অবন্তি ভয়ানক খেপে গেল। জমিলাকে সে পাঠিয়েছিল লিওটাকে ফেরত আনতে, ফকিরনির ছেলেটা দিল না, এমনকি টাকা সাধার পরেও না। অবন্তির জিদ চেপে যায়। যেভাবেই হোক লিওকে ঐ ফকিরনির ছেলেটার কাছ থেকে সে সরাবেই।
বুদ্ধি খুলতে দেরী হয় না।
পরদিনই অবন্তি দোকানে গিয়ে ইঁদুর মারা বিষ কিনে আনে। তারপর পরীার হলে এমাথা থেকে ওমাথা গার্ড দেয়া স্যারদের মতো কেবল ঘর-বারন্দা বারান্দা-ঘর করতে লাগল। তক্কে তক্কে থাকল কখন ফকিরনির বাচ্চাটা খুপরি ছেড়ে বাইরে যায়। দুপুরের দিকে সুযোগটা এসে গেল। খুপরির বাইরে তখন কেবল কুকুরটা আর লিও।
অবন্তি দৌড়ে গেল ডাইনিংরুমে। কয়েক পিস পাউরুটির সাথে মেশাল বিষ, সবশেষে একটু গুড়ো দুধের প্রলেপ।
বারান্দা থেকে রাস্তার ওপাশের খুপরিটা বিশ-পচিশ গজ দূরে। অবন্তি প্রথমে একটা পিস ছিঁড়ে ছিঁড়ে রাস্তায় ফেলে। কাজ হলো।
লিও খাওয়া দেখতে পেয়েই ুধার্তের মতো দৌড়ে আসে। কিন্তু খেতে গিয়ে একটু শুকে কী মনে করে উপর দিকে তাকাল। অবন্তিকে দেখে কেমন যেন দ্বিধা করল। তবে খাওয়া শুরু করতে দেরি হলো না। দুধের ছোঁয়া দেয়া রুটি গপাগপ গিলতে থাকে লিও।
উল্লসিত অবন্তি এক পিস এক পিস করে দ্রুত পাঁচটা পিস ছুড়ে মারে। এ লোভনীয় দৃশ্য দেখে খুপরির পাশে বাধা কুকুরটা রসি ছিড়ে রাস্তার এপারে আসার প্রাণপণ চেষ্টা করে আর চিকন গলায় অসহায়ের মতো কেউ কেউ করতে থাকে।
লিওর খাওয়া শেষ হলে অবন্তি তার হিটলারী সফলতায় গর্বিত হয়ে ঘরের ভিতর চলে আসে।
এক ঘণ্টা বাদে ড্রইংরুমে বসে দার্জিলিং-চা খেতে খেতে অবন্তি একটা মিহি কান্নার শব্দ শুনতে পায়। মুহূর্তে লাফিয়ে উঠে চলে যায় বারান্দায়।
খুপরিটার দিকে চেয়ে অবন্তি স্পষ্ট দেখতে পায় লিওর নিথর দেহটি। ফকিরনির ছেলেটা সে মরদেহ কোলে নিয়ে করুণ স্বরে কাঁদছে, আমার বন্ধুরে..।
দৃশ্যটা দেখে অবন্তির চোখ খুশিতে ঝিলিক দিয়ে ওঠে, আমোদে মনে মনে হাত তালি বাজায়। বিড়বিড় করে ছেলেটার উদ্দেশে বলে, দ্যাখ ফকিরনির বাচ্চা, আমি যা চাই করি, আমি কখনো হারি না।
মে-অ-ও, মে-অ-ও..।
বেশ রাত। অবন্তি শক্ত করে শুভকে কোলবালিশের মতো জড়িয়ে ধরেছে। অনেকণ হলো শুয়েছে তারা। শুভ ঘুমিয়ে পড়লেও অবন্তির ঘুম আসছে না। যদিও বালিশঘুম তার, বিছানায় মাথা ছোঁয়ালেই হয়।
কিন্তু আজকে সে চোখ বুজতেই পারছে না। চোখ বন্ধ করলেই দেখে এক জোড়া হলুদ জ্বলজ্বলে চোখ তার দিকে কটমট করে তাকিয়ে। শুধু তাই নয়, আস্তে আস্তে হলুদ চোখের প্রাণী গরগর করে মৃদু আওয়াজ তোলে, মে-অ-ও, মে-অ-ও..। অবন্তি ভয় পেয়ে দ্রুত চোখ খুলে ফেলে। শুভকে প্রচণ্ড জোরে আঁকড়ে ধরে।
প্রায় ঘণ্টা দেড়েক ধরে এই চলছে। এর মধ্যে দুইবার শুভর ঘুম ভেঙেছে। তার ঘুম আবার পাতলা। এবার তিনবারের মতো ভাঙলে শুভর মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। অবন্তির হাত-পা-শরীর নিজের উপর থেকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়।
উহ, এতো জোরে চেপে ধরছো মনে হচ্ছে মেরেই ফেলবে। আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে বাবা। তোমার হয়েছেটা কী বলোতো?
অবন্তি গত দুবার কথাটা বলেনি, এবার সাহস করে জিজ্ঞেস করল, একটা বিড়াল ডাকছে, তুমি শুনতে পাচ্ছ?
কে ডাকছে? হতভম্ব শুভ ঘুমজড়ানো ভাঙা-গলায় ভয়ানকভাবে চোখ কুঁচকে তাকায়। বিড়াল? কই নাতো।
শুভ সন্দেহ-চোখে অবন্তির মুখ পড়তে চেষ্টা করে, তোমার কি মাথা-টাথা খারাপ হয়েছে? এই মাঝরাতে বিলাই ডাকবে কেন? আর ডাকলে ডাকবে, রাস্তাঘাটে বিলাই-কুত্তার তো অভাব নাই।
তোমার ঘুম তুমি ঘুমাও। যত্তসব! ঘুমাও। ধমকে শুভ ডানহাতে অবন্তিকে জড়িয়ে চোখ বোজে।
অবন্তি শান্ত ছোট্ট মেয়ের মতো মাথাটা শুভর কাঁধ ঘেঁষে বামহাতে তাকে ভালমতো আঁকড়ে ধরে। চোখ বুজে ঘুমাতে চেষ্টা করে।
কিন্তু খানিক বাদেই চোখের মধ্যে জ্বলে ওঠে সেই জোড়া হলুদ চোখ। ভয়ে চোখ খুলে ফেলে। সেই সাথে অবন্তি পেটে একটা ভীষণ চাপ অনুভব করে। বুঝতে পারছে নিম্নচাপ সারতে এখন তার বাথরুমে যাওয়া দরকার। তবে একা একা বাথরুমে সে কিছুতেই যেতে পারবে না।
মে-অ-ও, মে-অ-ও..।
একি? বাথরুম থেকে ডাকটা আসছে না? ওটা কি এখন বাথরুমে এসে বসে আছে? হায় আল্লা! অবন্তির শরীরটা প্রচণ্ড কেঁপে ওঠে, শুভকে জোরে আঁকড়ে ধরে সে।
ফাল্গুন ১৪১৩
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।