যখন বিকাল হতে থাকে, হতে হতে সূর্যটা ঢলে পড়ে, পড়তে থাকে
আমাদের কষ্টেরা যাপিত জীবনের অনুষঙ্গ। আমাদের সুখেরা প্রতিপালিত বিগত জীবনের স্মৃতি। আমাদের স্বপ্নেরা সংকীর্ণ জীবনব্যবস্থায় মুখ থুবড়ে পড়ে। এখানে নিয়ন্ত্রণ আরোপিত হয় প্রতি পদে, প্রতি শব্দে, প্রতি নিশ্বাসে। আমরা কথা বলি না হৃদয়ের, আমরা কথা বলি অন্যের স্বরে, স্ক্রিপ্টে দেখে।
আমাদের হাসি অভিনীত, কান্না দেখানো, দুঃখ কপট। আমাদের ইচ্ছেরা মৃতভূমির চাষাবাদে ব্যস্ত। এই সমাজ নিয়ে আমি সন্তুষ্ট নই। এই সমাজ নিয়ে আমার উচ্চাশা নেই। অন্ধবিশ্বাসী সিএনজি ড্রাইভার আমার অনেক রহস্য জানে, সন্ধ্যার পর থেকে সাড়ে চারশো টাকা বিল হলে সে জানতে পারে আমি অন্য কোন নারীর দারস্থ হই, মাথার উপরের রিয়ার ভিউ মিররে দেখতে পারে সেই নারীর কোন কোন অঙ্গ স্পর্শ করে আমার ঠোঁট, কোথায় ডিনার করি, ফোনে কোথায় অসত্য বলি।
সমাজ ঐ সিএনজি ড্রাইভারের মত দৃষ্টিতে দেখে এবং তার মতই চুপ করে থাকে।
ভেতরে ভেতরে প্রবাহিত আমাদের যৌনতা, আমাদের স্থুল বিনোদন, ভন্ডামীকে রেখেঢেকে সংক্রীর্ণ ধর্মীয় অনুশাসন মেনে বিয়ের পাত্র হই, সামাজিকতা মেনে চলি, আর ধর্মের হাইহ্যালো সম্ভাষণে নিজের নাস্তিকতা ঢেকে চলি। সমাজ তাই এক নিপাট চাদরে ঢেকে পরিপাটি সাজিয়ে দেয়। সংগম করি বছরের পর বছর কাঠের সাথে, চাদরের সাথে, দেয়ালের সাথে, সংসারের সাথে। মানুষের সাথে সংগম করি না, করি কেবল সমর্পিতার সাথে।
সে জানে তাকে শায়িত হতে হবে। শায়িত হয়ে এসেছে একপুরুষে, মনজগতে বিচরণ করেছে হাজার পুরুষ।
ইচ্ছেরা শিথিল শৃংখলে উড়তে চায়। চায় জটিল জীবন। এত সহজ জীবনের নুন পান্তা ইকুয়েশনে আমাদের নির্মাণ চতুর্থ শ্রেনীর হবে বৈকী।
তাই নিয়ে আমরা অদেখা, অজানা সময় ও জীবনের গল্প লিখি, উপন্যাস লিখি। নিজের জীবনের জটিলতা জানাতে ভয় পাই বলে পান্ডিত্য ঝাড়ি কষ্টে থাকা মানুষের জীবন লিখে, সেখানে না থাকে দেখা, যে দেখা দেখে নেয় নাড়ীশুদ্ধ, না বলা কথাটুকুনও।
এ যাবত যত মানুষের সাথে দেখা হয়েছে সবাই এক কাল্পনিক জুজুর ভয়ে ব্যতিব্যস্ত। খোলস পড়ে চলে, রেখেঢেকে মদ খায়, আর বেশ্যার সাথে রতিস্বপ্ন দেখে। স্বপ্ন দেখে অভাবনীয় সাফল্যের, রাতারাতি তাকে অমর করবে, অর্থশালী করবে।
ক্ষমতা মুড়িয়ে দেবে তার নাম, ফলক উন্মোচিত হবে কোন রাস্তায়। যেমন হয় এক ইতর সরকারপ্রধানের, খালেদা জিয়া, এক ভন্ড নেত্রী শেখ হাসিনার। জিয়া নামটি জুড়ে বসে থাকা এক অশিক্ষিত তারেক মানুষের পকেট থেকে ফার্মগেটের হাইজ্যাকারটার মত টাকা ছিনিয়ে নেয়। মান্নানের সাথে এসে তাল দেয় বিগত পাঁচবছরে বিএনপির যেসব নেতা দলীয় কোন্দলে কোনঠাসা ছিল সেইসব শুয়োরের বাচ্চারা। প্রথমরাও শুয়োর, দ্বিতীয়রাও শুয়োর।
