ভালোবাসার ঊর্বশী বুকে লেখা আছে এক নাম- সে আমার দেশ, আলগ্ন সুন্দর ভূমি- বিমূর্ত অঙ্গনে প্রতিদিন প্রতিরাত জেগে ওঠে তার উদ্ভাসিত মুখ
যিনি রাঁধেন তিনি নাকি চুলও বাঁধেন- কথাটা সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না। এই আমি যখন পেশাগত কাজে বেশি ব্যস্ত থেকেছি তখন মাথা থেকে লেখালেখি একেবারে উথাও হয়ে গিয়েছে। মাসের পর মাস এমন কি বছরও শেষ হয়ে গেছে তবু কলম থেকে একছত্র লেখাও বের হয়নি। জীবনে বেশ ক’বার এমন বছর চলে গেছে আমার, ঝরে গেছে অমূল্য সময়। তবে আফসোস নেই তাতে।
যখন লিখেছি তখন একটানা লিখে পুষিয়ে নিয়েছি বিগত বছরগুলোকে। লেখালেখির বেশ জোয়ার ছিলো বিগত ২০০৬ সালে আমার। গত এক বছরে দু’টো বই প্রকাশ এবং বেশ কিছু পান্ডুলিপি জমেছে ভান্ডারে। সাথে সতেজ বোনাস হিসেবে পেয়েছি সামহোয়্যানইনব্লগের এক বছর জীবনে ৩০০ পোস্ট।
ত্রিশতক পোস্টের করচা লিখতে গিয়ে প্রাক্তন সচিব মাহে আলম স্যারের কথা মনে পড়ছে।
আমার বই দু’টো দেখে তিনি বলেছিলেন- শেখ জলিল, আপনার পেশা ভিন্ন হওয়ায় আপনি এতো পিছিয়ে আছেন, নাহলে আপনি বেশ নাম করতে পারতেন। আসলে নামের জন্য কোনোদিনই কলম চালাইনি আমি। নিজের মনের খোরাক এবং শখের বশেই লিখছি এতোদিন ধরে। পত্র-পত্রিকায় পাঠানোর সময় তো নেই-ই, বরং ব্লগে বা ফোরামে লিখে আত্মতৃপ্তি মেটানো ছাড়া কিছু নেই আমার কাছে! নিজের এ আত্মতৃপ্তির সাথে ফোরাম বা ব্লগের এক ঝাঁক ভালো লেখিয়ে বন্ধু-বান্ধব তো পেয়েছি- এতেই বা কম কীসের!?
গত বছর মে মাসে সামহোয়্যানইনব্লগে শুরু করেছিলাম ব্লগিং। প্রথম দিকের পোস্টে মন্তব্যকারী জ্বিনের বাদশা, ফজলে এলাহি, রাগ ইমন, কৌশিক, হযবরল. অন্যমনস্ক শরৎ, কালপুরুষ, মেঘকন্যা, মাধবী, পথিক!!!!!!!, তেলাপোকা, অঃরঃপিঃ, শমিত আর সুমন চৌধুরীর কথা বেশি মনে পড়ছে।
ব্লগের নতুন চেহারায় সেসব অমূল্য মন্তব্য হয়তো আজ আর নেই, মুছে গেছে অনেকের নামও। আজ ত্রিশতকের দুয়ারে এসে ব্লগে লেখালেখিকে উৎসাহদানের জন্য তাঁদের অবদানকে বিনীতভাবে স্মরণ করছি। শুরুতে যাঁরা ছিলেন তাঁরা যেভাবে অকান্তভাবে আজও আমার ব্লগে মন্তব্য করে যাচ্ছেন- এটাকে কোনোভাবে শুধুমাত্র ধন্যবাদের সুরে আবদ্ধ করার বিষয় নয় এখন। প্রথম মন্তব্যকারী হযবরল-এর মতো বলি- সবাইকে লাল সালাম।
কবিতাপাগল মানুষ আমি।
