যে ঘড়ি তৈয়ার করে - সে - লুকায় ঘড়ির ভিতরে
অনেকটা একাডেমিক ইন্টারেস্ট থেকেই হিউম্যান ব্রেনের উপরে পড়ছিলাম। মাইকেল ও শিয়ার "দি ব্রেইন - এ ভেরি শর্ট ইনট্রোডাকশন" বইটা বেশ যুইতের। পিচ্চি বই, কিন্তু ব্রেনের খুঁটিনাটি ডিটেইলসের মূল ব্যাপারগুলো চমৎকার তুলে ধরেছে।
একাডেমিক ইন্টারেস্টের কারন হলো বায়োইঞ্জিনিয়ারিং। বায়োইঞ্জিনিয়ারিংয়ের একটা ফোকাস এরিয়া হলো মানুষের (অথবা প্রাণীদের) মন, পার্সেপশন, কনশাসনেস ইত্যাদি।
বিজ্ঞানীদের উদ্দেশ্য, মন বিশিষ্ট, চিন্তাশক্তি সম্পন্ন মেশিন তৈরী করার সম্ভাবনা নিয়ে নাড়াচাড়া করা। যে মেশিন চিন্তা করতে পারে, সেইরকম একটা মেশিন তৈরীর আগে চিন্তা বিষয়টাতো বিজ্ঞানীদের বুঝতে হবে। ঠিক ব্রেনের কোথায় চিন্তার জন্ম। আর শুধু চিন্তা বললে তো হয় না। এর ভিতরে ইমোশন, ভাবনা, সিদ্ধান্ত নেওয়া, একটা ধারনা তৈরী ইত্যাদি অনেকগুলো জঠিল ব্যাপার আছে।
আপত দৃষ্টিতে আমরা দৈনন্দিনভাবে সেগুলো করে আসি বলে তেমন পাত্তা দেইনা, কিন্তু মূল মেকানিজম বুঝতে বিজ্ঞানীদের খবর হয়ে যাচ্ছে।
বইটার ভূমিকা থেকে: The human brain contains one hundred billion nerve cells and is arguably the most complex machine in the known universe. Somehow it generates our consciousness and determines our every action and thought.
But how does the brain work?
বিজ্ঞানীরা এখনো খুব প্রাথমিক পর্যায়ে আছে ব্রেনের গবেষণায়। তবে এর মধ্যেই অনেক রহস্যের উন্মোচন হচ্ছে। যেমন কিভাবে আমরা শিখি। কিভাবে একজন মানুষের চেহারা আমাদের ব্রেন মনে রাখে।
কিভাবে আমরা পড়তে শিখি বা বর্হিজগত সম্পর্কে জানতে শিখি।
পারসেপশন বা ধারনা নিয়ে একটা মজার এক্সপেরিমেন্টের কথা পড়ছিলাম। এক্সপেরিমেন্টটা এরকম। একটা ঘরে অনেকজন মানুষকে একটা রেকর্ড করা টিভির দৃশ্য দেখতে বলা হয়েছে। একটা বাস্কেটবল খেলার দৃশ্য।
যাদের এই এক্সপেরিমেন্টে ব্যবহার করা হচ্ছে তাদের বলা হলো, বাস্কেটবল খেলায় বল আদানপ্রদান গুনতে হবে। কতগুুলো বল আদানপ্রদান করা হচ্ছে।
কয়েক মিনিটের এই দৃশ্য দেখানোর পরে জানতে চাওয়া হলো কে কয়টা বল আদানপ্রদান গুনেছে। একই সাথে জিজ্ঞেস করা হলো কোন অস্বাভাবিক দৃশ্য কেউ খেয়াল করেছে কি না। প্রত্যেকেই বল গোনার সংখ্যা মোটামুটি ঠিকভাবেই বলেছে এবং সাথে আরো জানায় যে অস্বাভাবিক কিছু চোখে পড়ে নাই।
এক্সপেরিমেন্ট পরিচালনাকারি তখন মনে মনে মুচকি হাসি হাসছেন। কারন দৃশ্যের ভিতরে বিশাল অস্বাভাবিকতত্ত্ব ঢুকানো হয়েছিলো। কিন্তু আমাদের মহা রহস্যময় ব্রেইন সেই অস্বাভাবিকত্ত্বটা ধরতে দেয় নাই।
