যখন বিকাল হতে থাকে, হতে হতে সূর্যটা ঢলে পড়ে, পড়তে থাকে
১.
রাতুলের কাছে প্রসংগটা তুলতে হবে। সারারাত না ঘুমিয়ে রুবিনা আর সাজ্জাদ সকালবেলা হাঁটতে বের হয়েছে। এটাই তাদের শেষ সকাল। অনেক কথা হয়েছে রাতভর। দু'জনের প্রতি ভালোবাসাও আছে অটুট।
কিন্তু সেই রোমাঞ্চটা নেই। রুবিনা আসক্ত বিপ্লবের প্রেমে। সাজ্জাদ মজেছে মারিয়ায়। এটা চলছিল অনেকদিন। সাজ্জাদ জানতো রুবিনার পরকীয়া, কিন্তু রুবিনা নিশ্চিত হতে পারে নি সাজ্জাদের মারিয়া আসক্তি।
দু'জন অপ্রীতিকর প্রসংগ নিয়ে কথা বলতো না। অফিস থেকে ফিরে রাতুলের হোমটাস্ক আর ঘরোয়া ফর্দ নিয়ে দু'জনের টাইম পাস হতো ভালই। টিভিতে হিন্দি সিরিয়াল আর রাজনীতি, সাহিত্য নিয়ে আলাপে একঘেয়েমীতাটুকু দূর হয়ে যেত। দু'জন ঘরে ফিরে আর ফোনের কাছে ঘেসতো না, তবে দুজনের মধ্যে শারিরীক সম্পর্কও হতো না তেমন। কদাচিত ভুল করে মাঝরাত্রিতে দু'জন মেতে উঠতো অভ্যাসবসে, কিন্তু তাতে তেমন সোহাগ থাকতো না।
২.
রাতুল ফোর্থ গ্রেডে। সকালে বাবামা'র সাথে খুনসুটি করে তার সময় কাটে। স্কুলে যাবে তো কোচিং এ যাবে না। দুধ খাবেতো নাস্তা করবে না। বাবার সাথে স্কুলে যাবে, তবে আইসক্রীম না দিলে মা'এর সাথে ফেরবে বলে গো ধরতো।
আজকে সকালে তার স্কুল নেই। ঘুম থেকে ওঠাতে বাবামা'ও পিছে পড়বে না জানতো সে। কিন্তু হঠাৎ মায়ের হাত চুলের গোছায় স্পর্শ পায়। রাতুলের ভাল লাগে। মা বলে, যাদু, উঠে পড়ো, তোমার বাবা কিছু জরুরী আলাপ করবে তোমার সাথে!
রাতুলের জানা কথা বাবার জরুরী আলাপ।
আজকে বন্ধুদের ফ্লাটে যাবে না, সায়ন, রাই কে বাসায় নিয়ে এসে খেলবে। নতুন গেমসটার জয়স্টিক দারুণ। বাবার পুরো আয়োজন কিভাবে রাতুলকে ঘরে বেশী বেশী রাখা যায়।
ওঠো বাবা! রুবিনা এবার কপালে একটা চুমু দেয়। রাতুল মাকে জরিয়ে ধরে।
ছেলেটা দিনদিন বড় হয়ে গেল, ভাবতে ভাবতে রুবিনার বুকটা ভরে ওঠে। কেমন বুকের মধ্যে মুখ গুঁজে থাকে।
৩.
সাজ্জাদ ছেলেকে খুঁজে পায় বাথরুম থেকে বের হতেই। হাতে টাওয়েল, পাজাকোলো ছেলেটিকে কোলে নিয়ে তাদের শোবার ঘরে ঢোকে। রাতুল বাবার পাগলামী জানে।
এখন সে অনেক বড় হয়েছে। বয়স বারো। একা একা চিটাগং ঘুরে এসেছে মামাদের সাথে। বাবা কোলে তুললে তাকে পিচ্চিটাই লাগে। সাজ্জাদ ছেলের মাথা মুছে দিতে দিতে বলে, আজকে তোমার কি চাই আমাকে বলো! সব কিনে দেব!
রাতুল যেন আকাশের চাঁদ হাতে পায়।
এত উদার হতে তার বাবাকে কখনও দেখেনি। তার চোখ আকাশে ওঠে। বলে, কর্নিকের ভিডিওটা কিনে দেবে? আর ঐ যে সেদিন নতুন একটা এনিমেশন মুভি দেখলাম, টারটুকুস!