আপাদমস্তক কবি মনে হয় যাঁদের- অন্যমনস্ক শরৎ, সুনীল সমুদ্র, সুমন চৌধুরী, আবু মুস্তাফিজ, ব্রাত্য রাইসু, রাগইমন, মেঘ, মাহবুব মুর্শেদ, হাসান মোরশেদ, পথিক!!!!!!!, তীরন্দাজ, কৌশিক, ফজল, আলীপ্রাণ, নজমুল আলবাব এবং মুশফিকদের কাছে আমি ঋণী এজন্য যে, ব্লগ খুললে কারও না কারও কবিতা পাই-ই। নিজে নিয়মিত না লিখলেও তাঁদের লেখা পড়ে মনের খরা কেটে যায় খানিকটা। কবিতা লেখার অনুপ্রেরণা চলে আসে মনে, হঠাৎ করে লিখে ফেলি দু’একটা। আমিও তাঁদের সুপাঠ্য পোস্টের কাতারে নিজের পোস্ট দিয়ে ফেলি কিছু অখাদ্য পদ্য বা কবিতা রচনা করে। আর এ হাতটা সচল থাকার জন্য কৃতজ্ঞ আমি আমার প্রিয় কবি বন্ধুদের, ভার্চুয়াল সহযাত্রীদের কাছে।
কিছু শক্তিশালী গদ্য লেখকদের কথা বলতে হয়- যাঁদের লেখা প্রাণ কাড়ে আস্তমেয়ে, এই আমি মীরা, শুভ, কালপুরুষ, তীরন্দাজ, চোর, হিমু আর রাসেল(........)-এর কথা। ইদানিং পরিপূর্ণ গদ্যের ছোঁয়া পাই মেধাবী লেখক কৌশিক, রাগইমন আর পথিক!!!!!!!-এর লেখায়। মাঝে মাঝে কবিতার চেয়ে গদ্যেই বেশি সাবলীল, প্রাণবন্ত মনে হয়, এগিয়ে রাখতে ইচ্ছেও করে এদেরকে। তবে নতুন ব্লগারদের ভেতর বড়ো পাওনা সুলেখক নজমুল আলবাব আর আনোয়ার সাদাত শিমুল নামের উচ্ছল দুজন তরুণ। বিশেষ করে আনোয়ার সাদাত শিমুল-কে আমার কাছে খুব শক্তিশালী লেখক মনে হয়।
কিছু কিছু লেখার বৈচিত্রের জন্য আমার কাছে সবসময়ই প্রিয় । যেমন- অঃরঃপিঃ, ধুসর গোধূলি, চোর, ঝরাপাতা, সাব্বির, আবু সালেহ, শ্যাজা, তিমুর আর অণৃণ্য। মুক্তিযুদ্ধ সিরিজের প্রিয় লেখক অমি রহমান পিয়াল। বন্ধুবৎসল এ মানুষটিকে কারও ভালো না লেগে উপায় কী? বইপাগলা মাশা এবং ফরিদকে স্মরণ করতে হয়ই। কম্পিউটার ও টেকনোলজিতে ভালো লাগে আশার আলো, এস এম মাহবুব মুর্শেদ, অরূপ, ত্রিভুজ এদের লেখা।
ধর্ম নিয়ে অথবা রাজনৈতিক বিশ্লেষণধর্মী লেখা খুব একটা পড়া হয় না। তবে ধর্ম নিয়ে লেখায় ফজলে এলাহি-কে ভালো লাগে। তাঁকে কখনও কট্টরবাদী মনে হয়নি আমার। সাদিক মোহাম্মদ আলম-এর লেখায় টানে সুফীজম বা বাউলের মরমিয়া জীবনের গাথা। বিশ্লেষণধর্মী লেখায় আড্ডাবাজ, কনফুসিয়াস, অপবাক-এর লেখার কথা বলতে হয়।
বেশ কিছুদিন ধরে সাধক শঙ্কুর গাঁজিতা উপহার পাচ্ছি না ব্লগে।
সবশেষে ব্লগের কিছু ছোট বন্ধু পিচ্ছি আরাফাত, শাওন, লাবণী আর এই আমি মীরাকে শুভেচ্ছা। মনে গভীর থেকে নিত্যদিনের প্রিয় সুন্দর কথনের জন্য সাধুবাদ জানাচ্ছি ডায়েরী লেখক শাহানা, সারিয়া তাসনিম আর স্বরহীন দিদিকে। ভালো থাকুন সবাই। ব্লগে আপনাদের ঝরঝরে লেখা আমার বুকে বইয়ে দিক আরও সাত সকালের ফুরফুরে বাতাসের আমেজ!
০২.০৫.২০০৭
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।