প্রত্নতত্ত্ব, ঐতিহ্য , সংস্কৃতি, ইতিহাস, শিল্পকলা, জাতিতত্ত্ব
ব্রোঞ্জের তৈরি একটি ঘোড়া এবং কার্নেলিয়ান পাথরের তৈরি একটি নেকড়ে বাঘ; দুটি ভাস্কর্যই ক্ষীপ্র এবং উদ্ধত । আমাদের পূর্ব প্রজন্মের মানুষেরা কি বেপরোয়া অথবা অসীম সাহসী ছিল? অথবা ক্ষীপ্র, উদ্ধত, বেপরোয়া বা অসীম সাহসী হওয়ার স্বপ্ন দেখতো?
উয়ারী-বটেশ্বর কে আমরা বলছি আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন একটি সভ্যতার রাজধানী। ঊয়ারী-বটেশ্বরকে কেন্দ্রকরে এখন পর্যন্ত চিহ্নিত 48 টি প্রত্নস্থান জুড়ে এর বিস্তৃতি ছিল। প্রশ্ন হলো, কেন আমরা এই অঞ্চলটিকেই রাজধানী বা সভ্যতার কেন্দ্র বলছি? পাঁচটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যর জন্য এমনটা বলছি আমরা। এগুলো হলো:
1. বাণিজ্যকেন্দ্র: নদীতীরবতর্ী উয়ারী-বটেশ্বর অঞ্চলটির পাশ দিয়ে প্রবহমান পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ হয়ে বঙ্গোপসাগরের মধ্য দিয়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া হয়ে সুদূর রোমান সাম্রাজ্য পর্যন্ত ব্যবসা-বাণিজ্য চলতো।
উয়ারীর ভূ-প্রাকৃতিক বিন্যাস এবং উয়ারীতে প্রাপ্ত বিভিন্ন প্রত্ননিদর্শন বাণিজ্য-কেন্দ্র হিসেবে উয়ারীর সম্ভাবনাকে নিশ্চিত করে।
2. নগর-পরিকল্পনা: এখানকার প্রশস্ত রাস্তা, বাইলেন, বিভিন্ন ধরনের স্থাাপত্য উয়ারীর উন্নত নগর-পরিকল্পনার পরিচায়ক। প্রত্নস্থানটিকে সমসাময়িক গ্রীক ও রোমান সভ্যতার সাথে তুলনীয়।
3. কেন্দ্রীয় শাসন ও মুদ্রাব্যবস্থা : জনপদ এবং কেন্দ্রীয় শাসন এবং মুদ্রা-ব্যবস্থার প্রতীক রূপে প্রাপ্ত বিপুল পরিমাণে ছাপাঙ্কিত রৌপ্যমুদ্রা স্থানটিকে প্রাক-নাগরিক জনপদ ও পরবতর্ীকালের নাগরিক সভ্যতার সুস্পষ্ট প্রমাণ। এখানে বিশেষভাবে বলা দরকার, উয়ারী-বটেশ্বরে প্রাপ্ত মুদ্রা বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন মুদ্রাগুলোর সমসাময়িক।
4. প্রতিরক্ষা : উয়ারী প্রত্নস্থানের দুর্গপ্রাচীর, পরিখা, অসম রাজার গড় ও পরিখা এবং এ অঞ্চলে প্রাপ্ত প্রচুর পরিমাণে লৌহ-নির্মিত হস্ত-কুঠার (?), বল্লম, পোড়ামাটির নিপোস্ত্র, উয়ারীর শক্তিশালী প্রতিরা ব্যবস্থার প্রমাণ দেয়। দুর্গপ্রাচীরের নিকটে এই সব যুদ্ধাস্ত্রের প্রাপ্তি থেকে মনে হয়, কখনও কখনও দুর্গে প্রবেশোন্মুখ বর্হিশত্রুর আক্রমণ ঠেকানোর কাজে এর ব্যবহার হয়েছিল। হাবিবুল্লা পাঠান মনে করেন, গ্রিক বীর আলেকজান্ডার গঙ্গা নদীর পূর্ব তীরে যে পরাক্রমশালী গঙ্গরিডি জাতির বসবাসের কথা শুনেছেন সম্ভবত তার অবস্থান ছিল আজকের উয়ারী-বটেশ্বর।
5. শিল্পকলা ও শিল্পবোধ: উয়ারীতে প্রাপ্ত বিপুল পরিমাণে এবং খুবই উন্নতমানের লৌহ, মূল্যবান পাথর, মৃন্ময় এবং কাচের জিনিসপত্র এই অঞ্চলে এই চারটি শিল্পের উৎকর্ষের প্রমাণ বহন করে। পঞ্চমত, বিপুল পরিমাণে বিশ্বাস-প্রতীক (তাবিজ), কিছু বিশ্বাস-পাত্র (ধমর্ীয় কাজে ব্যবহৃত) এই অঞ্চলের মানুষের চিন্তা ও দর্শনের বিকাশের ইঙ্গিত বহন করে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।