আনু ভাই নেই, আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন, একথা কোনো ভাবেই বিশ্বাস করতে পারছিনা। আমার দুর্ভাগ্য, প্রিয় মানুষটিকে শেষবারের মতো দেখতেও পারলাম না। শুক্রবার রাতে ব্যাংকক থেকে ফিরেছি। ওখানে থাকতেই এ দুসঃবাদটি পেলাম। যখন এসে পেৌঁছলাম ততক্ষনে সব শেষ।
কখনো কল্পনাও করিনি আনু ভাইয়ের সঙ্গে নবাব সিরাজউদ্দেৌলা চলচ্চিত্রে কাজ করবো। তাও আলেয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে আমার মতো নতুন একজন অভিনেত্রীকে খান আতা ভাই নির্বাচন করবেন এটি অবিশ্বাস্য। আনোয়ার ভাই জাঁদরেল অভিনেতা।
তার সঙ্গে অভিনয় করার সাহস সবার ছিলো না। বিশেষ করে আমার মতো নতুন একজন অভিনয় শিল্পীর পক্ষেতো নয়ই। এটা ছিল স্বপ্নের মত। আমি রীতিমতো বেঁকে বসলাম। আতা ভাই তো রেগে আগুন।
আনু ভাই এগিয়ে এলেন, বললেন কোন সমস্যা হবে না, আমি আছি, তুমি পারবে। তার মতো এত বড় মাপের অভিনেতার অভয়ে আমার মধ্যে আস্থা ও সাহস দুইই সঞ্চিত হলো। প্রবল উৎসাহে মনপ্রাণ উজাড় করে কাজ করলাম। শুটিংয়ের সময় আনু ভাই এতটাই সহযোগিতা করলেন যে আমি বুঝতেই পারিনি কখন কাজ শেষ হয়ে গেছে।
চলচ্চিত্রটি মুক্তি পাওয়ার পর একবার এক মজার ঘটনা ঘটল।
কক্সবাজারে শুটিংয়ে গেলাম। হঠাৎ এক লোক এসে আমাকে বললেন আপনি এখনো অভিনয় করছেন? তার কথায় হতচকিত হয়ে গেলাম। জানতে চাইলাম এ ধরনের প্রশ্ন কেন। তিনি বললেন আপনার জন্য তো আলেয়া চরিত্রই যথষ্টে। আর কোনো চরিত্রের প্রয়োজন নেই।
তিনি দুটো অনুরোধ করলেন আমাকে। একটি হচ্ছে- আমি যেন আর কোনো চরিত্রে অভিনয় না করি এবং অন্যটি হলো বয়স ধরে রেখে আজীবন যেন আলেয়া হয়েই থাকি। তার কথায় গর্ববোধ করলাম। মনে হলো সত্যি আলেয়া হতে পেরেছি। আর এটা সম্ভব হয়েছে শুধুই আনু ভাইয়ের অকৃপন সহযোগিতার জন্য।
বাস্তবের সাধারণ আনোয়ারা বুঝি পর্দায় অসাধারণ আলেয়া হয়ে গেছি। আজো নিজের কাছে নিজের অভিনীত আলেয়া চরিত্রটি শ্রেষ্ঠ চরিত্র হয়ে আছে। আনোয়ার ভাই সম্পর্কে বলি, চলচ্চিত্রটিতে তার দক্ষ অভিনয় দেখে বুঝলাম সত্যিই তিনি নবাব। চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পর মঞ্চে প্রায় আটশতবার আনোয়ার হেসেনের সঙ্গে আলেয়ার চরিত্রে অভিনয় করেছি। প্রতিবারই নতুনভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতেন তিনি।
একবার এক চলচ্চিত্রের কাজে আমি, আনোয়ার ভাই ও মুস্তাফা ভাই আউটডোরে গেলাম। এক লোক এসে আমাকে আর মুস্তাফা ভাইকে হাতে সালাম দিলেন আর আনোয়ার ভাইকে পায়ে ধরে সালাম করলেন। মুস্তাফা ভাই কিছুটা অবাক হয়ে লোকটির কাছে জানতে চাইলেন আনোয়ার ভাইকে পায়ে ধরে সালাম করলেন কেন? লোকটি জোর দিয়ে বললেন- উনি তো নবাব সিরাজউদ্দেৌলা। তাই নবাবকে তো পায়ে ধরেই সালাম করতে হবে। বুঝলাম, আনোয়ার ভাই সত্যিই দর্শকের মনে প্রকৃত নবাব হয়ে গেছেন।
এতো গেলো সিরাজউদ্দেৌলা প্রসঙ্গ। আনু ভাইয়ের সঙ্গে কম করে হলেও অর্ধশত চলচ্চিত্রে কাজ করার সেৌভাগ্য আমার হয়েছে। প্রতিটি কাজেই তার অসাধারণ দক্ষতা সত্যিই শেখার মতো। তিনি নিজেই পূণর্াঙ্গ একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কখনো রাগ করতে দেখিনি তাকে।
মানুষ যে কতটা অমায়িক, ভদ্র, নম্র হতে পারে আনু ভাইকে না দেখলে কখনো তা বুঝতে পারতাম না। আনোয়ার হোসেনের আদর্শ, সততা কর্মনিষ্ঠা নিঃসন্দেহে সর্বকালের সব মানুষ বিশেষ করে শিল্পীদের জন্য অনুসরনীয় হয়ে থাকবে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।