বাবা হেসে বলেন, দেবরে দেব, তোর মুভি দেখার বাতিক গেল না! কত বড় হয়েছিস খেয়াল আছে?
রাতুল লাফ দিয়ে খাটে উঠে বাবাকে ছাড়িয়ে যায়। তারপরে গলা ধরে দাড়িয়ে বলে, দেখো বাবা, তোমার চেয়েও এক ফিট উঁচু আমি!
৪.
রাতুল ট্রাউজার আর মিনিগেঞ্জি পড়ে রেডি। বসার ঘরে মায়ের হাতে বিশাল একটা লিস্ট।
বাবা রাতুলকে নিয়ে রুমে ঢোকে। রাতুলের মুখটা গম্ভীর। বাবা তাকে বলেছে কিছুদিনের জন্য মা'র কাছে থাকতে। মা অন্য বাসায় চলে যাবে। রাতুল, মা'র কাছে এসে কোল ঘেসে বসে।
বলে, মা, তোমাদের দু'জনের কি আড়ি হয়েছে?
সাজ্জাদ আর রুবিনা চোখাচোখি করে। তারপরে হেসে উঠে রুবিনা বলে, আরে না বাবা!
রাতুলের সন্দিগ্ধ প্রশ্ন, তাহলে?
সাজ্জাদ এসে তার পাশে বসে। ছেলের হাতটা নিজের হাতে নিয়ে বলে, শোন রাতুল, বাবা মা'রা সবসময় একত্রে থাকে তুমি দেখেছো, কিন্তু মাঝে মাঝে তাদের আলাদাও থাকতে হয়। জঙ্গল কুইনে দেখেছো না, ছোট্ট লরেলের মা ছেড়ে গিয়েছিল তাকে, অনেক দূরের গ্রামে খাবার আনতে গিয়ে আর ফেরেনি!
রাতুল বাবার কথা কেড়ে বলে, কিন্তু সেজন্য তো আমি অনেক কেঁদেছি!
রুবিনা ছেলের মাথাটি বুকে তুলে নিয়ে বলে, তুমি কেঁদেছো কিন্তু লরেলের মা তো তাকে ভুলে যায় নি! অনেকদিন পরে কত খাবার নিয়ে এসেছিল! এই যে তোমার বাবা সারাদিন অফিসে যায়, তুমি কি তার সাথে যাও? আমি কি যাই?
রাতুল এবার মা'কে পাল্টা যুক্তি দেখায়। কিন্তু বাবা তো রাত্রে ঠিকই চলে আসে!
রুবিনা এবার অসহায় হয়ে পড়ে।
সাজ্জাদকে বলে, তুমি এবার বোঝাও!
৫.
সাজ্জাদ ও রুবিনা কোনভাবেই ছেলেকে বোঝাতে পারে না। তাদের নিজেদের আলাদা থাকাটা ছেলেটা উলটো প্রমান করে দিচ্ছে। তার বক্তব্য, আমি দুজনকেই সকালবেলা চুমো দেব! বাবাকে চুমো দিয়ে আমি যদি মা'কে না দেই, তবে নিশ্চয়ই মা তখন রাগ করবে!
রুবিনা ও সাজ্জাদ নিজেদের মধ্যে কথা বলে। সাজ্জাদ বলে, আমাদের এভাবে যাপন করলে কি কোন অসুবিধা আছে?
রুবিনা একটু চুপ থেকে বলে, কিন্তু বিপ্লব চাচ্ছে, ওর সাথে আমি সংসার শুরু করি, সে এখনই বাচ্চা নেবার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। তাছাড়া মারিয়া কি মেনে নেবে?
সাজ্জাদ মাথা চুলকায়।
এসব বিষয় নিয়ে সাজ্জাদ আগে কখনও কথা বলেনি। ইদানিং মারিয়া কিছুই শুনতে চায় না। তার সারক্ষণ সাজ্জাদকে চাই!
মেনে নেব না হয়তো। কিন্তু আমাদের মনে হয় সবাই একত্রে বসা উচিত!
রুবিনা বলে, সেটা কি ওরা বসতে চাইবে?
