আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মেক্সিকান শিল্পী ফ্রিদা কাহলোর জন্মশতবর্ষ

সাহিত্যের সাইটhttp://www.samowiki.net। বইয়ের সাইট http://www.boierdokan.com

ফ্রিদা কাহলোর জন্ম হয়েছিল ১৯০৭ সালের ৬ জুলাই। ১৯৫৩ সালে মাত্র ৪৭ বছর বয়সে মারা গিয়েছিলেন। কিন্তু জীবিত অবস্থায় কাজের স্বীকৃতি খুব একটা পাননি। একক একজিবিশন হয়েছে মাত্র একবার, মেক্সিকোতে মৃত্যুর আগে ১৯৫৩ সালে।

প্যারিস ও নিউ ইয়র্কের আন্তর্জাতিক একজিবিশনে অংশ নিয়েছেন সাকল্যে দুই থেকে তিনবার। কিন্তু মারা যাওয়ার পর তাকে নিয়ে সমালোচক ও দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। তার ছবি ও জীবনের ব্যাপকতা নতুনভাবে ধরা দিয়েছে সবার চোখে। জীবিত অবস্থায় তার পরিচয় ছিল বিখ্যাত স্বামী মেক্সিকান মুরালিস্ট ডিয়েগো রিভেরার স্ত্রী হিসেবে। আর মৃত্যুর পর জানা গেল ফ্রিদার পরিচয়।

প্রচ- আত্মসচেতন, চিররোগা এ শিল্পী নিজের শারীরিক অসুবিধাকে জয় করে স্মরণীয় সব ছবি একে গেছেন। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন সমকালীন শিল্পীদের মধ্যে অগ্রগণ্য একজন শিল্পী হিসেবে। বলা হয়, পুরুষতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও দৃষ্টিভঙ্গির অসচেতনতার কারণেই যথাসময়ে তাকে চেনা যায়নি। ফলে যথার্থ কদরও মেলেনি। এ বছর ফ্রিদার জন্মশতবর্ষ।

বছর জুড়ে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে ফ্রিদাকে স্মরণ করছে মেক্সিকো। স্বাধীনচেতা, নারীবাদী ও কমিউনিস্ট শিল্পী ফ্রিদার পেইন্টিং, তার ছবি ও পরিবারের ছবি নিয়ে মেক্সিকো সিটিতে একটি প্রদর্শনী চলছে। এ প্রদর্শনীতে এমন কিছু পেইন্টিং ও আলোকচিত্র দেখানো হয়েছে যা আগে কখনোই দর্শকদের সামনে আসেনি। আবিষ্কৃত হয়েছে এক নতুন ফ্রিদা। সাধারণ মানুষের মধ্যে ফ্রিদার জনপ্রিয়তা ব্যাপক।

এতোটাই ব্যাপক যে, ফ্রিদার জন্য পাগলপারা এ অবস্থানকে ফ্রিদা ম্যানিয়া নাম দেয়া হয়েছে। মেক্সিকোর বাইরেও ফ্রিদা একজন জনপ্রিয় আইকন। ২০০২ সালে হলিউডে ফ্রিদার জীবন নিয়ে একটি মুভি রিলিজ হয়। এর আগে-পরে ফ্রিদাকে নিয়ে ডকুমেন্টারি ও ডকুফিকশনাল মুভি তৈরি হলেও জুলি টেমোর পরিচালিত এ মুভিটির কালারফুল উপস্থাপনা সব কিছুকে ছাড়িয়ে গেছে। ফ্রিদার জীবনের একটি বিশ্বাসযোগ্য ফিকশন হিসেবে একে স্বীকৃতি দিয়েছেন সমালোচকরা।

এ মুভি শুধু ফ্রিদার জীবনের কাহিনীগুলোকেই চিত্রায়িত করেনি, তার বিভিন্ন ছবির বিষয় ও আকার পরিবেশ-পরিস্থিতিকে চমৎকারভাবে উপস্থাপন করেছে। এ মুভি থেকে দর্শকদের যে ধারণা জন্মায় তা বাস্তবের খুব কাছাকাছি। মুভি নিয়ে কিছু বিতর্ক উঠেছে। কিন্তু সব ছাপিয়ে সালমা হায়েক অভিনীত মুভিটিকে একটি ডকুমেন্টারির মর্যাদা দিয়েছেন দর্শকরা। আইকন হিসেবে এ মুভি তাকে সারা বিশ্বে নতুনভাবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে।

