আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এ যেন এক অন্য বাংলাদেশ (চা শিল্পাঞ্চল সিলেট পর্ব-১)

সময়... অনাদি... হতে... অনন্তের... পথে...

দুটি পাতা ও একটি কুড়ির প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে বিমোহিত চা শিল্পাঞ্চল সিলেট যেন অন্য এক বাংলাদেশ। আর দুটি পাতা ও একটি কুড়ির রাজধানী শ্রীমঙ্গল। এখানকার পাহাড়ের টিলায় টিলায় চা গাছের সবুজ গালিচা, কুলি-কামিনীদের দুই আঙ্গুলের নিবিড় পরশে তুলে আনা দুটি পাতা একটি কুড়ির দেশের অর্থনীতির চাকাকে যেমন সচল রেখেছে তেমনি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে বিমোহিত করছে প্রতিনিয়ত পর্যকটকদের। তথ্যমতে, এ অঞ্চলেই ১৮৫৪ সালে পরীামূলকভাবে সিলেটের মালিনীছড়া চা বাগানে চা চাষ শুরু হয়। ইস্ট ইনডিয়া কোম্পানীর এক ইংরেজ কর্মকর্তার বাবুর্চি ওয়ারিয়া করিমগঞ্জ অথবা সিলেরচর এলাকার একটি টিলায় প্রথম অপরিচিত গাছ দেখে তার সাহেবকে জানালে ওই ইংরেজ কর্মকর্তা সেটিকে চা গাছ হিসেবে চিহিßত করেন।

এরপর ইংরেজ কোম্পানিই এ অঞ্চলে বানিজ্যিকভাবে চা চাষ শুরু করে। প্রথমে বৃহত্তর সিলেটের সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ তারাপর চট্টগ্রামসহ দেশের আরো কয়েকটি এলাকায় চা চাষ শুরু হয়েছিল। চা বোর্ডের সূত্রমতে, দেশের ছোটবড় ১৬৪টি চা বাগানের মধ্যে মৌলভীবাজার জেলায় ৯৩টি। হবিগঞ্জে ২২টি, সিলেটে ২০টি, চট্টগ্রামে ২২টি, রাঙ্গামাটিতে ১টি ও ব্রনবাড়িয়ায়একটি অবস্থিত। সাম্প্রতিক সময়ে পঞ্চগড় ও টাকুরগাও এলাকায় আরো পাচঁটি চা বাগান প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

মৌলভীবাজার জেলার মধ্যে ৯৩ টি বাগানের মধ্যে ১৯টি বাগাান রয়েছে শ্রীমঙ্গলে। এসব চা বাগানের ৪৪টি ফাড়ি বাগান রয়েছে। চা বাগান প্রতিষ্ঠার শুরুতে পাহাড়ের অঞ্চল পরিষ্ড়্গার বাগান প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচুর শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। এসব শ্রমিক নিয়ে আসা হয় ইনডিয়ার ইড়িষ্যা, উত্তর প্রদেশ, আসাম ও মাদ্রাজ থেকে। এখনো তাদের পরবর্তী প্রজন্ম চা বাগানে কাজ করছে।

চা শ্রমিকদের মধ্যে নারীরাই হচ্ছে বাগানের প্রাণ। বাংলাদেশের চা চাষের জন্য বরাদ্দকৃত মোট ভূমি ১লাখ ১৫ হাজার ৭৫৭ হেক্টর। এখন পর্যন্ত চাষের আওতায় আছে ৫২ হাজার ৩১৭ হেক্টর। দেশের বার্ষিক গড় উতপাদন পৌনে ৬ কোটি কেজি চা। ১৯৭৩-৭৪ অর্থবছরে চা রপ্তানি করে বছরে আয় ১০৫ দশমিক ২৩ কোটি টাকা।

২০০১-০২ অর্থবছরে এর পরিমাণ দাড়িয়েছে ৯৪৭ মিলিয়ন টাকা। এ খাতে সর্বোচ্চ রফতানি আয় ছিল ১৯৯৭-৯৮ অর্থ বছরে ২ হাজার ৩২ দশমিক ২৯ মিলিয়ন টাকা। এ চা বৈদিশিক মুদ্রা অর্জনের পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদাও মিটিয়ে আসছে। ২০০১-২০০২ অর্থ বছরে ৪১ দশমিক ৪ মিলিয়ন কেজি চা ব্যবহßত হয়েছে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে। চা বাগান কেবল বৈদিশিক মূদ্রা অর্জন বা দেশীয় চাহিদাই মেটাচ্ছে না, এটা প্রকৃতির লীলাভূমি।

উচু-নীচু টিলা জুড়ে দিগন্ত বিস্তৃত সবুজের গালিচা, ছায়বৃ, পাখির কলকাকলি গাছে গাছে। ছায়া সুনিবিড় হিমেল বাতাসের পরশ। টিলার ফাকে ফাকে পাহাড়ি ছড়ার কলকল ধ্বনি। কখনো কুলি ুকামিনীদের দুই হাতের শৈল্পিক পরশে চা গাছের ডগাথেকে সযত্নে দুটি পাতা একটি কুড়ির তুলে আনা, কখনো মাথায় পাতির বোঝা নিয়ে সারি বেধে ছুটে চলা। এ যেন অন্য এক বাংলাদেশ।

হরতাল-অবরোধ-আন্দোলনে দেশ অচল হলেও সে ঢেউ চা বাগানে লাগেনা। কাজ চলে প্রতিনিয়ত। প্রকৃতির কাছকাছি গিয়ে বাংলাদেশের অন্য এক রুপকে দেখতে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা প্রতিনিয়তই ছুটে আসেন চা সৌন্দর্যের অঞ্চল সিলেটে। চলবে........

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।