প্রান্তরে প্রান্তরে কুড়িয়ে ফিরি ধূলিকনা
ডাক্তার হিস্ট্রি শুনেই বললেন,"এপিলেপসি"। একদঙ্গল ইনভেস্টিগেশন অ্যাডভাইজ করলেন। মমিনুল বোঝে না। আমি বোঝানোর চেষ্টা করলাম। রোগ নির্ণয়ের জন্য কতগুলো পরীক্ষা নিরিক্ষা করাতে হয়।
প্রত্যেকটি পরীক্ষার জন্য কতগুলো বিশেষ যন্ত্র রয়েছে। পরীক্ষাগুলো নির্দিষ্ট কতগুলো প্রতিষ্ঠানে সম্পন্ন করাতে হয় ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি বোঝাই আর মমিনুল ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। অবিশ্বাস নিয়ে তাকায়। তাঁর তাকনোই বলে দেয় এসব তাঁর ভালো ঠেকছে না।
এসব ইন্ভেস্টিগেশনের মানে কী? সে তো বড় ডাক্তারের কাছেই এসেছে। কত কষ্ট করে সিরিয়াল পেতে হয়েছিল। একান্ন জন রোগী দেখা হয়ে যাবার পরে তাঁর ডাক এসেছিল। অথচ সেই ডাক্তার কিনা নিজে বুঝতে পারছে না রোগীর রোগটা কী? আর একজন পরীক্ষা করে বলে দেবেন তারপর ডাক্তার বুঝবেন! অদ্ভুদ ঠেকে মমিনুলের কাছে। একটা হতাশা গ্রাস করে তাঁকে।
দেশের বাড়িতে প্রভানন্দ ডাক্তার কত বার চিকিৎসা করেছে। জ্বরের চিকিৎসায় দুই টাকার অসুধেই অব্যর্থ কাজ করেছে। আর এসব কী বলছে?
অনেক কষ্ট করে সাতশো টাকা জোগাড় করতে হয়েছিল তাঁর। এর ওর কাছে চেয়ে চিন্তে যোগাড় করেছিল কিছু। বাকী টাকা কর্জ করেছে।
ছেলেদুটোকে বিয়ে করিয়ে মস্ত ভুল করেছে বলে তাঁর ধারণা। আগে যা হোক ছেলেদুটো অন্ততঃ বিপদে আপদে একটা শক্তি ছিল। এখন নিজেদের সংসার নিয়েই তাঁরা অস্থির। ঢাকায় রিক্সা চালিয়ে কিছু টাকা জমিয়ে বাড়ি ফিরে আসে। টাকায় টান পড়লে আবার ঢাকা।
অবশ্য মমিনুল এখন কোন কিছুই আশা করে না তাঁদের কাছে। শুধু একটা ঘটনাই ছেলেদের প্রতি তাঁর সব আস্থা নষ্ট করে দিয়েছে বলে জানায়। সপ্তাহান্তে গ্রামীণ ব্যাংকের কিস্তির টাকাটার কথাটা মনে হলে তাঁর মাথাটা চক্কর দিয়ে ওঠে। খেয়ে না খেয়ে কিস্তির টাকা জুগিয়ে যেতে হয়। একবার কোন ভাবেই পেরে উঠছিল না।
অবশেষে ছেলেদের কাছে হাত পাতে সে। কিন্তু দুটো ছেলেই দারুনভাবে নিরাশ করে তাঁকে। তখন থেকে তাঁদের কাছে কখনই কিছু চাইবে না বলে পণ করেছে। তবে ঢাকায় আসার আগেই এ সপ্তাহের কিস্তির টাকাটা বউ এর কাছে রেখে এসেছে সে। এদিক থেকে কিছুটা নিশ্চিন্ত এবার।
সব ইনভেস্টিগেশনের রিপোর্টগুলো পেতে আরও দু’দিন কেটে যায়। ঢাকা শহর অসহ্য হয়ে ওঠে মমিনুলের। কেন অসুখ-বিসুখ হয়? বসে বিড়ি খাওয়া ছাড়া আর কোন কাজ নেই। এত মানুষ-জন, গাড়ি-ঘোড়া ভালো লাগে না তাঁর। এভাবে মানুষ বাস করে কীভাবে?
অবশেষে বিরক্তিকর দিন দু’টো অতিবাহিত হয়।
আবার অপক্ষা। ডাক্তার আসেননি এখনও। কখন আসবেন তারও কি ঠিক আছে? এদিকে রোগী আর রোগীর সঙ্গী-সাথীরা মিলে পুরো জায়গাটাই গরম করে ফেলেছে। এত কথা বলছে মানুষগুলো! কী এত কথা? এসবই ভাবছে মমিনুল। এমন এক সময় ডাক্তার এলেন।
সবাই যেন চুপ হয়ে গেল মুহুর্তেই। মমিনুলের ডাক পড়ল আরও অনেক পরে। ঢুকতেই ডাক্তার হুঙ্কার ছুঁড়লেন, "কি টেস্টগুলো করিয়েছেন?" আমিই উত্তর দিলাম, "হ্যাঁ, করানো হয়েছে। " রিপোর্টগুলো নেড়ে চেড়ে দেখলেন ডাক্তার। বললেন, " এ ওষুধ গুলো খান, দু সপ্তাহ পরে আবার দেখা করবেন।
" মমিনুল সোজা সাপ্টা উত্তর দিলেন, "মুই আর আসিবার পারিবার নহ, মুই টাকা পাম কুনঠে?" ডাক্তার ভদ্রলোক মুহুর্তেই যেন অগ্নি মুর্তি ধারণ করলেন: "এইসব গরুরে নিয়ে আসেন ক্যান? এগুলারে মরতে দ্যান। যখন লেখাপড়ার সময় ছিল খোঁজ নিয়ে দেখেন তখন বিয়ে করে ফেলছে। এরা এভাবেই মরবে। এগুলা না থাকলে দেশটা অনেক শান্তিতে থাকত। "
ডাক্তারের কক্ষ থেকে মাথা নীচু করে বেরিয়ে এলাম আমরা।
মমিনুল কী বুঝেছে জানি না। আমি বুঝতে চাইনি কোন কিছুই...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।