আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ন্যায়ের প্রতিষ্ঠার দিকে বাংলাদেশের একধাপ অগ্রগতি এবং জামায়াত প্রসংগ

যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী করছি অনেক দিনের স্বপ্নের বাস্তবরূপ দেখার যে আনন্দ - তা বলে বুঝানো যাবে না। অভিনন্দন বাংলাদেশ। যুদ্ধাপরাধের বিচার একটা কঠিন এবং জটিল প্রক্রিয়া। অর্থ, বিচারের কাঠামো আর জনসমর্থনের অভাবে বিশ্বের অনেক গনহত্যার বিচার সম্ভব হয়নি - কিছু বিচার আংশিক হয়েছে। শুধুমাত্র ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর নাৎসীদের বিচারের ক্ষেত্রে বলা যায় পূর্নাংগ বিচার হয়েছে এবং এখ্ন সেই বিচার প্রক্রিয়া চালু আছে - বিশ্বের যে প্রান্তেই কোন যুদ্ধাপরাধী ধরা হয় - তাকে জার্মানীতে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বিচারের জন্যে।

সেই বিবেচনায় স্বীকার করতেই হবে বাংলাদেশে একটা মাইল ফলক সৃষ্টি করার পথে এক ধাপ এগিয়ে গেলো। সম্পূর্ন নিজস্ব অর্থায়নে দেশীয় আইনের মাধ্যমে এমন একটা জটিল প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া - বিশেষ করে পরাজিত ঘাতকচক্রের সংগঠনকে সক্রিয় রেখে - তাদের দেশে বিদেশে লবিং এবং রাস্তায় বলপ্রয়োগ থেকে শুরু করে বিচারপতির ব্যক্তিগত তথ্য পাচার এবং তা নিয়ে বিতর্ক করার পরও জনগনের সমর্থন - বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের প্রবল সমর্থনই সম্ভব করেছে এই বিচারকে এই পর্যায়ে নিয়ে যেতে। প্রানঢালা অভিনন্দন বাংলাদেশের যুবসমাজকে। যারা ৩০ লক্ষ শহীদ আর ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের ঋণশোধের বিষয়টিকে বেশ গুরুত্ব দিয়ে বিচারকে সমর্থন করে আজ এই সাফল্যের পর্যায়ে পৌছুতে সাহায্য করেছে। তবে বলা দরকার - ষড়যন্ত্র আর হুমকী থেমে যায়নি - আজও দেখলাম - ঘাতকদের নতুন প্রজন্ম ছাত্র শিবির হুমকী দিয়েছে দেশ অচল করে দেবে যদি তাদের নেতাদের বিরুদ্ধে রায় দেওয়া হয়।

আর জামায়াত প্রতিবাদ করেছে তাদের নাম আবুল কালাম আযাদের ফাঁসীর রায়ের মাঝে চলে আসার জন্যে। এই রায়কে দেখছি একটা দীর্ঘ সংগ্রামের ফসল হিসাবে। মুলত ১৯৭২ সালে শুরু হওয়া দালাল আইনে বিচার চলার সময় মানুষ ভেবেছিলো এইটাতো স্বাভাবিক - রাজাকাদের বিচার হবেই। কিন্তু ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান ইতিহাস পাল্টে দিতে দালাল আইনের বিচার বাতিল করেছিলো। রাজাকারদের পূর্নবাসনে নিজের দলে স্থান দিয়ে ছিলো এবং ঘাতকদের দল জামায়াতে পূর্নবাসনে সাহায্য করেছিলো।

যার ধারাবাহিকতায় আজ দেখি ১৯৭১ সালের "লজিং মাস্টার" বাচ্চু আজ মাওলানা আবুল কালাম আযাদ নামে একজন গুরুত্পূর্ন ইসলামী চিন্তাবিদ এবং প্রচুর অর্থ বিত্তের মালিক হয়ে মানুষকে ধোকা দিয়ে রেখেছিলো ৩৫ বছর। যদিও শেষ রক্ষা হলো না। ঠিক তেমনি জামায়াতের নেতারা সেই সময়ে ছাত্র নেতা হিসাবে আলবদর আলশামস করে আজ উত্তরা-বনানী-মগবাজারের বিরাট অট্টালিকার মালিক - বিলাসবহুল যানবাহনে চড়ে আর ছেলেমেয়েদের বিদেশে অথবা দেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ায়। তাদের বিত্ত সম্পদের চাকচক্য আর নামের বাহারের নীচে লুকিয়ে আছে তাদের ঘাতক পরিচয়। যেমন মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে ৭১ এ এলাকার লোক চিনতো "মইত্যা রাজাকার" হিসাবেই।