ঘটনা এইরকম। বাস্কেটবল খেলার দৃশ্যের ভিতরে এক পর্যায়ের কালো রঙের গরিলার পোষাক পরা একটা মানুষ কোর্টের একপাশ থেকে হেটে আরেকপাশে বেরিয়ে যায়।
সবার চোখের সামনে দিয়ে। কিন্তু দর্শকেরা যেহেতু বলের আদানপ্রদানগুনছিলো তাই কেউই সেটা খেয়াল করে নাই।
এক্সপেরিমেন্টের উদ্দেশ্যেটা ছিলো এই থিওরীকে প্রমান করা যে আমাদের ব্রেইন (চোখ থেকে শুরু করে নার্ভাস সিস্টেম সবাই এর সাথে জড়িত) সিলেকটিভ পার্সেপশন তৈরী করে অনেক সময়ে। যেমন আমরা এই যে এই লেখাগুলো পড়ছি, আমাদের ব্রেইন প্রতিটি অক্ষরের স্মৃতি, শব্দের স্মৃতি, বাক্য গঠনের স্মৃতি ফায়ারিং করছে নিউরনে। অর্থ তৈরী হচ্ছে, ভাবনা তৈরী হচ্ছে।
আমাদের চারপাশের জগতে আরো অনেককিছু ঘটছে। যেমন আপনার পাশের ঘরে হয়তো গান বাজছে, বাবা হয়তো কথা বলছে, আমার বাড়ির নিচে বাচ্চাদের খেলার শব্দ, জানালায় দুটো কাক ডাকছে, বাথরুমে পানির শব্দ। কিন্তু ব্রেইন এক ধরনের সুকৌশলি ফিলটার ব্যবহার করে। ফলে মনোযোগের জায়গার বাইরের অপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলো সে ফিলটার করে বাদ দিয়ে দিচ্ছে।
যেটা বাক্সেটবল খেলা থেকে ইন্টারেস্টিং তা হলো সবাই বল পাসে এতটাই মনোযোগি ছিলো যে পুরো স্ক্রিন জুড়ে একটা কালো গরিলার পোষাকে মানুষ চলে যাওয়াও কেউ খেয়াল করলো না।
অথচ চোখ কিন্তু ঠিকই সেটা দেখেছে। ব্র্রেইন সেটা রেজিস্টার করে নাই।
এই যে পার্সেপশন তৈরী হওয়া এটার সুদুর প্রসারী ভূমিকা আছে কিভাবে আমরা একটা বিষয় দেখি, তা থেকে কতখানি গ্রহন করি। যখন কোন যুক্তি উপস্থাপন করা হয়, কোন তথ্য আমাদের সামনে দেওয়া হয়; তখন অনেক সময়ে আমরা সিলেকটেড পার্সেপশন নিয়ে থাকি। আমাদের মেন্টাল কনস্ট্রাকশন, চিন্তার পরিধির উপরে ভিত্তি করে আমরা সিদ্ধান্ত নেই (অনেকটা অবচেতনভাবেই) কতটুকু আমরা গ্রহন করবো।
একেকজনের একেকভাবে বোঝার ব্যাপারটাও এভাবেই হয়।
যা দেখি তার পুরোটা দেখি না, যা চিনি তার পুরোটা চিনি না। প্রকৃতি নিবিড় মমতায় তাঁর নানান রহস্য লুকিয়ে রাখার নানান কারিগরি করেন। ব্রেইনের রহস্যগুলো উন্মোচনে তার সেই কারিগরির দিকগুলোই ধীরে ধীরে জানতে পারছে দ্্বিতীয় কারিগর, মানুষেরা।
Over their hearts We have laid veils which prevent them from understanding ... (The Quran, 17:46)
They have no knowledge or wisdom; for he has put a veil over their eyes, so that they may not see; and on their hearts, so that they may not give attention. - The Bible (Isaiah 44:18)
:: [link|http://mysticsaint.blogspot.com/2007/03/veils-on-heart-how-to-remove-it.html|Ab
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।