আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সামহোয়ারঃ নিউ জেনারেশন

যখন বিকাল হতে থাকে, হতে হতে সূর্যটা ঢলে পড়ে, পড়তে থাকে

এটা ঠিক পূর্ণতার গল্প নয়, বালুময় সৈকতের শুরু নেই, শেষ নেই, তেমন ভাবা। সম্পর্কের পূর্ণ স্টাচু নন্দনতায় তৈরী হয় না, মৃতমান লাগে। একটা তাবৎ শুরুশেষ ব্রাকেটে ফেলে সম্পর্ককে অখন্ড করা যায় না। সেটার পরতে পরতে কেবল ধুলোর কুন্ডলী, খন্ডন সেখানে নিয়মনীতির বাইরের বিষয়, পূর্ণতা সেখানে অন্য ক্যাটাগরীর। আসল কথা হচ্ছে বিচরণ করা, সম্পর্কগুলোতে, অসীমতায়।

কিছু বোঝা গেল! না হয়তো ঠিক জবাব কিন্তু এ মুহূর্তের বিশ্লেষণ হচ্ছে শুদ্ধ নীতিবাগিশ বিড়ম্বিত এক মানুষের কথা। যার কথা বলছি তিনি হচ্ছেন স্বরহীন। ব্লগের প্রথম থেকে আছেন, কিন্তু নিয়মিত ভাবে অনিয়মত হয়ে। তার লেখক হয়ে ওঠাটা ব্লগভূমিতেই হয়তো কিন্তু জটিলতার কেন্দ্রে ঢুকে যেতে তিনি অনেক বেশী পরিপক্ক ছিলেন, যা লেখায় উঠে এসেছে চালচুল ও চুলো সমেত। আজকে হয়তো তিনি ব্যান খেলায় ব্লগ ছাড়লেন।

এখন সামহোয়ারে নিউ জেনারেশনের পদধ্বনি। নিজের ব্রান্ড নেমকে সামহোয়ার থেকে বাঁচিয়ে মাস্ক পরে লড়ে গেছেন বা যাচ্ছেন অনেক ফাস্ট জেনারেশন ব্লগার। তাদের মার্কেট ভ্যালু চড়া বলে নিজের মানকে খোয়াতে চাননি, কিন্তু স্বরহীন বৈচিত্রে দিয়েছিলেন অনণ্য মাত্রা, একটা ভিন্নভাবে দেখার জগৎ। সুতরাং এখন যাদের লেখা মনযোগ দিয়ে পড়ছি, যেমন মনের কথা, মুকুল, আউটসাইডার, উদাসী স্বপ্ন, অন্যআনন, মুনিয়া, দিগন্ত, মাহবুবা আখতার, নাজিম উদ্দিন, কোপাসামছু এদের দেখে মনে হয় সম্ভবনাময় নতুন জেনারেশন এসে পড়েছে সামহোয়ারে। প্রত্যেকের ভেতরে রয়েছে ন্যাচারাল রাইটিং ইনস্টিংকট।

ব্লগ থেকে লেখক হয়ে ওঠার সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে তারা ব্লগকে ধারণ করতে পারে অনেক বেশী ডাইভারসিটিসহ। এদের ভৌগলিক অবস্থান, বিশ্বাসগত নির্মাণ, জেন্ডার বিষয়ক ধারণার রয়েছে বিভিন্নমূখী কর্নার কিন্তু প্রত্যেকেই মুগ্ধ, অভিজ্ঞ দর্শক জীবনের। সেই সাথে আছে আবেগের সুললিত বয়ানও। নতুন জেনারেশন সামহোয়ারে স্থান করে নিতে নিতে আমরা হারিয়ে ফেলেছি ফাস্ট জেনারেশনকে। হাতে গোনা কয়েকজন অনিয়মিত হয়ে আছেন মাত্র।

স্বরহীন ছিলেন একদমই বিতর্কের বাইরের একজন ব্লগার। তবে সামহোয়ারের থেকে প্রথম জেনারেশন যেভাবে বিদায় নিয়েছে তার বেশির ভাগই সুখকর নহে, অনেকাংশে কলংকিত। হয় তাদেরকে ব্যান করা হয়েছে, নয়তো তারা দাবী জানিয়ে কোন জবাব না পেয়ে ছেড়েছে। আমার মনে হয় না কোন সাইট এত ব্যাপকমাত্রার তার একটিভ ব্রান্ড ব্লগার হারিয়েছে যা সামহোয়ার দেখানোর সাহস দেখিয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা উন্মুক্ত একটা প্লাটফর্মকে সামাজিক যেসমস্ত বিধিনিষেধ রয়েছে ঠিক সেই মাত্রায় নিয়ন্ত্রিত রাখলে সামাজিক বিকাশ কিভাবে সম্ভব হবে।

এই প্লাটফর্ম সমাজের দর্পন কেবল নয়, আগত সমাজের প্রেক্ষিত আইডিয়া ও বৈচিত্রতাও তৈরী করবে। কাজেই যুঞ্চিক্তের পোস্ট রাখা ও একই সাথে জামাতের প্রোপাগান্ডামূলক পোস্টগুলোর থাকাটাও জরুরী মনে করছি। মানুষকে বেছে নিতে দিতে হবে তার আনকাট পছন্দ। ব্লগের বাইরে কেউ নবীর কার্টুন নিয়ে ঘুরতে পারবে না। যুঞ্চিক্তের পোস্ট নিয়েও ঘুরতে পারবে না।

নিজামী, মুজাহিদের ছবি টানাবে না কারো ঘরে। কিন্তু ব্লগে সেটা সম্ভব। ব্লগে সকল অসম্ভবকে জায়গা দেয়া উচিত। আর এটা তখনই সম্ভব যখন আহমেদ মুজতবার মত বাচ্চা ছেলে তার পারিবারিক পরিমন্ডলের সাথে অপরিচিত আক্রমনের স্বীকার না হবে, আস্তমেয়েকে কটুক্তি করে নির্মাণ হবে না শব্দখেলা। যাতে মুক্তিযুদ্ধ সন্বন্ধে ভিন্ন কোন দর্শন প্রভাবিত করতে না পারে এসমস্ত কিশোর-কিশোরীদের।

প্রতিটি ব্লগার একজন উপস্থাপক যিনি নিয়ে আসেন ভিন্ন একটা দিক, ভিন্ন একটা মাত্রা, তার মতপ্রকাশের আর ভালোলাগার সংস্থান হয়ে থাকে ব্লগটি। আমরা দেখবো জীবনের যত দৃষ্টিভংগি আছে তার সবই। দেখবো প্রতিটি ব্যতিক্রমও। কেবল পারসন উদ্দিষ্ট গালাগালি ছাড়া। মুক্তিযুদ্ধকে দেখাতে হবে সকল বিরুদ্ধমতের মধ্যে থেকেই।

ধর্ম নির্ভর রাজনীতির যে জুজু আমাদের সামনে ঝুলছে তাকে যদি এড়াতে হয় তবে নিয়ে আসতে হবে আরো বিশাল চিত্র। সমাজ ও রাষ্ট্রের বিকাশে সুবিধাপ্রাপ্ত ও প্রান্তিকদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকার এবং মতপ্রকাশের বৈচিত্রতার সাথে সংশ্লিষ্ট সকল আন্তর্জাতিক পুঁজি নকশার স্বার্থও। সেটা আলোচিত হতে হবে, থাকতে হবে ব্লগের প্রানকেন্দ্রে। সামহোয়ারের নতুন জেনারেশনকে শুভেচ্ছা।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।