আশা করি দ্রুতই এই ঘাতকদের আসল চেহারা আদালতের রায়ের মাধ্যমে দেশবাসী এবং বিশ্ববাসী জেনে যাবে। এরা অবশ্যই তাদের কৃতকর্মের জন্যে শাস্তি পাবে। আবুল কালাম আযাদের রায়ের বিষয়ে প্রচুর আলোচনা হচ্ছে এবং টিভি চ্যানেলগুলোতে বিশেষ করে এটিএন নিউজের দেখলাম প্রতিটি ঘটনার ক্ষতিগ্রস্থদের উপর ডকুমেন্টারী দেখানো হচ্ছে। যা এই ঘাতকের প্রকৃত চেহারা সবার কাছে পরিষ্কার করতে সাহায্য করবে। তবে রায়ের একটা অংশ নিয়ে কথা বলতে চাই।

যা দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছি - তা হলো বাংলাদেশের ভোগলিক সীমানায় জামায়াত/শিবির নামক ঘাতকচক্রের কার্যক্রম চালানোর বৈধতা প্রসংগে। ইতিহাসের পাঠ হলো - জামায়াত-মুসলিমলীগ-নেজামে ইসলামী- পিডিপি ইত্যাদি দলগুলো বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের বিরুদ্ধে গিয়ে পাকিস্তানের অখন্ডতা রক্ষায় সক্রিয় ছিলো। তাদের ১৯৭১ সালের বাংলাদেশ বিরোধী অবস্থানের বিষয়টি একটু ভালভাবে যাচাই করা যেতে পারে - ১) জামায়াদ/শিবির এবং অন্যান্য দলগুলো যাদের অবস্থান ছিলো বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির বিরুদ্ধে তা যদি বলা হয় রাজনৈতিক অবস্থান ছিলো - তাহলে এই বিষয়টি পরিষ্কার যে তাদের সেই রাজনীতি ছিলো বাংলাদেশের মানুষের জন্যে ভীষন ভাবে ক্ষতিকর। যার খেশারত দিতে হয়েছে লক্ষ প্রানের মাধ্যমে। যদি আজকে হিজবুত তাহিরি বা পূর্ববাংলা সর্বহারা পার্টিকে নিষিদ্ধ করা হয় বাংলাদেশের জনগনের জন্যে ক্ষতির কারন হিসাবে - তবে ১৯৭১ সালে এতো বড় ক্ষতির কারন যে দলগুলো সমর্থণ করলো তাদের রাজনীতির কারনে - তারা কিভাবে বৈধ দল হিসাবে স্বাধীন দেশে রাজনীতি করে পারে! ( বলা দরকার যে জামায়াত/শিবির(যার পূর্ব নাম ছিলো ছাত্রসংঘ) ১৯৭১ সালে তাদের বাংলাদেশ বিরোধী অবস্থানের জন্যে এখন ক্ষমা চাওয়াতো দুরের কথা - কোন রকম দুঃখিতও না।

বরঞ্চ তারা তাদের অবস্থানকে এখনও সঠিক বিবেচনা করে বাংলাদেশকে সেই মতার্দশের দিকে টেনে নিয়ে যেতে চাইছে) ২) মুসলিম লীগ সহ অন্যান্য দলগুলো মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ বিরোধী হলেও কার্যত দলীয়ভাবে কোন সামরিক ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়নি - যেমনটা জামায়াত/শিবির করেছিলো। এরা প্রথম দিকে রাজাকার বাহিনী তৈরী করে দলীয় কর্মীদের দিয়ে ( খুলনার জামায়াত নেতা ইউসুফ এই রাজাকার বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা) - কিন্তু পরে পাকিস্তান সরকার রাজাকার বাহিনীকে আধা-সামরিক বাহিনী হিসাবে নিয়ে নেয় - ফলে রাজাকার বাহিনীর উপর জামায়াতের একছত্র আধিপত্য নষ্ট হয়ে গেছে জামায়াত শিক্ষিত এবং ছাত্র কর্মীদের নিয়ে আরেকটা বিশেষ বাহিনী তৈরী করে যার নাম ছিলো আল বদর বাহিনী। তখন ছাত্রকর্মীদের দ্বারা আরো বাহিনী তৈরী করা হয় যার মধ্যে আল শামস বাহিনী ঘাতক হিসাবে বেশ সক্রিয় ছিলো। এই আলবদর বাহিনী এবং আল শামস বাহিনীই বাংলাদেশের জন্মের পূর্বক্ষনে বুদ্ধিজীবি নিধনের অপরেশন পরিচালনা করে। আলবদর বাহিনী পুরো পাকিস্তানের প্রধান ছিলো নিজামী এবং পূর্ব পাকিস্তান শাখা প্রধান ছিলো আলি আহসান মুজাহিদ।

