আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইন্টারপোলের রেড নোটিশে ৬৯ বাংলাদেশির নাম

andharrat@জিমেইলডটকম

মাসুদুল আলম তুষার যায়যায়দিন ২০.০৫.২০০৭ বাংলাদেশি ৬৯ নাগরিকের বিরুদ্ধে জারি হয়েছে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ। মোস্ট ওয়ান্টেড হিসেবে পুলিশের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি এ তালিকার অনেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রকাশ্য জীবন-যাপন করছে। বন্দি বিনিময় চুক্তির অভাবে কার্যত এ অপরাধীদের গ্রেফতারে কোনো দেশের সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পুলিশের আন্তরিকতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। চরমপন্থী নেতাসহ অনেক দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীর নাম রেড নোটিশভুক্ত করা হয়নি।

অথচ অতি সম্প্রতি কয়েক রাজনৈতিক নেতাকর্মীর নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর আগে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আসামি মেজর বজলুল হুদাকে থাইল্যান্ড থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা ছাড়া ইন্টারপোল বাংলাদেশ ইউনিটের আর কোনো সফলতার নজির নেই। এ মামলার অন্যতম আসামি মহিউদ্দিনকে বর্তমানে নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও দেশে ফেরত আনা যায়নি। আমেরিকার সঙ্গে বন্দি বিনিময় চুক্তি না থাকায় এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। একই কারণে ইনডিয়া থেকে ফেরত আনা যাচ্ছে না পুরস্কার ঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসী তানভীরুল ইসলাম জয়কে।

স্বরাষ্ট্র সচিব আবদুল করিম জানান, বাংলাদেশের সঙ্গে বন্দি বিনিময় চুক্তি না থাকায় ইনডিয়া কর্তৃপক্ষ শীর্ষ সন্ত্রাসী জয়কে আমাদের কাছে হস্তান্তর করতে পারছে না। তাকে কি কৌশলে দেশে আনা যায় তা এখনো স্থির হয়নি। কূটনৈতিক চ্যানেলে যোগাযোগ করা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর খুনি মহিউদ্দিনকে দেশে আনার চেষ্টাও অব্যাহত রয়েছে। আমেরিকার সঙ্গে বন্দি বিনিময় চুক্তি না থাকায় তাকে দ্রুত ফেরত আনা যাচ্ছে না।

পুলিশের ঊর্ধ্বতন অফিসারদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, ইন্টারপোল কোনো অপরাধী গ্রেফতারে সরাসরি সহযোগিতা করে না, কোনো দেশে ভিন্ন দেশের অপরাধী লুকিয়ে থাকলে তাকে শনাক্ত ও গ্রেফতারে পরোক্ষ সহযোগিতা করে। সন্ত্রাসীর অবস্থান সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিলে সে দেশের পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে থাকে। তবে সংশ্লিষ্ট দুটি দেশের মধ্যে বন্দি বিনিময় সংক্রান্ত চুক্তি না থাকলে এ ক্ষেত্রে অপরাধীকে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয় না। পুলিশ অফিসাররা আরো জানান, বর্তমানে বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো রাষ্ট্রের বন্দি বিনিময় চুক্তি নেই। তাই ইনডিয়াসহ অন্য দেশগুলোতে অবস্থানরত মোস্ট ওয়ান্টেডরা গ্রেফতার হলেও চুক্তি না থাকায় দেশে ফিরিয়ে এনে অপরাধীদের শাস্তির মুখোমুখি করা সম্ভব হচ্ছে না।

তাই ইন্টারপোলে কিছু অপরাধীর আংশিক ডেটা সরবরাহের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে বাংলাদেশ পুলিশের কার্যক্রম। প্রতিবেশী দেশ ইনডিয়ায় অবস্থান করছে বাংলাদেশের অনেক সন্ত্রাসী। সেখানকার পুলিশ অনেক সময় তাদের গ্রেফতারও করেছে। অতি সম্প্রতি শীর্ষ সন্ত্রাসী তানভীরুল ইসলাম জয়কে গ্রেফতার করলেও ইনডিয়া তাকে হস্তান্তরে সম্মত হয়নি। ইন্টারপোলে রেড নোটিশভুক্ত পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসীরা বর্তমানে ইনডিয়া, কানাডা, আমেরিকা, সুইডেন, ইটালি, সউদি আরব, মালয়শিয়াসহ কয়েকটি দেশে অবস্থান করছে বলে পুলিশের কাছে তথ্য রয়েছে।

ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে বর্তমানে রেড নোটিশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশি ৬৯ জন । তারা হলো পুরস্কার ঘোষিত শীর্ষ ২৩ সন্ত্রাসীর অন্যতম হারিছ আহমেদ, শামীম আহমেদ, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, জাহাঙ্গীর ফেরদৌস ওরফে কালা জাহাঙ্গীর, খন্দকার তানভীরুল ইসলাম জয়, মোল্লা মাসুদ, কামরুল হাসান ওরফে হান্নান, আমিনুর রসুল ওরফে টোকাই সাগর, ত্রিমতি সুব্রত বাইন, জাফর আহমেদ, আবদুল জব্বার, হাশেম, নবী হোসেন, জাহিদ রহমান, রবিন, জিসান, ইসলাম, শাহাদাত হোসেন, খোরশেদ আলম, শহর আলী, তৌফিক আলম, সানজিদুল ইমন, ওমর ফারুক কচি, চান মিয়া, মিন্টু, আতাউর রহমান, হাবিবুর রহমান, নাসিরউদ্দিন রতন, রোজেন, রফিকুল ইসলাম ওরফে কাজল, শহিদুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জের শামীম ওসমান, মতিউর রহমান, গোলাম সরোয়ার, নুরুল আমিন, নুর হোসেন, সেলিম মিয়া, সুমন, মাহতাব উদ্দিন, গোলাম রসুল সিকদার, তোফাজ্জল হোসেন সিকদার, ফেনীর কুতুবউদ্দিন হাজারী, স্বপন মালাকার, খুলনার চরমপন্থী নেতা আবদুর রশিদ মালিথা ওরফে দাদা তপন, শেখ হারুন, মনতোষ বসাক, শৈলেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, প্রশান্ত সরদার, সুলতান সুজিদ, লক্ষ্মীপুরের এ এইচ এম বিপ্লব মিয়া, চট্টগ্রামের আবদুল খালেক, বগুড়ার তুষার মাহমুদ, যশোরের শামীম কবির, ফিরোজ আলী, আবদুল আলীম, আমিনুর রহমান, ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের অস্ত্র ব্যবসায়ী ওয়ার্ড কমিশনার আনোয়ারুল আজিম আনার, লক্ষ্মীপুরের মরণচন্দ্র মজুমদার, ঝিনাইদহের মুসতাক আজিজ, চট্টগ্রামের আবদুল গনি, আলমগীর হোসেন, দুবাইয়ের ওয়ারেন্টভুক্ত রেসমত আলী, আবু ধাবির ওয়ারেন্টধারী এ কে এম এনামুল হক, মাসুদ করিম মাস্টার, ইনডিয়ার মহারাষ্ট্রের ওয়ারেন্টধারী কামরুজ্জামান ওরফে জামান, কামরুল আলম মুন্না, ইনডিয়ার আরেক ওয়ারেন্টধারী নজরুল ইসলাম ও কানাডার টরন্টোতে একটি হত্যা মামলার আসামি আলিম উদ্দিন খান। গুরুত্বপূর্ণ এ রেড নোটিশ তালিকায় গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে বেশ কিছু ছিচকে সন্ত্রাসীর নাম, যাদের ঢাকার অপরাধ জগতে অতোটা পরিচিতি নেই। অথচ রাজধানীর দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী পিয়াল, তাজ, ডাকাত শহীদসহ অনেকের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। বাদ পড়েছে মডেল কন্যা তিন্নি হত্যা মামলার আসামি কানাডায় অবস্থানরত গোলাম ফারুক অভির নাম।

অন্যদিকে রেড ওয়ারেন্ট জারি করা হয়েছে আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের নামে। বহুল আলোচিত জয়নাল হাজারীর নাম এতে নেই। তবে তার ক্যাডারদের নাম রয়েছে ইন্টারপোল তালিকায়। রেড নোটিশ প্রকাশের মাধ্যমে পুলিশ ৬৯ অপরাধী গ্রেফতারে সহযোগিতা চেয়ে ইন্টারপোলের সদস্য ১৮৪ রাষ্ট্রের কাছে আহ্বান জানালেও সরবরাহ করতে পারেনি শামীম ওসমানসহ অতি পরিচিত অনেকের ছবি। মোস্ট ওয়ান্টেডদের উচ্চতা, ওজন, চোখ ও চুলের রঙ জানালেও ওয়েবসাইট ডেটাবেইজে ছবি সরবরাহ করতে না পারায় বিদেশি নাগরিকদের পক্ষে এসব অপরাধী শনাক্ত করা অসম্ভব বলেই মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

রেড ওয়ারেন্টভুক্তদের মধ্যে ভিনদেশের ওয়ারেন্টধারী বাংলাদেশি রয়েছে সাতজন। তারা হলো দুবাইয়ে সম্পত্তি জালিয়াতি মামলার আসামি রেসমত আলী, আবু ধাবির ওয়ারেন্টধারী এ কে এম এনামুল হক, মাসুদ করিম মাস্টার, ইনডিয়ার মহারাষ্ট্রের ওয়ারেন্টধারী কামরুজ্জামান ওরফে জামান, কামরুল আলম মুন্না, ইনডিয়ার আরেক ওয়ারেন্টধারী নজরুল ইসলাম ও কানাডার টরন্টোতে একটি হত্যা মামলার আসামি আলিম উদ্দিন খান। তাদেরসহ মোস্ট ওয়ান্টেডদের অপরাধের প্রকৃতি উল্লেখ করলেও ডেটাবেইজে নেই অপরাধ পরিসংখ্যান। ইন্টারপোলের রেড নোটিশ বিষয়ে পুলিশের অনাগ্রহের কারণেই এ ধরনের হ-য-ব-র-ল হাল বলে অনেক কর্মকর্তা অভিমত দিয়েছেন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.