www.runews.weebly.com
'এ যুগের লেখাপড়া একেবারে পানসে। কোন স্বাদ নেই। তাই পড়াশোনা করেও কিছু হয় না। তেল আর জল যেম মিশ খায় না, তেমনি পড়াশোনা আর ছাত্র-ছাত্রীদের মন মানসিকতা মিশ খায় না। সব জ্ঞান-বিজ্ঞান আলাদা হয়ে থাকে।
' শিতি মানুষের মুখে এমন কথা শোনা যেতেই পারে। তবে এেেকবারে প্রাতিষ্ঠানিক শিা না থাকা কেউ যদি হালের লেখাপড়াকে এ ভাষায় কটা করে তবে অনেকেরই চোখ কপালে উঠার কথা। তবে সেই মানুষটির কীর্তিটাও অবাক করার মত। এরকম একজন মানুষ যদি আল কোরআনের অনুবাদ করে ফেলেন তবে চোখ তো আসলেই কপালে উঠার যোগাড় হবে।
এই মানুষটির নাম মোহাম্মদ খলিলউল্লাহ।
গ্রামের লোকজন ডাকেন খলিল মহাজন বলে। বরেন্দ্র অঞ্চলের একেবারে প্রত্যান্ত এলাকায় 99 বছর বয়সেও খটখটিয়ে হেটে বেড়ান এই মানুষটি। শীর্ণ শরীর, বয়সের ভাবে ন্বু্যজ। শীতকালের ঠান্ডায় কথায় কথায় হাফিয়ে উঠেন। বয়স নির্মমভাবে দাঁত বসিয়েছে পুরো শরীরেই।
বয়সের কথা জিজ্ঞাসা করতেই খিলখিল করে হেসে উঠলেন। জড়ানো ভাষায় কাব্য করে যে কথা বলে উঠলেন তার সাধারণ অর্থ দাড়ায় তিনি অনেক প্রাচীন, পুরোনো।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী ডাইংপাড়া মোড় থেকে আইহাই গ্রাম প্রায় 12 কিলোমিটার। একটা ছাদখোলা ভটভটিতে সওয়ার হয়ে চলেছি আইহাইতে। দুপাশে ফসলের তে।
শীতল বাতাস বইছে হু হু করে। যেন হাড়ে কাঁপন ধরিয়ে দেয়। এক সময় ঢুকলাম গ্রামের ভেতর। অনেক দুরে দুরে একেকটা গ্রাম। রাস্তার পাশের েেতর বেশিরভাগই পড়ে আছে পরবতর্ী ফসলের অপোয়।
তবে তার মাঝেও যতটুকু সবুজ তাতেই চোখ জুড়িয়ে আসে।
আইহাই গ্রামের মাঝামাঝিতে এসে শুনলাম খলিল উল্লাহর কথা। তিনিই নাকি প্রথম বাংলা কাব্যরীতিতে কোরআন শরীফের অনুবাদ করেছেন। গ্রামের ভেতরও রাস্তার দুপাশে সারি সারি মাটির বাড়ি। একতলা' দোতলা এই সব বাড়িই বরেন্দ্র অঞ্চলের ঐতিহ্য।
ভটভটি থামিয়ে একজনকে জিজ্ঞাসা করতেই জানা গেল খলিলউল্লাহর বাড়ির হদিস। 'আরেকটু সামনে এগিয়ে ডানে যান। জিজ্ঞাসা করলেই যে কেউ দেখিয়ে দেবে। ' রাস্তার ওপরে ভটভচি রেখে ডানে এগুলাম। সামনে প্রকান্ড আকারের মাটির একটা দোতলা বাড়ি।
সামনে অনেকগুলো গেট। তাকে পাওয়া গেল বাড়ির একেবারে পেছনের একটা মাটির ঘরের সামনের বরই তলায়। একটা বেঞ্চের ওপর বসে বসে কাশছেন।
পরিচয় পেয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠলেন। চেয়ার আনিয়ে বসারও ব্যবস্থা করলেন।
আলাপ শুরু হলো। জানালেন তার নিজের কথা। তার বাবার নাম ইয়াজউল্লাহ। তিনি ছিলেন বাবামায়ের একমাত্র সন্তান। বাবার ছিল অঢেল সম্পদ।
