আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কেন বার বার দক্ষিণ আফ্রিকা?

.......অতঃপর মৃত্যুর প্রতীক্ষা

সালটা 1992। চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র তখন। ক্রিকেট খেলাটা সবে বুঝতে শিখেছি বিশ্বকাপ দেখে। শুনেছিলাম প্রথমবারের মত বিশ্বকাপ খেলতে এসেছে দক্ষিণ আফ্রিকা নামের একটা দল। তাদের প্রথম ম্যাচে সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে তারা নয় উইকেটে হারায়।

দলনেতা কেপলার ওয়েসেলস 81 রান করে ম্যান অব দি ম্যাচ হন। মাঝে শ্রীলংকা আর দুর্দান্ত মার্টিন ক্রোর নিউজিল্যান্ডের কাছে হারে। মনে পড়ে উইকেট নেবার পরও মুখ গম্ভীর করে থাকা বোলার রিচার্ড স্নেলের কথা। বৃষ্টি বিঘি্নত ম্যাচে হারায় সেবারের চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তানকে। সে ম্যাচে ইনজামাম 48 রান করে রান আউট হন।

আবার হারে ইংল্যান্ডের কাছে। প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে আসা দলটি পেয়ে যায় সেমিফাইনালের ছাড়পত্র। মনে পড়ে সে বিখ্যাত সেমিফাইনালে ইয়ান বোথামের মিডিল স্ট্যাম্প টুকরো হয়ে গিয়েছিল ব্রায়ান ম্যাকমিলানের বলে। ফিল্ডিং বিস্ময় রোডসের উইকেট কামড়ে থেকে সংগ্রামের দৃশ্য। 45 ওভারে করা 256 এর মত রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমেছিল নবাগত দলটি।

6 উইকেট পড়ার পর অদ্ভুত বৃষ্টি আইনের যুপকাষ্ঠে নিষ্ঠুরভাবে বলি দেওয়া হলো তাদের। এতটা দূর সংগ্রামের পর 16 বলে 22 রান হাতে চার উইকেট বৃষ্টি থামার পর হয়ে গেলো 1 বলে 22 রানের বর্বর তামাশায়। অনেকে আমাকে ডার্ক ওয়ার্থ লুইসের কথা বলেন। তারা জানেনা ডার্ক ওয়ার্থের নিয়ম আরো অনেক পরে চালু হয়েছে। 1 বল খেলার তামাশা সম্পন্ন করতে ব্যাট করতে নামলেন সেই ব্রায়ান ম্যাকমিলান তার বিষন্ন চেহারা নিয়ে।

আমি বিস্ময়ে রুদ্ধবাক, ড্রেসিংরুমে বসে থাকা কেপলার ওয়েসেলসের অসহায় চেহারা - সবমিলিয়ে দুবের্াধ্য-অন্ধকার মনে হতে থাকে খেলাটা। 1996 সাল। প্রথম রাউন্ডের 5 ম্যাচের 5 টাতেই জিতে 2য়রাউন্ডের নক আউটে বাদ পড়লো লারা নামক এক 'হঠাৎ' নায়কের কাছে। 1999 সাল। 17ই জুন।

দ্বিগুণ কষ্টের দিন। আমার এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্টের দিন। দেখা হয়নি সেই সেমিফাইনালের 1ম অর্ধ খেলা। স্ট্যান্ড করতে পারিনি বলে সারাদিন চোখের পানি ফেলে পুরোপুরি বাকশূণ্য অনুভূতিশূণ্য হয়ে রাতে শেষ 10 ওভার দেখতে বসেছি। তারপর সেই টাইয়ের দৃশ্য-না হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায়ের দৃশ্য দেখে আমি আজও আবেগ আক্রান্ত হয়ে পড়ি, স্তব্ধ হয়ে বসে থাকি কিছুক্ষণ।

গত বিশ্বকাপে দলের ভুল হিসাবে বাদ পড়ার কথা করো অজানা নয়। 1992 এ পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিছু সুবিধাবাদী সমর্থক 1999 সাল থেকে ক্লুজনারকে দেখে দক্ষিণ আফ্রিকা সমর্থন করে। নিবের্াধের মত সমর্থন পরিবর্তন বা একাধিক দলকে সমর্থন দেয়ার মানে হয়না। দক্ষিণ আফ্রিকা এমন একটা দল যাতে ওয়ার্ন তো দূরে থাক, জাইলসের মত স্পিনার নেই, তারা স্পিন ভালো খেলেনা। নেই শচীন, লারা, মুরালি, ওয়াসিম-ওয়াকার-ইনজামাম, স্টিভ ওয়াহ, পন্টিং, ব্রাডম্যান, বোথামের মত দানবীয় কিংবদন্তী।

তারপরও তারা সবাই 10 /20 রান করে সবাই 1/2 উইকেট নিয়ে যন্ত্রের মত খেলে দলকে জেতায়। পাকিস্তানকে টানা 14 টা ওয়ানডে হারানোর রেকর্ড আছে তাদের। খেলায় দক্ষিণ আফ্রিকার অবস্থা খারাপ দেখলে কষ্ট নিয়ে উঠে চলে যাই-মনে হয় যোগ্যের প্রতি অবিচার চলছে-ভালো থাকলে একাই বসে খেলা দেখি। আমি ভারত-পাকিস্তানের হুজুগকে ঘৃণা করি-তাই তাদের খেলা দেখিইনা। 434/438 রানের খেলাতে অস্ট্রেলিয়ার 245/2 , 35 ওভার দেখে কষ্টে সরে আসি, মনে হয়েছিল আবারও অবিচার হচ্ছে সেই দলটির প্রতি যারা দানব হয়ে ওঠা দলটিকে কিছুদিন আগে 93 রানে অলআউট করে জিতেছিল 196 রানে।

এরপরও ভাগ্যকে যারা বিশ্বাস করেনা তারা মূর্খ, অজ্ঞ, বধির। যেখানে 334 রান টপকানোর ইতিহাস নাই সেখানে আমার দল দেখিয়েছে 434 রান টপকানোর অশরীরী শক্তির প্রদর্শনী। জয় তো তাদেরই প্রাপ্য। সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারত-পাকিস্তান সমর্থকদের উল্লাসে চাপা পড়ে গিয়েছিল এদেশে দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে পুরোনো, নি:স্বার্থ, একনিষ্ঠ সমর্থকটির হৃদয়ে প্রস্তরভারে বহুকাল আটকে থাকা কষ্ট মুক্তির অনির্বচনীয় আনন্দধ্বনি। (আইসিসি র্যাঙ্কিং এ শীর্ষে থাকলেও তাদের সম্ভাব্য শিরোপাধারী মনে করছেনা কেউ)



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।