স্মৃতিচারণ ও এলোমেলো ভাবনা। বেশিরভাগই জগাখিচুড়ি।
আমি ইউনিভার্সিটিতে উঠে ধর্মের আরেক রূপ দেখলাম। আসলে একজন মানুষের সাথে দিনে ২/১ ঘন্টা উঠা-বসা করে তার সম্পর্কে আইডিয়া পাওয়া যায় না। ভালো আইডিয়ার জন্য তার সাথে দিনের ৬/৭ ঘন্টা অন্তত থাকা লাগে।
আমার কলেজের খুব কাছের সহপাঠীরা যখন আমার রুমমেট হয়ে গেল, তখন এদের সম্পর্কে আমার ধারণা পাল্টে গেল। একেকজন দেখি একেক রকম মোল্লা। ধর্ম সম্পর্কে বিশাল তাদের জ্ঞান। অবশ্য বলতে বাধা নেই, জ্ঞানের মাঝে অনেক গলদ আছে, কিন্তু ধরিয়ে দেওয়ার কেউ নেই। আমাদের দেশের মানুষের ধর্ম ও রাজনীতির ব্যাপারে নিজস্ব মতামত আছে।
কোন এক অজানা কারণে এ দুটি বিষয় নিয়ে তারা খুবই স্পর্শকাতর ও মনে করে "নিজে যা বুঝি/জানি তাই সই, আর সব শালা গাধা। কিছু জানে না"। যাই হোক অনেক মূল্যবান ফতোয়া তখন অনেক কাছের মানুষের কাছে শুনেছি। কোনটা শুনে হেসেছি, কোনটা উড়িয়ে দিয়েছি, কোনটা গ্রহন করেছি আবার কোনটা শুনে মনে হয়েছে এরা ধর্ম সম্পর্কে কতকিছুই না জানে। নিজেকে ক্ষেত্রবিশেষে খুব ক্ষুদ্র মনে হত।
ইউনিভার্সিটিতে কয়েক ধরনের ধার্মিক ছিল। এক গ্রুপ চার ওয়াক্ত "ঢিব মারে"---ফজরের টাইমে উঠা কঠিন, তাই চার ওয়াক্ত। এক গ্রুপ সারাদিন মসজিদে বসে থাকে----এরা ফেমাস তবলিগ জামাত, এক গ্রুপ ছিল সাপ্তাহিক---এরা জুম্মার ২ রাকাত পড়ে, এক গ্রুপ ছিল মৌসুমী---পরীক্ষার সময় নামায মিস নাই। আর সর্বশেষ গ্রুপটি ছিল সেমি নাস্তিক----এদের বক্তব্য নামায পড়ে হোস্টেলের গোসলখানা অপবিত্র করলে পাপ বেশি, তাই তারা নামায থেকে সাময়িক বিরতিতে আছে। অনেকের যুক্তি ছিল আরও সলিড।
মুসলমান হয়ে জন্মালে নাকি বেহেশতে যাবেই। তাই এখন এসব নিয়ে তারা চিন্তিত না।
এর মধ্যে সারাদিন মসজিদ পার্টি বা তবলিগ জামাতের একগুরু ছিলেন আমার পাশের রুমে। তার বদৌলতে ধর্মের কোনা-চিপা সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানের পরিধি বাড়তে লাগল। যদিও হুজুরের কাছে আমাদের প্রশ্ন ছিল জান্নাতে গেলে ছেলেরা ৭০ টা হুর পাবে, তাহলে মেয়েরা কি পাবে? বা ৭০টা হুর পেলে নিজের বউয়ের কি হবে? বলার অপেক্ষা রাখে না যে এ জাতীয় জনগুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হুজুর বরাবরই পাশ কাটিয়ে চলে যেতেন।
যাই হোক, হুজুরের সাথে দীর্ঘসময় (প্রায় ২ বছর) অতিবাহিত করার পর ৭০ হুরের লোভেই হোক আর জান্নাতের লোভেই হোক, আমি তবলিগে যাওয়া মনস্হির করলাম।
(পরবর্তী পর্বে আমার দেখা তাবলিগ)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।