যারা উত্তম কে উচ্চকন্ঠে উত্তম বলতে পারে না তারা প্রয়োজনীয় মুহূর্তে শুকরকেও শুকর বলতে পারে না। এবং প্রায়শই আর একটি শুকরে রুপান্তরিত হয়।
প্রাক কথন: গ্রিক উপকথায় ‘প্যারিসের বিচার’ নামে একটি গল্প আছে। গল্পটি চমৎকার। দেবী ডিসকর্ডিয়া তৈরি করে একটি সোনার আপেল।
তার উদ্দেশ্য ভালো ছিলনা, সে চেয়েছিলো জুনো, প্যালাস এবং ভেনাস নামক তিন দেবীর মধ্যে বিরোধ বাধাতে। সে ওই আপেলটির গায়ে, ‘যে দেবী সবচেয়ে রূপসী সে পাবে এ –আপেল’ কথাটি লিখে আপেলটি ফেলে দেয় জুনো, প্যালাস এবং ভেনাসের সামনে। তিনজনই নিজেকে রূপসী ভাবে এবং কামনা করে আপেলটি। তাই তারা বিচারক মানে রাজপুত্র প্যারিসকে। তারা বলে, আপনি যাকে সবচেয়ে রূপসী বিবেচনা করেন, তাকে দিন এ-আপেলটি।
প্যারিসকে একেক দেবী একেক লোভ দেখায়। প্যারিস ভেনাসকে দেয় আপেলটি। এ নিয়ে প্যারিস জড়িয়ে পড়েছিল মহাসংকটে।
ঘটনাক্রমে সামহয়্যার ইন কিংবা আউটকে যদি আমরা প্যারিস বলে ধরে নেই তাহলে তিন দেবীদের অবস্থানকেও আমরা এভাবে অনুমান করতে পারব। কিন্তু আহা গ্রিক উপকথার মত সরল যদিহোত আমাদের এ সময় ।
আর প্যারিসের মত একটা আপাত ইন্নোসেন্ট ইমেজ যদি সামহয়্যার ইন কিংবা আউট এর থাকতো। এরপর বাকি রইল অনেকগুলো মেধাবী পাঠক লেখক প্রো এ্যাকটিভ মানুষজন। যে সকল কীর্তি কলাপ ইদানিং সামহয়্যার ইন কিংবা আউট এর নিত্য অভ্যাস হয়ে দাড়িয়েছে তাতে সন্দিহান নয় আসলে অনেকটা নিশ্চিত হওয়া গেছে কেনই বা প্যারিস ভেনাসকেই আপেলটা দিলেন। ঘটনা যে আলুর দোষের তা অনেক আগেই স্পষ্ট। কিন্তু আমার জানার দরকার হয়েছিল আদৌ জুনো, প্যালাস বা অন্যান্যরা আপেলের জন্য ঝাঁপ দিয়েছিলেন কিনা।
খুবই সুখী হয়েছি একথা জেনে যে তারা ডিসকর্ডিয়ার চালাকীর ধারও ধারেননি বরং ব্লগ ছেড়েই চলে যেতে শুরু করেছেন। তা তারা যেতেই পারেন, আর এখানেই ভেনাসের সাথে এবং সেই সময়ের সাথে এই সময়ের পার্থক্য। আপাত দৃষ্টিতে একটা নিক, একটা ইমেজ, একটা ভার্চুয়াল ব্যাক্তিত্ব হারিয়ে গেলে তেমন কোন ক্ষতি হয়না আবার কিভাবে জানি হয়ও। খুবই বিশ্বাসীদের, বিশেষত যারা ইমেজ নির্ভর ধর্ম এবং রাজনীতি চর্চায় মগ্ন তাদের কাছ থেকে বুদ্ধ, মোহাম্মদ,খ্রীষ্ট বা রাসপুতিন বা হিটলাকে সরিয়ে দিন দেখবেন তারা হাহৃতাশ করে বুক চাপড়াতে চাপড়াতে মারা যাবে। তবে নিশ্চিতভাবে এ ঘটনা ঘটবে ইমেজ অন্ধদের।
কিন্তু প্রশ্ন থাকে যে আমাদের কেউ কি একেবারে ইমেজ মুক্ত? কোন ব্যাক্তিতে হয়ত নন কিন্তু ধারণায়? আমার মনে হয় কেউই নন। স্পষ্টভাবে আমি নিজে তো নয়ই। তবে আমি অন্ধ নই কেননা আমি প্রশ্ন করতে থাকি। যদিও মানুষ হিসেবে একইসাথে আমাদের আছে ইমেজ পূজা করা বা ইমেজ ভাঙ্গার প্রবণতা। ইতিহাস বলে দ্বিতীয় দলে লোক সবসময়ই কম।
