কাব্য-দিনের কথাঃ স্পর্শের আগুনে! অন্যদিগন্ত: www.fazleelahi.com
প্রিয় প্রজন্ম,
ফসলের অপেক্ষায় অগ্রানের চাষার মত, কালবৈশাখীর অপেক্ষায় চৈতী আমের মুকুলের মত, আষাঢ়ে জলের অপেক্ষায় পানসী আর সাম্পানের মত আমাদের প্রবাসীদের অন্তরাত্মাগুলোও অপেক্ষায় তিতীক্ষ থাকে বৎসরান্তের আনন্দায়োজন শিক্ষা সফর অথবা পিকনিকের। দিনময় উৎসব-আনন্দের ঢেউগুলো যেন তরঙ্গে রূপ নেয় তখন, যখন আসর আসি আসি করে। কেননা, আসরের সালাতের পরই শুরু হতে যাচ্ছে 'তারান্নুম'-এর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। যোগ্যতার বন্টনে হোক আর অর্পিত দায়িত্ব পালনে হোক; সাংস্কৃতির সাথে থাকাটাই এযাবৎ দেখে এলাম অনিবার্য। গল্প-কথার কোলাহলে প্রস্তুত করছিলাম নাটকের মঞ্চ, সুতো বাঁধো, পর্দা টানাও, পরিবেশ বানাও ইত্যাদি কর্মে যখন বিভোর, তখন কোন রকমে হাঁটতে পারা একটি বাবু দূর থেকে আমার উদ্দেশ্যে অনেকগুলো মানুষের ফাঁকফোঁকর পাড়ি দিয়ে, হামাগুড়িতে ষ্টেজে উঠে পায়ে পায়ে আমাকে দেখতে দেখতে এগিয়ে আসছে আমার দিকেই; ভাবলাম হয়তো তার বাবা এদিকেই কোথাও বসে আছেন।
তখনো আমি ষ্টেজের অপর প্রান্তের নীচে, আদুরে বাবুটি আসছেই আসছে, এ প্রান্তে এসে যাওয়ায় দূর থেকে তার বাবার কথায় আবারো ফিরে দেখি আর কোলে তুলে নেই। সে তখন আমাকে কত কথা বলায় ব্যস্ত। সে পিকনিকে মনে হয় আন্তরিকতায় এর চেয়ে বড় কোন পাওয়া আমার ছিল না। খুশীতে মনটা ভরে উঠলো, সে নিষ্পাপ শিশুটিকে আমি কখনো দেখিনি, চিনি না, পৃথিবীতে এই-ই তাকে আমার প্রথম দেখা, অথচ এত মানুষ থাকতে সে আমাকেই তার অবুঝ মনের আব্দারগুলো, কে তাকে চিমটি দিয়েছে, কে তার খেলার পুতুলটা নিয়ে গেছে, শব্দ সাজিয়ে বলতে না পারা কথাগুলো অজানা অনেক শব্দে আর আকার ইঙ্গিতে বলার জন্য আমাকেই বেছে নিয়েছে; 'আসলে একটা নিষ্পাপ শিশুমন আমার মত পাপক্লিষ্ট অন্তরধারক একজনকে তার বন্ধু ভাবতে পেরেছে'-এ আনন্দটাই আমার বিরাট পাওনা। অগনন সিজদায় অবনত আমি প্রতিপালকের সমীপে তাই।
প্রজন্ম, তুই একমত হবি কি হবি না জানি না, তবে আমি মনে করি জগতের কেউই এমন কাউকে তার বন্ধু বানাতে চায় না, যার সাথে তার দৃষ্টিভঙ্গির অমিল, মনের অমিল, আচরণের অমিল এমনকি বয়সের অমিলও বন্ধুত্বের পথে একটা অন্তরায়; যদিও বিরল নয়। কথায় বলে- 'শিশুরা সরল মনা', থাকে হয়ত, তবে শিশুদের মাঝে আমি এর বাইরেও আরেকটা ব্যাপার দেখে থাকি, তা হলো শিশুদের নিষ্পাপতা, আমি যেন এই পবিত্রতার ঔজ্জ্বল্য উপলব্ধি করতে পারি। তাদেরে বুকে জড়িয়ে