আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিদের ধরেও ছেড়ে দিল পুলিশ !

ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের (ডিসিসি) এক মহিলা কর্মচারীকে নির্যাতন ও ধর্ষনের চেষ্টার অভিযোগে ডিসিসির ৪ কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে ধরেও ছেড়ে দেয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে যাত্রাবাড়ি থানা পুলিশের বিরুদ্ধে। এদিকে মামলা তুলে নেয়ার জন্য আসামিদের হুমকিতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানান ডিসিসি’র পরিচ্ছন্ন কর্মী (নির্যাতিতা) জোসনা বেগম। ডিসিসির পরিচ্ছন্ন কর্মী (নির্যাতিতা) জোসনা বেগম জানান, স্থায়ী ক্লিনার হিসাবে দীর্ঘ ১২ বছর ধরে ৫০ নং ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্ন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিরাজের অধীনে ওই এলাকায় তিনি কর্মরত ছিলেন। কিন্তু গত কয়েকমাস ধরে মোটা টাকার লোভে তার স্থলে অন্য কর্মচারীকে স্থলাভিষিক্ত করার জন্য সিও নুর হোসেন, সিআই সিরাজ, ক্লিনার করিম, নজরুল তাকে (চাকরি থেকে অব্যাহতি নেয়ায় জন্য) নানা রকম হুমকি দিয়ে আসছিল। তাদের কথা মতো কাজ না করায় জোসনাকে আটকিয়ে সাদা ষ্টাম্পে সইসহ কয়েকবার তারা নির্যাতন চালায় তার ওপড়।

দিনের পর দিন কাজ করিয়ে তারা জোসনার সাক্ষর নেয় নকল খাতায়। এক পর্যায়ে তিনি জানতে পারেন অনুপস্থিতির কারনে তার চাকরী নাই। এই বিষয়ে তিনি ঢাকা সিটি কর্পোরেশন প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন ১৯ ডিসেম্বর। বাবু নামের আরেক পরিচ্ছন্নকর্মীকে দিয়ে বিষয়টি সুরাহা করার আশ্বাসে ২০ ডিসেম্বর সকাল ৭টার দিকে জোসনাকে তার বাসা থেকে গোলাপবাগ পরিচ্ছন্ন জোনাল অফিসে ডেকে নিয়ে যায় সিও নুর হোসেন, সিআই সিরাজ, ক্লিনার করিম, নজরুল। তাকে ওই অফিসের রুমে ঢুকিয়েই দরজা বন্ধ করে জোর করে তার পরিহিত কাপড় খুলে বিবস্ত্র করে ফেলে তারা।

এর পর তাকে অমানুষিকভাবে শারীরিক নির্যাতনের পর ধর্ষনের চেষ্টা চালায়। অফিসের কর্মকর্তারা জোসনাকে নির্যাতন করছে এমন খবরে তার স্বামী মো. সিরাজ এগিয়ে এলে তাকেও মারধর করা হয় সেখানে। মারধরের পর তারা জোসনা ও তার স্বামীকে সিটি পল্লীর একটি গলিতে নিয়ে গিয়ে সাদা ষ্ট্যাম্পে সাক্ষর নেয়। এক পর্যায়ে তারা চিৎকার শুরু করলে আশেপাশের লোকজন এসে তাদের উদ্ধার করে। এ ব্যাপারে যাত্রাবাড়ি থানায় মামলা করতে গেলে অজ্ঞাত কারণে থানা মামলা না নিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরী নেয় তাদের কাছ থেকে (ডায়েরী নং-১২৫৮, ২০ ডিসেম্বর ২০১২)।