সন্ধ্যার পরে শেরাটন থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত সিএনজিতে একাকী গেলে ভয় থাকে দুইপাশ থেকে উঠে গেল দুই হাইজাকার কিনা। কাওরান বাজার আসতে আসতে নিয়ে নেবে ওয়ালেট, মোবাইল। এদেশে প্রতিটি মানুষকে চুষে নিয়ে দুই বর্বর, অশিক্ষিত, ভন্ড, প্রতারক, অযোগ্য, অসমর্থ, মস্তিস্কবিকৃত নেত্রী আমাদের শাসন করেছে বিগত বছরগুলি। একজন ক্ষমতায় এলে অন্যজনকে হুমকি দিয়েছে, দেখি মাগী, কি করে তুই চালাস সরকার? তারপরে তিনি এসে তারও শোধ নিয়েছেন।
হাইজ্যাকার সরকার দাস বানিয়ে রেখেছে জনগনকে।
জনগন কিভাবে হাসবে, কাঁদবে তা নিয়ে তাদের বিস্তর ভাবনা। এই জনগণ যারা অথর্ব, যারা অলস, যারা কখনও মননশীলতার কথা শোনেনি, যারা চায় ভেতরে সব ভন্ডামী পুষে রেখে উপরে ভালমানুষী আলখেল্লাটা চাপিয়ে যেতে। এই জনগণ, যেই জনগণ সুযোগ পেলে ট্যাক্স ফাকি দেয়, স্কুল কলেজে সন্তানের পরীক্ষায় নকল সাপ্লাই দেয়। এই জনগণ যারা রাস্তায় ঠিকমত হাটঁতে জানে না, মুততে জানে না। রিকশাওয়ালাকে একটাকার জন্য থাপ্পর দিয়ে বীরত্ব ফলায়, বাসের হেলপারকে লাথি মেরে ফেলে দেয়।
এই জনগণ যারা লাইনে অভ্যস্ত নয়, সন্তানের চাকুরীর জন্য ঘুস দিতে পিছপা হয়না। লাইসেন্স ছাড়া টেলিভিশন দেখে আর মুখে বড়াই করে রাস্তা ঠিক করে না সরকার। যেখানে সেখানে ময়লা ফেলবে আর রাস্তার পাশের পৌরসভার উপচে পড়া ডাস্টবিন দেখে মেয়রের গুষ্টি উদ্ধার করবে। এই জনগণের জন্য কত চিন্তা সরকারের। যে দাসের জাতের অভ্যাস বিগত একহাজার বছরের সে বাঙালির জন্য হাসিকান্না মেপে তো দিতেই হবে।
এই দেশের পরিবর্তন আসতে হবে। সে পরিবর্তন আসবে আমাদের প্রকাশের বাধা অপসারণের পরেই। আমাদের ঢেকে রাখা সমাজটাকে আলোতে নিয়ে আসার পরেই। ঘরে ঘরে প্রযুক্তি ঢুকে জীবনকে যত বিজ্ঞানের কাছে নিয়ে এসেছে ততই সে বিজ্ঞানে ঢুকে মোল্লারা সাত আসমানের কেচ্ছা শোনানো শুরু করেছে। অসমান বিচিওয়ালা এ মোল্লাদের কল্পিত স্বর্গ নরকের ভীতি না শুনিয়ে বিজ্ঞানের সহচার্যে আমাদের এই অশিক্ষিত, অন্ধ বিশ্বাসী জনগণকে জীবনের বাস্তবতা দেখাতে হবে।
যে হারে মসজিদের বিলাস বেড়েছে সেহারে স্কুলের গবেষণাগারটিকে আধুনিকায়ন করা হয়নি। বিজ্ঞান নিয়ে আমরা মসজিদে ঢুকিয়েছি, আর কলেজে দিয়েছি ধর্মশিক্ষা। অশিক্ষিত এক বিশাল বয়স্ক জনগোষ্ঠি আমাদের সামনে পড়ে আছে, তাদের জন্য পিকটোরিয়াল লেসনের ব্যবস্থা করা এখন অনেক সহজ। মোবাইল আছে, টিভি আছে, প্রজেক্টর আছে। আমাদের উদ্যমী নেতা, বুদ্ধিজীবিরা সেই বিশাল জনগোষ্ঠিকে ধর্মান্ধ মোল্লাদের হাতে ছেড়ে দিয়ে স্বপ্ন দেখে সভ্য, আধুনিক বাংলাদেশের।
অমার্জিত, অশোভন আর অশক্ত হৃদপিন্ডের বাঙালীকে তার লড়াকু সরূপে আবির্ভূত হতে হবে। এখনই সময় এই ভন্ড সমাজকে লাথি মেড়ে গুড়িয়ে দেবার। এই লম্বা দাড়িওয়ালা ধর্মব্যবসায়ীদের হাত থেকে দেশের জনগণকে উদ্ধার করতেই হবে। নইলে ভুটানীরা যখন রকেটে চড়বে, তখনও আমরা টিভিতে নবীজির কাল্পনিক বোরাকে চড়ার গল্প শুনবো, আর নিজেদের বড় বিজ্ঞানী ভেবে হস্তমৈথুন করবো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।