আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অবশেষে বাংলাদেশে ফিরছে আফরোজা

সাড়ে চার বছর আগে বাংলাদেশ থেকে বেআইনি পথে মায়ের সঙ্গে ভারতে গিয়ে আটক হওয়া সেই আফরোজা খাতুন (১২) অবশেষে দেশে ফিরে আসছে।
আগামীকাল শনিবার সকালে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) অতিরিক্ত মহাপরিচালক বিডি শর্মা আফরোজাকে নিয়ে বাংলাদেশে আসবেন।
বিডি শর্মার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, কাল (শনিবার) সকালের ফ্লাইটে তিনি আফরোজাকে নিয়ে ঢাকা যাচ্ছেন। এরপর তিনি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক লে. জেনারেল আজিজ আহমেদের কাছে আফরোজাকে তুলে দেবেন।
আফরোজা এত দিন পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার রানাঘাটের হলিচাইল্ড হোমে বিডি শর্মার তত্ত্বাবধানে ছিল।


গত ২৫ জুলাই ‘প্রথম আলো’র শেষের পাতায় ‘কোথায় যাবে আফরোজা’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। সে সময় আফরোজা তার ছোট্ট জীবনের করুণ কাহিনি বর্ণনা করেছিল এভাবেই:
‘বাবা মো. আকরাম হোসেন থেকেও নেই। মা মনোয়ারা বেগম বেঁচে থাকতেই আরেকটি বিয়ে করে বাবা। তারপর একদিন মা মনের কষ্টে আমাকে আর আমার বড় ভাই মুন্না পারভেজকে নিয়ে বেআইনি পথে দালাল মারফত হিলি সীমান্ত দিয়ে ভারতে ঢোকে। তারপর কলকাতা হয়ে দিল্লি।

সেখানে আমরা উঠি আমাদের এক দূর সম্পর্কের খালার কাছে। কিন্তু বেশি দিন থাকতে পারি না। মা অসুস্থ হয়ে পড়ে। দিল্লিতে মায়ের চিকিত্সার পর আমরা দেশের বাড়িতে ফিরে আসার জন্য চলে আসি শিলিগুড়িতে। সেখান থেকে চলে যাই বালুরঘাট সীমান্তে।

সেদিন প্রচণ্ড বৃষ্টিতে আমরা আটকে পড়ি বালুরঘাট সীমান্তের কাছে।
‘২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসের সেই দিন আমাদের তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আমাদের ঠাঁই হয় বালুরঘাট জেলা কারাগারে। বালুরঘাট আদালতে বিচারে মাকে দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার রুপি জরিমানা করা হয়। আর আমার দাদা নাবালক বলে তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বালুরঘাটের শুভায়ন হোমে।

আর আমাকে মায়ের সঙ্গে পাঠিয়ে দেওয়া হয় মুর্শিদাবাদের বহরমপুরের কারাগারে। কিন্তু আমার অসুস্থ মা ২০০৯ সালের ১৩ অক্টোবর কারাগারেই মারা যায়।
‘মায়ের মৃত্যুর পর আমরা অসহায় হয়ে পড়ি। আমি বহরমপুর কারাগারে আর দাদা বালুরঘাট হোমে। আমাদের দুর্দশার কথা শুনে পশ্চিমবঙ্গের পুলিশের কর্মকর্তা (অতিরিক্ত মহাপরিচালক এবং আইজি-কারাগার) বিডি শর্মা দুই ভাইবোনের স্থানীয় অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব নেন।

সরকারের অনুমতি নিয়ে পাঠিয়ে দেন রানাঘাটের এই হলিচাইল্ড হোমে। শর্মা স্যার নিয়মিত আমার খোঁজ নেন। এখানে আসেন। আমাকে আদর করেন। ’
সে সময় আফরোজাকে জিজ্ঞেস করা হয়, দেশে যাবে না? উদ্বিগ্ন হয়ে বলে, ‘কোথায় যাব আমি? কোনো আত্মীয়স্বজন আমার কোনো দিনই খোঁজ নেয়নি।

বড় ভাইও ফিরে গিয়ে কোনো খোঁজ নেয় না। কোথায় থাকব? কী করব? দেশে ফিরে যেতে হলে আমি এখান থেকে মাধ্যমিক পাস করেই যাব। তখন হয়তো আমি দাঁড়াবার একটা পথ খুঁজে পাব। ’
বিডি শর্মা এখন বিএসএফের অতিরিক্ত মহাপরিচালক। সে সময় তিনি জানিয়েছিলেন, আফরোজার মা মারা যাওয়ার পর তিনি বিষয়টি রাজ্য মানবাধিকার কমিশনে জানালে তারা আফরোজা এবং তার দাদা মুন্না পারভেজকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেড় লাখ রুপি করে দিয়েছে।

আফরোজার দাদা মুন্না পারভেজকে ২০১১ সালের ২৪ আগস্ট বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। আর আফরোজা এই হলিচাইল্ড হোমে। ওর দেড় লাখ রুপি একটি ব্যাংকে জমা রাখা হয়েছে। সেই অর্থ বেড়ে হয়েছে এক লাখ ৬৪ হাজার রুপি। তিনি আরও জানিয়েছিলেন, তিনি আফরোজাকে দেশে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য উদ্যোগী হয়েছেন।

এ ব্যাপারে অনুমতিও মিলেছে। কিন্তু কার হাতে তুলে দেবেন? বিডি শর্মা চান, আফরোজা আরও লেখাপড়া শিখে দাঁড়াক। ফিরে পাক তার বাঁচার পথ। তাই তিনি বাংলাদেশের বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদের কাছে একটি চিঠিও দিয়েছিলেন।
আফরোজাকে নিয়ে ইতিমধ্যে একটি তথ্যচিত্রও তৈরি হয়েছে।

বিদেশেও সেটি প্রদর্শিত হয়েছে। প্রযোজনা করেছেন কলকাতার গৌরাঙ্গ জালান। পরিচালক শুভ্রজিত্ মিত্র। তথ্যচিত্রে এই হোমে থাকা আরও তিনটি কিশোরীর জীবনযুদ্ধ চিত্রিত হয়েছে।
আফরোজার জন্ম বাংলাদেশের নাটোর জেলার নালডাঙ্গা থানার দাসপাড়া গ্রামে।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।