আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রেমেক্কার শ্বশুর বাড়ি

সাহিত্যের সাইটhttp://www.samowiki.net। বইয়ের সাইট http://www.boierdokan.com

তখন আমি থার্ড ইয়ারে। পকেটে টাকা পয়সা নাই। কিন্তু নিত্যানন্দের মতো মদ আনো মদ আনো অবস্থা। শীতকালে বিরহী উত্তুরে বাতাস খালি মন কাঁপিয়ে যায়।

হঠাৎ রাস্তায় সঞ্জীবের সঙ্গে দেখা। সঞ্জীব বলে চলো বন্ধু মদ খাই। আমি বলি কেমনে খাবা? পকেটে টাকা পয়সা আছে আছে কিছু? সঞ্জীব দিলদরিয়া বলে চলো। অসুবিধা নাই। কই যাবা সাভার না নবীনগর? না চলো আজকে প্রেমাক্কার শ্বশুর বাড়ি যাই।

শ্যাপেল মানে শাপলু নাকি এই নতুুন ঠেক আবিষ্কার করছে। তবে তাই হোক, তুমি এসো হৃদয়ে। চলো। বাসে করে সাভার যেতে যেতে সঞ্জীব প্রেমাক্কার কথা বলে। প্রেমাক্কা সাভার তেকে রাজাসন পর্যন্ত রাস্তায় রিকশা চালাইতো।

পরে কী কারণে জানি মারা গেছে। প্রেমাক্কার মৃতু্যর আগে তার শ্বশুর মারা গেছে। শ্বশুর কী করতো তা অবশ্য জানা যায় না। ওদের পরিবারে বেঁচে আছে শুধু প্রেমাক্কার বউ আর শ্বাশুড়ী। শ্যাপল নাকি বলছে, সাভার স্ট্যান্ডে যে কাউরে প্রেমাক্কার শ্বশুর বাড়ি বললে চিনবে।

সে মোতাবেক আমরা জিজ্ঞাস করি। কিন্তু কেউ বলতে পারে না। ফলে অনির্দিষ্ট ভাড়া ও গন্তব্য সূত্রে একটা রিকশা ভাড়া হয়। সে আমাদের রাজাসন পার হয়ে কমলাপুর নামক এক স্থানে নিয়ে ফেলে দেয়। দুইদিকে সরিষার হলুদ আর মূলার শাদা আবাদ।

হাঁটত হাঁটতে বিকাল হয় হয়। এমন সময় একটা দোকান দেখা যায়। সঞ্জীব বলে চলো, চা সিগারেট কিছু খাই। চা খাইতে খাইতে দোকানদারকে জিগাই। ভাই, মদ্যাহার কিছু জুটিবে এ স্থানে? তিনি বলে নিকটের ভদ্রমহোদয়ের জন্য একখানা শুড়িখানা আছে বঠে।

তার নির্দেশনা মোতাবেক আমরা দূরে তালগাছের নিচে একখানা বাড়িকে লক্ষ্য করিয়া পথ চলিতে শুরু করি। হাটতে হাটতে বাড়ির কাছে গেলে একটি স্ত্রী লোক আমার লম্বা চুল দেখে হাসে। বলে, কারে খুঁজেন। আমরা অন্ধকারে ঢিল ছোঁড়ার মতো করে বলি এটাই কি প্রেমাক্কার শ্বশুর বাড়ি। তিনি বলেন আপনারা যথাস্থানেই আসিয়াছেন।

গলা ভিজাইবার মতো কিছু মিলিবে কি? তিনি বললেন এইখানে খাবেন না নিয়া যাবেন? আমরা বাড়ির ছাগদিগের গন্ধে ব্যাকুল হইয়া মদ্য সঙ্গে লইয়া অন্যত্র প্রস্থান করিবার সিদ্ধান্তে আসি লাম। পকেটে একটি বোতল কেনার সামর্থ নাই বলিয়া দুই বন্ধু দুটি পলিথিনে পর্যাপ্ত মদ্য নিয়া মুদ্রা পরিশোধ করিলাম। ফিরিব কি? পথিমধ্যে একটি সরিষা ক্ষেত পড়িলে সেই নির্জন জনমানবহীন ক্ষেত্রে মদ্যাহার সারিবার মনস্থ করিলাম। কিন্তু কি দিয়া খাইব? বসিয়া ভাবিতেছি। সঞ্জীব বলিল, বন্ধু দেখ।

তার অঙ্গুলি অনুসরণ করিয়া দেখিলাম, দূরে বংশাই নদীর শুকনা প্রবাহের অপর তীরে একটি দোকান। সেখানে গিয়া মুড়ি চানাচুর মিলিল। সঙ্গে কিছু পেয়াজ ও কাঁচা লঙ্কা, সরিষার তেল। আরেকটি পলিথিনে সেগুলি মাখাইয়া আবারও নির্জন ক্ষেতে আসিলাম। পলিথিনে ছিদ্র করিয়া মদ্যাহার শুরু করিলাম।

এইভাবে সন্ধ্যা ঘনাইলো। সঞ্জীব বলিল, বন্ধু চলো। আমি বলিলাম চলো। ফিরিবার পথে দেখিলাম। ওই স্থানে খুব কাছেই সাধু জোসেফের গির্জা অবস্থিত।

গির্জাটি হয়তো তথাস্থানেই আছে। কিন্তু প্রেমক্কার স্ত্রী ও শ্বাশুড়ি কেমন আছে কে জানে!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.