কি সৃষ্টিতে, কি রাজনীতিতে, কি যাপণে, কি বিশ্বাসে, কি চর্চায়। তবে সবসময়ই ২য় দলের লোকজন ভবিষ্যৎমুখী এবং বোধকরি অনেক বেশি প্রতিভাবান।
ব্লগের নিকের পেছনের মেধাবী মানুষগুলোর মধ্যে অনেকেই আছেন ২য় দলে তবে সংখ্যায় বরাবরের মতই কম। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিলে আমি সামহয়্যার ইন কিংবা আউটকে ২য় দলের জন্য সহায়ক বলে আগে থেকেই মানতে পারিনা। ৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধ কিন্তু প্রথম দলের স্বাভাবিক ইতিহাস বিকাশের ফল নয় বরং অবশ্যই ২য় দলের মানুষজনের কাজ।
আর এসময়টাও রাজনৈতিকতা মুক্ত সময়ও নয়। কিন্তু একটি বিস্মৃতিপ্রবণ জাতি হিসেবে আমরা বারবার ভুলে যেতে পছন্দ করি আমাদের প্রতিভাদের এবং আঁকড়ে ধরি মাঝারিদের। আর মাঝারিরা সবসময়ই সুযোগসন্ধানী ক্ষমতালোভী আধিপত্যপরায়ণ। বাংলাদেশ স্বাধীন না হলে একজন কুত্তার বাচ্চা নিজামী একজন বেজন্মা বাংলা ভাইয়ের এত ফালাফালির সুযোগ ঘটতোনা। যেমন বিস্মৃতিপ্রবণ না হলে সুযোগ ঘটতো না একজন খালেদাহাসিনাএরশাদের ক্ষমতার চেয়ারে পশ্চাৎ দেশ ঠেকানোর।
তেমনি সুযোগ ঘটতো না একজন ইউনুসের নোবেল প্রাইজ বা উন্নয়নবাদী চামচা হিসেবে নিজেকে আত্মপ্রকাশের। এছাড়া ছুছিল মাদারচোদদের আঁতলামী ফলানোর জায়গাও থাকতো না তারা পাকিজেনারেলদের ১০০তম রক্ষিতার যৌনাঙ্গ চেটে চেটে কবিতা লিখতে থাকতো।
কিন্তু শুধু বিস্মৃতি প্রবণতা কাটিয়ে শেখমুজিব বা জিয়ার উপাসনা বন্দনাতে কাজ হয়না। করতে হয় সবচেয়ে প্রিয় বলে যা বোধ করি সেটারও সমালোচোনা। আর তাতেই ভিত্তি শক্ত হয় আর তাতেই আত্মনির্ভরশীল হওয়া যায়।
সামহয়্যার ইন কিংবা আউটের সা¤প্রতিক বালখিল্যতা মোটেও অকস্মাৎ নয় বরং প্রত্যাশিত। এমনকি ভালো পুঁজিবাদী হলেও সে বিতর্ককে জিইয়ে রাখতো পাঠক সংখ্যা ও প্রচার বাড়ানোর জন্য। এখানেও একটা বিষয় উল্লেখ্য....এক হাজার আবাল পাঠকের চাইতে একজন মেধাবী ব্লগার পুঁজিগতভাবে বেশি লাভজনক ও সাশ্রয়ী। আমার ধর্ম, আমার নারীবাদ, আমার স্বাধীনতা, আমার রাজনীতি এই জাতীয় ধারণা প্রায়শই কনটেক্সক্টকে ভুলে যাবার প্রবণতাকেই সামনে হাজির করে। আর তাই আদিবাসী আত্মপরিচয় নিয়ে কাজ করতে যেয়ে আমি দেখি এমন একজন গারো মুক্তিযোদ্ধাকে যে তথাকথিত শহুরে বুদ্ধিজীবির চাইতে দেশকে অনেক বেশি ভালোবাসে।
আবার এও দেখি দেশপ্রেম ধর্ম নিয়ে আমার আমার খেলায় পাকিদের মতই সাচ্চা মুসলমান খোঁজার আশায় কাদিয়ানী হত্যা, ‘আদিবাসী’ উচ্ছেদ ও নিধন, হাজারে হাজারে হিন্দু মহিলা ও শিশু ধর্ষণ, হত্যা ও দেশান্তর। তখনই প্রশ্ন জাগে আসলেই এটা কার দেশ কাদের দেশ। সমগ্র মানবজাতির জন্য হলেও একজন নিরপরাধকে হত্যা করা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। মানবীয় আবেগ আর যুক্তির সীমানা এত সঙকুচিত নয়। কিন্তু এই সীমানাকে বাড়াতে হলে সবসময়ই প্রশ্ন করতে হয় শিখতে হয় শেখাতে হয়।