কি আছে ফ্রিদার জীবন ও ছবিতে? তার জীবনে আছে ছবি আর ছবিতে আছে জীবন। ফ্রিদার ছবির বিষয় : ফ্রিদা কাহলো। নিজেকেই একেছেন তিনি বারবার। ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে নিজেকেই উপস্থাপন করেছেন। নিজের বিভিন্ন অবস্থা ও মনোভাব ফুটিয়ে তুলেছেন।

ফ্রিদা কাহলোর পাশাপাশি আর যা নিয়ে তিনি ছবি একেছেন তার বিষয়ও ফ্রিদা কাহলো। তার ছবিগুলো একের পর এক সাজালে তার জীবনের পর্ব ও বাকগুলোকে সহজেই চিনে নেয়া যায়। তার চিন্তার গতিবিধি ও পরিবর্তন সম্পর্কেও একটা ধারণা পাওয়া যায়। ছবিতে তিনি নিজের রাজনৈতিক জীবন, সংসার, বন্ধু, নিজের শারীরিক ও মানসিক বেদনা সব কিছুই একেছেন। এতো আত্মসচেতন শিল্পী পুরো আর্টের জগতেই খুব কম।

মেক্সিকোতে যে শো চলছে তার একজন কিউরেটর সলোমন গ্রিমবার্গ বলেন, তিনি সম্পূর্ণ নিজের স্বভাবের প্রতি অনুরক্ত একজন শিল্পী। তিনি আর্টে এমন কিছু বিষয়ের প্রয়োগ ঘটিয়েছেন যা করার সাহস ইতিপূর্বে কোনো শিল্পী দেখাননি। তিনি নিজের অন্তর্লোকের বাস্তবতায় অনুপ্রবেশ করতে এবং এমনভাবে এর প্রকাশ ঘটাতে পারতেন যা দর্শকদের আলোড়িত করতো। তার কাজ এতোই ঝলমলে ও তাৎক্ষণিক যে শিল্পী হিসেবে তার কাজের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া অন্য কোনো উপায় থাকে না। তারা শুধু ছবিগুলোর সঙ্গে সেটে যেতে থাকেন।

শোর আরেক কিউরেটর রোক্সনা ভেলাকুয়ে মার্টিনেজ বলেন, আমরা এক অন্তর্গত ফ্রিদাকে উপস্থাপন করতে চেয়েছি। চেয়েছি তার প্রকাশভঙ্গির সব মাধ্যমের সঙ্গে দর্শকদের পরিচয় করিয়ে দিতে। ফ্রিদা অবিরাম প্রকাশশীল একজন নারী। সব মিলিয়ে তিনি একজন মহান শিল্পী। মেক্সিকো সিটির একজিবিশনে ফ্রিদার চিঠিপত্র, ডায়েরি পৃষ্ঠা প্রদর্শন করা হয়েছে।

এতে তিনি চিঠিতে বর্ণনা করেছেন মেক্সিকান বিল্পবের স্মৃতি, যা থেকে পরবর্তী সময়ে তার কমিউনিস্ট হওয়ার কিছু সূত্র পাওয়া যায়। ছোটবেলাতে তাকে পোলিও আক্রমণ করেছিল। আঠারো বছর বয়সে একটি ভয়াবহ বাস দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিলেন তিনি। এ নিয়ে তার বিখ্যাত ছবি দি এক্সিডেন্ট ও দি বাস। বাস এক্সিডেন্ট করেই ছোটবেলায় প্রচ- শারীরিক আঘাত পেয়েছিলেন।

প্রদর্শনীতে দেখানো হয়েছে এক্সিডেন্ট হওয়ার পর একটি মেয়ের ছবি ফ্রিদা স্টাডি করেছেন এমন নিদর্শন। সঙ্গে পুতুল, খেলনা বাস, খড়ের পাটি ইত্যাদি। এ প্রস্তুতির ব্যাপারটি সবাইকে ভীষণ অবাক করেছে। ১৯২৯ সালে কিউবিস্ট মুরাল শিল্পী ডিয়েগো রিভেরাকে বিয়ে করেন তিনি। বিয়ের পর এ দম্পতি বেশ কয়েক বছর নিউ ইয়র্কে থাকেন।