সাজ্জাদও নিশ্চিত নয়, তারপরেও ভাবে চেষ্টা করে দেখতে অসুবিধা কি!
৬.
সাজ্জাদ রুবিনা পাশাপাশি বসে আছে। মারিয়া এসেছে।
সিংগেল একটা সোফায় বসে আছে। একটু পরে বিপ্লব এলো। এই প্রথম সাজ্জাদ বিপ্লবকে দেখলো। রুবিনা মারিয়াকে দেখে, টুকটাক হাই হ্যালো করেছিলো। বিপ্লব আসতেই সাজ্জাদ উঠে গিয়ে হ্যান্ডশেক করলো।
বিপ্লব একটু অস্বস্তিতে ভুগছে। সে অবশিষ্ট সিংগেল সোফাটাতে বসে টাইয়ের নটটা আলগা করে। তারপরে বলে, আসলে আমি একটু অস্বস্তিতে ভূগছি, পুরো বিষয়টাই একটু স্পর্শকাতর বলে!
সাজ্জাদ হেসে উড়িয়ে দেয়। আরে না না। আমরা নিজেরা বিষয়টা নিয়ে ভেবেছি।
সমস্যা হচ্ছে বাচ্চাটা আমাদের কাউকে ছাড়তে চাচ্ছে না।
মারিয়া বলে, কিন্তু ওর কথা শুনলে তো হবে না! আমাদের নিজেদের ভালর জন্যই ওকে যেকোন একজনের সাথে তো যেতে হবে!
রুবিনার চোখে বিদ্যুত চমক দিয়ে ওঠে। মারিয়াকে তার স্বার্থপর মনে হয়! বিপ্লব মারিয়ার কথা মানতে পারে না। বলে, কিন্তু ছেলেটির ইচ্ছের দিকে বেশী খেয়াল দেয়া উচিত!
মারিয়া বলে, কেন? রাতুলকে একটা সিদ্ধান্ত মেনে নিতেই হবে।
বিপ্লব বলে, কিন্তু ওকে কিছু চাপিয়ে দেয়া ঠিক হবে না।
সাজ্জাদ ও রুবিনা কোন কথা খুঁজে পায় না।
৭.
রাতুলের বাবা মা হাত ধরে বসে আছে। দুজনের মনেই ঝড় উঠেছে। রাতুল তার বন্ধু রাইএর বাসায় খেলতে গেছে। বিপ্লব ও রুবিনা চলে গেছে কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই।
পরে আবার বসবে তারা। সাজ্জাদ হঠাৎ হেসে ওঠে। রুবিনার হাতে মৃদু চাপ দিয়ে বলে, বিপ্লবের চেহারাটা কেমন যেন!
রুবিনা চমকে তাকায় তার দিকে। কেমন?
সাজ্জাদ বলে, আমার ভাল লাগেনি, কেমন নার্ভাস টাইপের। তুমি কি মনে করে তাকে পছন্দ করলে!
রুবিনা সাজ্জাদের পিঠে হালকা একটা চড় মেরে বলে, তোমার মারিয়াকে দেখলাম তো! কি এমন রূপ তার আমার চেয়ে! ঠোটটা কি পুড়ু! তুমি কি ঐ ঠোঁটে চুমু খেয়েছো!
সাজ্জাদ শ্রাঘ করে।
রুবিনাকে বলে, দ্যাখো, তুমি কিন্তু অসম্মান করছো! ঠোঁট যেমন হোক, চুমু তার সুস্বাদু, তোমার মত কাঠ কাঠ নয়!
রুবিনা হাসে। কেমন সুস্বাদু! এই বলে সাজ্জাদের ঠোঁটে রুবিনার ঠোঁটে চেপে বসে।
রুবিনার কাঠকাঠ ঠোঁট সাজ্জাদের কাছে ক্রমশ সুমিষ্ট হয়ে ওঠে। তার মনে হতে থাকে এমন ঠোঁটের জন্য মারিয়াকে কোরবানী দেয়া যায়।
রুবিনার শরীর ছেড়ে দেয়।
হঠাৎ করে সব দুশ্চিন্তা দূর হয়ে যায়। রাতুলের জন্য বিপ্লবের আহবান তার কাছে ফিকে হয়ে আসে ক্রমশ।
চমৎকার তো এই চুমুটা!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।