আর তাই আটকে পড়া বিহারী পাকিস্তানী মাত্রই আমার শত্র“ এ গল্প হাস্যকর। আবার একই ভাবে হাস্যকর রাজাকার শিবির জামাতের উদ্দেশ্য ধর্মপ্রচার রাজনীতি নয়।
আমি খুবই খুশি হতাম সত্যিই খুশি হতাম এটা জানলে যে পৃথিবীতে সব যুদ্ধ থেমে গেছে। কিন্তু যুদ্ধ নিয়ত তার সমস্ত শক্তি দিয়ে আমাদের মধ্যে বিরাজমান এমনকি আমরা না চাইলেও। ব্লগও এই কনটেক্সক্টের বাইরে নয়।
আর তাই রাজাকার শিবিরজামাত হাসিনাখালেদা বামডান শ্রেণীশত্র“ প্রবাসীবাঙলাদেশী আস্তিকনাস্তিক নারীমুক্তিপুরুষতন্ত্র প্রযুক্তি কম্পুকানা সবই এর মধ্যে বিরাজমান। আর তাই এখনো গল্পটা নিজের বনাম অপরের । এখানে সৃষ্টিশীল মানুষ আছে বলেই সামহয়্যার ইন কিংবা আউটকে নিয়ে বই প্রকাশিত হয়, প্রাপ্তিরা বেঁচে ওঠে, রাজাকার চিহ্নিত হয়।
দেরিদার একটা কথা আমি এখন পর্যন্ত যথার্থ মনে করি সেটা হল একটি স্বর সবসময়ই অন্য স্বরকে খারিজ করে, দূরে ঠেলে। আর তাই মোটাদাগে মুক্তিযোদ্ধা বনাম রাজাকার, আস্তিক বনাম নাস্তিক ইত্যাদি বিতর্ক সবসময়ই বিরাজমান থাকবে।
যুক্তি তর্ক বিতর্ক জ্ঞান প্রশ্ন কৌশলগত মানবতা সবকিছুর জন্যই প্রয়োজনে নিজের স্বরকে ছাড় দিয়ে অন্যের স্বরকে সামনে আনতে দেয় কেবল ভবিষ্যৎমুখীরা। এটা নিশ্চিত ভাবেই তথাকথিত প্রযুক্তি প্রযুক্তি ভালো ভালো এবং পেছনে পেছনে শিবির শিবিরদের মূল দর্শনে পড়েনা। তবে তারাও শেখে এবং মজার ব্যাপার হল অনেক গোছানো ভাবে শেখে কারণ আবিষ্কার করার ক্ষমতা তাদের থাকেনা থাকে অনুকরণ করার। আর সবই ঘটে বরাবরের মত ক্ষমতাকে ঘিরে। তবে টিকে থাকার গল্পে বেদনাদায়কভাবে সবাই একই প্ল্যাটফর্মে থাকে আর তাই দেখা যায় জ্ঞানীদের কাজ করতে হচ্ছে মাঝারীদের তত্ত্বাবধানে।
আর এমনটা ঘটলে এর মাশুল দিতে হয় সারা জীবনভর এবং দিতে হয় সাধারণ মানুষদেরই।
ব্লগ ছেড়ে চলে যাওয়া তাই আমার কাছে অনেকটাই রোমান্টিক স্বপ্নের মত। কিন্তু এই স্বপ্নটাকে দেখার মত লাক্সারী আমি এখনি নিতে চাইনা কেননা ফাঁকা বাগান পেয়ে অনেক ছাগলই এখন ঘাস খেয়ে বেড়াচ্ছে এবং আনন্দ করছে একথা ভেবে যে এবার তারা গোলাপ বাগানে ঢুকে বাগান নষ্ট করতে পারবে। এমনকি তারা গরমের দিনের আমও খেতে চাচ্ছে আর এজন্য আমগাছে চড়ার চেষ্টায় অনবরত লাফ দিয়ে যাচ্ছে। সামহয়্যার ইন কিংবা আউটের পাটাতনে এখন অনেকের মলত্যাগেরও ইচ্ছে না জাগলেও জাগতে পারে তবে ছাগলের নাতিতে পা হড়কে পড়ে যাবার আগেই আমি ছাগলের বারবিকিউ খাওয়াকেই বেশি পছন্দ করব।
আসলে শত বিস্মৃত হলেও বাঙালীর ভূড়ি ভোজনের অভ্যাসটা এখনো রক্তে রয়ে গেছে বোধহয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।