নিয়ে ব্যবধানটা বুঝার চেষ্টা করি, একটি শিশু মন আর ঊনত্রিশোধর্্ব আরেকটি মনের মধ্যকার সমূহ ব্যবধান। আমি স্পষ্ট দেখতে পাই যেন, যেন অনুভবের নড়াচড়া শুনতে পাই; দু'টো আত্মার ঔজ্জ্বল্যতা আর মলিনতা। ভাবি, একদিন আমিও তো এমন ছিলাম; আজ কোথায় এসে দাঁড়ালাম?? এক পক্ষীয় প্রিয় স্কুল বন্ধুটি একদা চিঠির ভাষায় বলেছিল- '(তোর) আগের সেই নিটল দু'টি মায়াময় চোখ আর দেখতে পাই না; সেখানে এসে ভর করেছে যেন স্বার্থ, ঘৃণা ইত্যাদি'।
পত্রলেখক বন্ধু কখনোই ভাবেনি, জানেও না যে, তার এইটুকু কথা আমাকে কতটা ভাবিয়েছে; যা আজো ভুলতে পারিনি। জীবনের কাছ থেকে কতটা অর্জিলাম, আর কি কি হারালাম; তার হিসেবে দু'চোখের বাতি নিভে যেতে চায়, ভয়াবহ এক লোডশোডিং-এ নিমজ্জিত হই।
অংককে ভালবাসতাম, যদিও তা ছিল বীজ ও উচ্চতরে, কিন্তু অর্থাভাবে বিজ্ঞানের সাথে যে আড়ি দিয়েছিলাম একদা তার মীমাংসা আজো হলো না; আর হবে বলেও মনে হয় না। হিসেবীই হয়ে পড়লাম বাস্তব অভিজ্ঞতায়। হিসেবী কি প্যাঁচানো মানুষ হয় কি না তা খুঁজে দেখিনি, তবে মনটাকে আমি খুঁজে পেয়েছি ঠিক অংকের মতই সরল; একটু প্যাঁচেই তাতে লেগে যায় দারুন জট, যার ফলাফল দাঁড়ায় 'ভুল'।
অনেকেই তো দায়বদ্ধ আজকাল, ওদের প্রতি নানা অবসরে তাকালে দেখি অধিকাংশই আমার এই 'আন্তরিক সরল অংক'-এর ফলাফলকে সীমাহীন ভয় পায়। তাদের দুর্বলতাগুলোর জন্য আমার আফসোস হয়, সুযোগ পেলে দু'ছত্র ওয়াজ শোনাই, কেউ কেউ শোনে, কেউ একান থেকে ওকানে পাচার করে দেয়। ভাবনারা ব্যাথায় কঁকিয়ে উঠে, যখন দেখি পঁ্যাচানো অন্তরসমূহের কারুকাজ আর আমাকে দেখার দৃষ্টিগুলোয় আমি আমূল বিদ্ধ হয়ে আছি বিষাক্ত তীর হয়ে, যার যন্ত্রণায় তারা ছটফট করে নিরন্তর। বন্ধু, বলতো, কি করে তাদের একথা বুঝাই যে, আমার সরল অংকে গরমিল হয়ে গেলে শুধু তুমিই ডুববে না; বরং আমাকেও সাথে নিয়ে নিমজ্জিত হবে ওপারের 'কালো রঙ আগুনের সমুদ্রে'!!! দো'আ করিস্ বন্ধু, আমার 'শিশুমন প্রিয়তা' আর 'সরল অংকগুলো' যেন বেঁচে থাকে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের জন্য শুভকামনা।
তোরই-
"ফএমু"
১২.০৪.২০০৭, মদীনা মুনওয়ারা, সৌদি আরব।
!@@!620825 !@@!620826 !@@!620827; !@@!620828 !@@!620829 !@@!620830 !@@!620831, !@@!620832 !@@!620833 !@@!620834 !@@!620835 !@@!620836 !@@!620837 !@@!620838 !@@!620839 '!@@!620840 !@@!620841' (!@@!620842) !@@!620843 !@@!620844 !@@!620845
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।