থানা পুলিশ রহস্যজনক ভুমিকা পালন করায় তিনি মহা-পুলিশ পরিদর্শক থেকে শুরু করে মোট ৬টি প্রতিষ্ঠানে লিখিত অভিযোগ করেন। এছাড়াও নারী নির্যাতন ও ধর্ষনের চেষ্টার অভিযোগ এনে তিনি সিএমএম আদালতে একটি মামলা করেন (মামলা নং- ১৯/২৮/২-২০১৩ ইং)। তিনি অভিযোগ করে আরো জানান, সিও নুর হোসেন, সিআই সিরাজ, ক্লিনার করিম, নজরুলসহ সিটি কর্পোরেশনের কিছু অসৎ কর্মকর্তারা একটি সিন্ডিকেড বানিয়ে সাধারণ লোকদের কাছে ক্লিনারের চাকরী দেবার নাম করে ২ থেকে ৩ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এমনকি সিটি কর্পোরেশন প্রশাসকের নজর এড়ানোর জন্য ভুয়া কর্মীদের দিয়ে কাজ করিয়ে নিয়ে মাসিক বেতন মূল কর্মচারীর নামে উত্তোলন করে থাকে। বৈধ কর্মচারীরা দিনের পর দিন কাজ করার পরও হাজিরা খাতায় অনুপস্থিত দেখিয়ে তাদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করে।

শুধু তাই না; নতুন কর্মচারীদের বৈধতা টিকাতে সাধারণ কর্মচারীদের কাছ থেকে কৌশলে স্টাম্পে স্বাক্ষর নেয়া হচ্ছে। ক্লিনার নজরুল ও করিমসহ একাধীক স্থায়ী কর্মচারী আছেন যারা তাদের ডিউটি নিজেরা না করে অন্য জনকে দিয়ে করিয়ে সিটি কর্পোরেশন থেকে বেতন উত্তোলন করে। এক একজনের পরিবার থেকে ২/৩ জনও এধরণের কাজ করে আসছে বলেও জানান তিনি। ডিসিসিতে ৩০০ ক্লিনারের ভিতর প্রায় ১৫০ জনই বহিরাগত বলে তিনি দাবী করেন। নারী নির্যাতনের মামলার পরিপেক্ষিতে সিএমএম আদালতের ম্যাজিষ্ট্রেট মো. মোস্তফা শাহরিয়ার খান বিষয়টি আমলে নিয়ে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেন যাত্রাবাড়ি থানা পুলিশকে।

কিন্তু অজ্ঞাত কারণে গ্রেফতারি পরোয়ানা হাতে পাওয়ার পরও আসামীদের আটকের ব্যাপারে গড়িমসি শুরু করে থানা। গত শনিবার (১৯ জানুয়ারি) রাতে জোছনা যাত্রাবাড়ি থানার উপ-পরিদর্শক এমরানুল হককে (অপারেশন অফিসার) আসামিদের সন্ধান দিয়ে তাদের ধরার কথা বললে প্রায় ৫ ঘন্টা সময় পার করে দিয়ে তিনি রাত ১০ টার দিকে এসআই মোক্তার ও আবুল কালাম আজাদকে আসামিদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। ওই রাতে এসআই মোক্তার ও আবুল কালামের নেতৃত্বে সিআই সিরাজ, সিও মো. নজরুল ও ক্লিনার করিমের মাতুয়াইলের বাসায় অভিযান চালায়। এই সময় আসামিকে ধরে আনা হবে এমন আশ্বাসের পরিপেক্ষিতে তারা অজ্ঞাত কারনে জোছনাকে বাসায় পাঠিয়ে দেন। কিন্তু সকালে গিয়ে জোছনা থানায় পাননি ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিদের।

আসামিদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে এসআই আবুল কালাম আজাদ জানান, তাদের পাওয়া যায়নি। জোছনা আরো জানান, রাতে সুনিদৃষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে আসামিদের উপস্থিতি থাকা সত্বেও মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিদের ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। পুলিশের সাথে সখ্যতা থাকার কারনে আসামিরা এবং স্থানীয় সবুজ, মনিরসহ অপরিচিত আরো কয়েকজন তাকে মামলা তুলে নেয়ার হুমকি প্রদান করছে। গ্রেফতারী পরওয়ানাভুক্ত আসামী ধরে ছেড়ে দেয়ার বিষয়ে যাত্রাবাড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান জানান, এই ধরণের কোন ঘটনা আমার জানা নাই। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তবে জোছনা বেগমের করা মামলার প্রত্যেক আসামিদের অতিসত্বর গ্রেফতার করা হবে বলেও জানান তিনি।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.