এ সময় রিভেরা সান ফ্রান্সিসকো, নিউ ইয়র্ক ও ডেট্রয়েটে মুরাল তৈরির কাজ পেয়েছিলেন। রিভেরা সম্পর্কের ক্ষেত্রে এলোমেলো ছিলেন। অন্য অনেকের মতো কাহলোর বোনের সঙ্গেও তার প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। অন্যদিকে ফ্রিদা একই সঙ্গে ছেলে ও মেয়ে উভয়ের সঙ্গেই সম্পর্ক গড়েছেন। তার বন্ধুদের মধ্যে একজন ছিলেন লিওন ট্রটস্কি।

স্টালিন বিরোধী পলিটিশিয়ান ও বিখ্যাত মার্কসিস্ট তাত্ত্বিক হিসেবে তিনি খ্যাতিমান। লিওন ট্রটস্কির ৫৮তম জন্মদিন উপলক্ষে তিনি নিজের মোহনীয় ভঙ্গির একটি ছবি একেছিলেন। এটি উৎসর্গ করেছিলেন ট্রটস্কির উদ্দেশে। ফ্রিদার কাজে রিভেরা উৎসাহ দিতেন বলে শোনা যায়। কিন্তু ফ্রিদার জন্য ডিয়েগো খুব অসহনীয় হয়ে উঠেছিলেন।

তিনি বলতেন, জীবনে তিনি দুটি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। একটি বাস অন্যটি ডিয়েগো। ডিয়েগো এ দুটির মধ্যে খারাপ। তার পেইন্টিং বারবার রিভেরার সঙ্গে তার সম্পর্কের বেদনাকে উপস্থাপন করেছে। এ রকমই একটি ছবি দি টু ফ্রিদাস।

এ ছবিটি তাদের ডিভোর্সের কিছু আগে ১৯৩৯ সালে আকা। ছবির বাম দিকে কনে রূপে ফ্রিদা। তার হৃৎপি- উন্মুক্ত ও রক্তাক্ত। ডানদিকে প্রতিদিনের ফ্রিদা। অনেক শক্তিশালী তার হৃৎপি- স্বাভাবিক।

তিনি ধরে আছেন রিভেরার শিশু প্রতীক। যা দ্বারা বোঝা যায়, তার সঙ্গে রিভেরার সম্পর্ক বিয়ের ওপর নির্ভরশীল নয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার পেইন কিলার খাওয়ার মাত্রা বেড়ে যায়। তিনি অসহনীয় শারীরিক যন্ত্রণাকাতর একটি পর্যায়ে পৌছেন। নিজের এ পরিস্থিতিকে অসম্ভব যতেœর সঙ্গে একেছেন তিনি।

গ্রিমবার্গ বলেন, ফ্রিদা বারবার নিজের জীবনকে সাজিয়েছেন। ভেঙে আবার নতুনভাবে বিন্যস্ত করেছেন। কারণ তিনি ধ্বংস হয়ে যাবেন বা প্রত্যাখ্যাত হবেন, এটা মেনে নিতে চাননি। এখন এটা ভাবতে অবাক লাগে কিভাবে এতো শারীরিক সীমাবদ্ধতা নিয়ে একজন শিল্পী এতো গভীর কাজ করেছেন। তার জীবনীশক্তির প্রচ-তা যে কোনো সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষকেও ভড়কে দিতে পারে।

ছবি, জীবন আর মতাদর্শ সব মিলিয়ে কাহলো দৃষ্টি কেড়ে নিয়েছেন মানুষের। কাহলোর সঙ্গে একটি শতবর্ষ তাই মানুষের কৌতূহল নিবারণ করার বদলে নতুন করে বাড়িয়েই তুললো। (নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এলিজাবেথ মালকিনের প্রবন্ধ অবলম্বনে) মাহবুব মোর্শেদ

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।