সাহিত্যের সাইটhttp://www.samowiki.net। বইয়ের সাইট http://www.boierdokan.com
প্রথমবার কোনো ম্যানসাইজ স্ক্রিনে কোনো সিনেমা দেখার পর সেটা ছোট কম্পিউটার স্ক্রিনে রিভাউজ দেয়া খুব কষ্টকর এক অভিজ্ঞতা। কিন্তু কি করবো নতুন করে না দেখলে পুরনো ইমেজগুলো ঝালাই করে নতুন করে বোঝাও সম্ভব হয় না। তাই ছোট স্ক্রিনেই আবার দেখলাম আনবিয়ারএবল লাইটনেস অব বিইং। বাংলায় কী হবে? অস্তিত্বের অসহনীয় লঘুভার।
এই নামের ভেতরেই আছে আরেক উপনাম : অস্তিত্বের অসহনীয় গুরুভার। মিলান কুন্ডেরা আমার প্রিয় লেখক। পলিটিক্স ও সেক্সের সমন্বয় খুব কম লেখকের মধ্যেই আছে। আর এক্ষেত্রে কুন্ডেরা হলেন মাস্টার। সঙ্গে আছে সেক্সুয়াল পলিটিক্স।
পূর্ব ইউরোপের রাজনীতি, চেকোশ্লাভাকিয়া আরও কত বিষয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় কুন্ডেরার এই উপন্যাসটি আমার পড়া হয়নি। ২০০১ বা ১৯৯৯ তে জহির রায়হান ফিল্ম সোসাইটির উদ্যোগে গ্যাটে ইন্সটিটিউটে একটা শো হয়েছিল নভেল টু ফিল্ম শিরোনামে। তখন আনবিয়ারএবল দেখেছিলাম। মার্কেজের সরলা এরন্দিরা, গুন্টার গ্রাসের টিন ড্রাম, উমবার্তো একোর নেম অব দ্য রোজ সহ বেশ কয়েকটি দারুণ মুভি তখন দেখা হয়েছিল।
দিন তিনেক আগে আনবিয়ারএবল হাতের কাছে পেয়ে একটু দ্বিধায় ছিলাম আবার দেখবো কি না এই ভেবে। শেষ পর্যন্ত দেখলাম। ১৯৯৯ বা ২০০১ এ যে আনবিয়ারএবল-এর কাহিনী একটু অচেনা, একটু দূরের ব্যাপার ছিল তা ২০০৭ এ এসে একান্ত নিজের হয়ে গেছে। জীবনের অসহনীয় লঘুভার প্রকান্তরে আমাদের আক্রান্ত করেই ফেলেছে। এই উপলদ্ধি বেশ ভাবাচ্ছে।
আন্না কারেনিনা নিয়ে ভাবছিলাম কিছুদিন ধরে। মিরাকল হলো, এই সিনেমায় প্রথম যখন নায়ক টমাসের সঙ্গে টেরেজার দেখা হয় তখন তার হাতে ছিল আন্না কারেনিনা। আর কালক্রমে টমাস টেরেজার কুকুরের নাম রাখা হয় কারেনিন। টমাস অবশ্য কুকুরের নাম তলস্তয় রাখার প্রস্তাব রেখেছিল। কিন্তু কুকুরটা শি ডগ বলে কারেনিনা রাখার সিদ্ধান্ত হয়।
আর দেখতে পুরুষ মতো বলে এর নাম দেয়া হয় কারেনিন। কুন্ডেরার এই নাম রাখার প্রস্তাব কো-ইন্সডেন্স নয়। সোভিয়েট রাশিয়া তার দেশে যে আগ্রাসন চালিয়েছিল তার অভিজ্ঞতা তাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছিল। দস্তয়েভস্কির প্রতি তার বিরাগের কথা সকলের জানা। কারণ সোভিয়েত আগ্রাসনের দুঃসহ দিনগুলোতে ইডিয়টের নাট্যরূপ দিয়ে তাকে জীবিকা নির্বাহ করতে হয়েছিল।
আনবিয়ারএবল-এ আছে তলস্তয়ের প্রতি টমাস-টেরেজার প্রচুর ভালোবাসা।
এ সিনেমার আরেকটি সেন্ট্রাল থিম ইডিপাক্স রেক্স।
কাহিনী ১৯৬৮ সালের প্রাগের। এখানকার ডাক্তার টমাস একজন উইমেনাইজার। একে প্রায় দর্শনের পর্যায়ে বিবেচনা করে সে।
একের পর এক বান্ধবীর সঙ্গে চলতে থাকে তার সেক্সুয়াল সম্পর্ক। সে লাইটনেসকেই জীবনের অবলম্বন হিসাবে বেছে নিয়েছে। এই যৌনতা তার কাছে ফুটবল খেলার মতো। কিন্তু প্রাগ অধিকৃত হবার পর জেনেভা গিয়ে টামাস ও টেরেজার মধ্যে এই লাইটনেস নিয়ে সংঘর্ষ বাধে। টেরেজা অনুভব করে তার পক্ষে এই লাইটনেস ও স্ট্রংনেসের জীবন বেছে নেয়া সম্ভব নয়।
ফলে সে ফিরে আসে সেই প্রাগে। তার পেছন পেছন আসে টমাস। নিগ্রহ নিপীড়নের এক জীবন হয় তাদের। যেখানে টেরেজা তীষণ আক্রান্ত বোধ করে। শেষ পর্যন্ত তারা চলে যায় গ্রামে।
এক বন্ধুর কাছে।
এই সিনেমা এত ডিটেইল যে বিশেষ ছোট বর্ণনা দিয়ে শেষ করা যাবে না। কুন্ডেরা অনেক প্রতীক ও সংকেত নিয়ে কাজ করেন। প্রতিটি কথা প্রতিটি দৃশ্য গভীর অর্থজ্ঞাপক। আশার কথা সিনেমার ডিরেক্টর ফিলিপ কফম্যান ব্যাপারগুলো যথাসম্ভব চিত্রায়িত করেছেন।
ফলে, সিনেমাটি দেখার বা উপন্যাসটি পড়ার সত্যিই কোনো বিকল্প নেই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।