সুতরাং জামায়াতের প্রচারিত ১৯৭১ সালের "রাজনৈতিক অবস্থান" কথাটা প্রকৃত সত্যকে আড়াল করার প্রচেষ্টা মাত্র। জামায়াত/শিবির প্রকৃতপক্ষে দলীয়ভাবে বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে অস্ত্রসহ যুদ্ধ করেছে। তখনকার জামায়াতের পত্রিকার ( দৈনিক সংগ্রাম) কপিগুলো এর প্রমান বহন করছে। এই অবস্থায় জামায়াত কি ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে না কি করে না এই ধরনের বিতর্ক অপ্রয়োজনীয়। জামায়াত একটা ঘাতক দল - এরা ঘাতক নেতাদের রক্ষার জন্যে আজও নির্লজ্জ ভাবে সক্রিয়তা দেখাচ্ছে এবং ভোটের সমীকরনের রাজনীতিকে নিজেদের প্রয়োজনীয় করে রেখেছে।

কিন্তু যে কোন যুক্তিতে জামায়াতের মতো সংগঠনের বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনা মুলত বাংলাদেশের জন্মের সাথে প্রতারনা মাত্র। এই কথাগুলো আজকের রায়ের একটা অংশে উঠে এসেছে যে - জামায়াত দলগত ভাবে পাকিস্তানী সৈন্যদের সহযোগীতা করেছে। রায়ের অনুচ্ছেদ ২(৪) এ বলা হয়েছে এ - রায়ে বলা হয়, জামায়াত রাজাকার বাহিনী গঠন করে এই গনহত্যায় সহায়তা করেছিলো। সেখানে আরো বলা হয় -“যে নিপীড়ন ও নির্যাতন সয়ে, যে রক্ত আর আত্মত্যাগের বিনিময়ে নিরস্ত্র বাঙালিকে একাত্তরে মুক্তি অর্জন করতে হয়েছে, তা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। সেই সময়ের বিশ্ব ইতিহাসে আর কোনো জাতিকে বোধ হয় লক্ষ্য অর্জনে এতোটা ত্যাগ স্বীকার করতে হয়নি।

” রায়ে আরো বলা হয়েছে - আবুল কালাম আযাদ একাত্তরে ফরিদপুরের রাজেন্দ্র কলেজে পড়াশোনার করতেন। সে সময় তিনি জামায়াত নেতা আলী আহসান মুজাহিদের ঘনিষ্ট সহযোগী ছিলেন। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে মুজাহিদের বিরুদ্ধেও ট্রাইব্যুনালে মামলা চলছে। জামায়াত যথারীতি সত্য অস্বীকার করেই যাচ্ছে - কিন্তু সত্য যথাসময় প্রকাশিত হয়। শুধু সত্য করেই এরা ক্ষান্ত হয়নি - আজও ট্যাইবুনালের বিচার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে - যা THE INTERNATIONAL CRIMES (TRIBUNALS) ACT, 1973 (ACT NO. XIX OF 1973).এর ধারা ১১(৪) এর সুষ্পষ্ট লংঘন এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

আজ সত্য প্রকাশিত - আদালতের রায়ের পরও কি বাংলাদেশে জামায়াত শিবির বৈধ ভাবে কর্মকান্ড চালানোর সুযোগ পেতে পারে? এই প্রশ্নটি বাংলাদেশের সকল নাগরিককে ভেবে দেখতে হবে। দাবী করছি জামায়াত শিবিরকে অবিলম্বে নিষিদ্ধ সংগঠনের তালিকায় যুক্ত করে বাংলাদেশকে একটা মুক্ত স্বাধীন দেশ হিসাবে যাত্রা শুরু শুভ সুচনা করার দাবী করছি। জামায়াতের ধর্মের আড়ালে ঘাতকদের লুকিয়ে রেখে এতোদিন যেভাবে ধর্মপ্রান যুবমসাজের একটা অংশকে বিভ্রান্ত করে তাদের দলভুক্ত করেছে - তাদের প্রতিও আহ্বান জানাই - ন্যয়ের পথে একবার বিবেকটাকে কাজে লাগান - ঘাতকদের রক্ষা করা জন্যে যে শ্রম আর মেধা ব্যয় করছেন - তাতে কে লাভবান হচ্ছে। আশা করি এই রায় বিভ্রান্ত যুবকসমাজের মাঝেও একটা চেতনার সুবাতাস ছড়াতে সক্ষম হবে। ছবি সূত্র - বিডিনিউজ ২৪ ডট কম  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।