিশালী। কিন্তু তার গল্প আলুলায়িত।

এটাকে আমি অপছন্দ করি। চার্লস থমাস সামুয়েলস এ সাক্ষাৎকারটি নিয়েছিলেন ১৯৭২ সালে। দীর্ঘ সাক্ষাৎকার থেকে কিছু অংশ পাঠকের জন্য উপস্থাপন করা হলো। অনুবাদ : মাহবুব মোর্শেদ

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।