ইচ্ছেমতো লেখার স্বাধীন খাতা....
কেওক্রাডংয়ের চুড়ায় বসে সঙ্গে নেয়া খাবার বের করে খেলাম। পাহাড়ে চলার সময় প্রচুর ঝর্ণা পাওয়া যায়। এগুলোর পানি খুব পরিষ্কার। এ পানিই বোতলে ভরে আমরা খেতাম। প্রথম 2-1 দিন পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট মিশিয়ে খাওয়া হতো কিন্তু পরে ট্যাবলেট আর ব্যবহার করা হয়নি।
দুপুর দুইটার দিকে আমরা কেওক্রাডং ছেড়ে থাইকিয়াং পাড়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। হাটতে হাটতে মাইলের পর মাইল বাশ বন এক সময় শেষ হয়ে আসলো। শুরু হলো তৃণভূমি। একসময় দেখলাম, পথের দুপাশে শুধু হলুদ এক ধরনের বনফুলে ভরা। কিছু পাহাড়ি বুনো মরিচ দেখলাম।
সাইজে খুব ছোট হলেও প্রচণ্ড ঝাল। কিছুণ পর আগুন দিয়ে পোড়ানো গাছপালা দেখতে পেলাম। বুঝতে পারলাম, মানব বসতির কাছে এসে গিয়েছি।
পাহাড়িরা জুম চাষ করার জন্য প্রথমে আগুন দিয়ে গাছপালা পুড়িয়ে দেয়। তারপর সেখানে বীজ বপন করা হয়।
আগুন দিয়ে পোড়ানোর সময় গাছপালা এবং বনের পশু পাখিদের প্রচুর তি হয়। সন্ধ্যার আগেই আমরা গিয়ে পৌছলাম থাইকিয়াং পাড়ায়।
বেশ বড় এক মানব বসতি। এ এলাকায় কোনো আর্মি ক্যাম্প নাই। তাই কোনো বাঙালিও নাই।
সম্পূর্ণ এলাকাটি পাহাড়িদের। গ্রামের কাছে এক জায়গায় বড় করে লেখা ZL. ওটা দেখিয়ে বন্ধুদের জিজ্ঞাসা করছিলাম ZL মানে কি? কেউ বলতে পারলো না। অবশেষে আমি নিজেই ব্যাপারটা আবিষ্কার করলাম- জুম ল্যান্ড। আশপাশের পাহাড়ে প্রচুর জুম চাষ হয়।
থাইকিয়াং পাড়ায় গিয়ে বাঝতে পারলাম, এখানকার নিজস্ব সংস্কৃতি বেশ শক্তিশালী।
লোকজন অনেকটা শহরের লোকের মতো সাবলীল বলে মনে হলো। আমাদের উপস্থিতি সেখানে বেশ বেমানান।
এখানকার লোকজন আমাদের দেখলেই মুখ গোমড়া করে ফেলছে। ইতিমধ্যে আমরা পথের পরিশ্রমেও ক্লান্ত ছিলাম। গ্রামের একেবারে ভেতরে চলে গেলাম।
গাইড সাং লিয়েনের তৎপরতায় আমাদের থাকার ব্যবস্থা হলো গ্রামের অ্যাসিস্ট্যান্ট কারবারীর ( গ্রাম প্রধান) বাসায়। প্রত্যেকটি বাসাই মাচার উপরে তৈরি। আমরা যে বাসটায় উঠলাম তার ভেতরে একটা বিশাল ঘর। ভেতরে তিন দিকেই বেঞ্চির মতো করে বসার ব্যবস্থা আছে। একপাশে বাশের টেবিল এবং টুল।
কারবারি সাহেব খুব গম্ভীর ভাবে একপাশে বসে আছে। হাতে একটা বড় সাইজের রেডিও। তাতে লাসাই স্টেশনের গান বাজছে। এই ঘরের লগোয়া কয়েকটি ছোট ঘর। বাইরে বিশাল সাইজের বারান্দা।
সবই বাশের মাচার উপর তৈরি।
কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয়ার পর আমরা কারবারি সাহেবের সঙ্গে খাতির করার চেষ্টা করছিলাম। বাংলা জানে না। কিন্তু গাইড সাং লিয়েন আছে। এছাড়াও হাত-পা দিয়ে ইশারা করেও খাতির জমানোর চেষ্টা করলাম।
কিন্তু বিশেষ সুবিধা হলো না। ব্যটা খুবই গম্ভির। আমাদের সম্ভবত পছন্দ করছে না। তার বাসা থেকে বের হয়ে বাইরে আসলাম।
গ্রামের ঘরগুলোকে খুবই সুন্দর লাগছিল ।
সবই স্থানিয় উপকরণে তৈরি। আমরা সাতজন এবং গাইড আশপাশে ঘুরে দেখতে বের হলাম। হাতে তুলে নিলাম নাম না জানা বুনো ফুল। কয়েক বন্ধ ুএগুলো কানেও গুজে নিলো। এ সময়ই চার পাচ জন হাসিখুশি তরুণির সঙ্গে দেখা।
আমাদের ফুলের সাজ দেখে বলে তারা উঠল মাঃআঃ।
লিয়েনের কাছে জিজ্ঞাসা করে জানলাম, কথাটার অর্থ হচ্ছে, পাগল। লিয়েনের কাছে জিজ্ঞাসা করলাম, সুন্দর -কথাটা কি হবে?
শুনলাম, আমাদের মতো যারা কোনো কাজ ছাড়াই পাহাড়ে চষে বেড়ায় তাদের ওরা পাগল মনে করে। এভাবে আরো কিছু হাসিখুশি কথাবার্তা চলল। এরপর বন্ধুদের বললাম, কথাবার্তা যেন কিছুতেই টাংকি মারার পর্যায়ে না যায়।
কোনো কারনে তারা যদি অসন্তুষ্ট হয়ে যায় তাহলে কিন্তু জান বাচানোর কোনো উপায় নাই। এরপর অবশ্য তাদের সঙ্গে আর খাতির হয়নি।
এখানে পাহাড়িদের নিজস্ব স্কুল আছে। এই স্কুলের শিক্ষক দ্রাম হাউ। তিনি আমাদের গাইডকে পরবর্তী গন্তব্য সম্বন্ধে ভালো করে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন।
সন্ধ্যায় স্থানীয় আরও কয়েকজন লোকের সঙ্গে আলাপ হলো। তবে কারও সঙ্গেই কথাবার্তা তেমন জমেনি।
কারবারি সাহেবের বাড়িটা বেশ আরামদায়ক। বিশেষ করে আমাদের তাবুতে থাকার চেয়ে হাজার গুণ ভাল। সন্ধ্যা নামতেই খাওয়াদাওয়া শেষ করে তার দেওয়া হাতে তৈরি কম্বলের নিচে ঢুকে ঘুমিয়ে পড়ি।
(ছবি: থাইকিয়াং পাড়া)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।