বেশ আদর আর আয়েশে থাকতেন। তবে তার পরেও শরীরে বাসা বেধেছিল কালাজ্বর আর যা। প্রায়ই অসূস্থ্য থাকতেন। বাবামা একমাত্র সন্তানের অসুস্থ্যতায় খুবই কাহিল হয়ে পড়েছিলেন। একদিন হঠাৎ করেই তাদের বাড়িতে এলেন একজন কামেল মানুষ।
তার নাম ছিল হযরত শাহ সুফী সাইফুদ্দিন সিরাজী আওলিয়া (রহঃ)। তার বাড়ি ছিল পাকিস্তানের পাঞ্জাবে। খলিলউল্লাহর অসুস্থ্যতা দেখে তিনি বাবামায়ের কাছ থেকে তাকে নিয়ে চলে গেলেন করাচীতে। এরপর ঘুরে বেড়ালেন ভারত-পাকিস্তানের বিভিন্ন এলাকায়। খলিলুল্লাহ বললেন, কোন পথ্য লাগে নি সুস্থ্য হতে।
15-16 বছর বয়সে তিনি একেবারে সুস্থ্য হয়ে ফেরত আসলেন বাবামায়ের কাছে।
বয়সে প্রায় যুবা কিন্তু পড়াশোনা তো হয় নি! বাবামায়ের চিন্তা ছেলে কি তবে বকলমই থাকবে? সাইফুদ্দিন সিরাজী তাকে বললেন,' যা কোরআন পড়। গবেষণা কর। ' সেই শুরু। আস্তে আস্তে পুরো কোরআন আয়ত্ব করলেন।
একসময় হাত দিলেন লেখার কাজে। এভাবেই মাত্র 397 দিনে অনুবাদ শেষ করলেন পুরো 30 পারা কোরআন। খলিলউল্লাহ বললেন, আমার আগে যারা কোরআন শরীফ অনুবাদ করেছে তাদের সবাই করেছে গদ্য রীতিতে। আমিই প্রথম ব্যাক্তি যে কাব্যরুপে কোরআন শরীফ অনুবাদ করেছি। '
1997 সালে প্রথম প্রকাশিত হয় তার লেখা 'ভাবানুবাদে কাব্যে কোরান।
' তবে এই বইয়ের কোথাও নিজের নাম লেখেন নি তিনি। লেখা রয়েছে তার পালিত পুত্রে দু সন্তান আউফা ও উসামার নাম। তিনি বললেন, আমার ছবি কিন্তু তোলা যাবে না। কত টেলিভিশন, পেপারের লোকজন এসেছে আমার বাড়িতে তবে কাউকেই আমি ছবি তুলতে দেই নি। আপনাদের কাছে অনুরোধ আমার ছবি তুলবেন না।
ব্যাক্তিগত জীবনে খলিলউল্লাহ 3 ছেলে ও 4 মেয়ের জনক। সেই সাথে নিজের সন্তান আদরে মানুষ করেছেন আরেকটি পালিত পুত্রকে। তিনি এখন লন্ডন প্রবাসী। সন্তানরা সবাই এখন প্রতিষ্ঠিত।
রাজনীতি করেন না তিনি।
বললেন, 1946 সালে একবার ভোট দিয়েছিলাম। তবে তার পর থেকে আর ভোট দেই নি। কারণ আমি সবাইকে সমান ভালোবাসি। একজনকে ভোট দিলে অন্যজনকে বঞ্চিত করা হবে। তাই ভোট দিতে যাই না।
এখনকার রাজনীতি নিয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে হাত নাড়িয়ে না, না বলে উঠলেন। আমি এ ব্যাপারে কোন কথাই বলতে পারবো না।
অঢেল সম্পদ তবে সে সবেও মন বসে না। খলিলউল্লাহ বললেন, প্রায় 27 বছর আমি টাকা পয়সা স্পর্শ করি না। কোথাও গেলে টাকা পয়সা সঙ্গীর কাছেই রাখি।
সেই খরচ করে। ' 'আমি খুবই কান্ত। তবে এখনো চশমা ছাড়াই পড়াশোনা করতে পারি। ' কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, কোনকিছুই বাদ দেন না। তবে কোরআন শরীফ পড়েন সবচেয়ে বেশি।
কারণটা তিনি বললেন, আমার সময় শেষ হয়ে আসছে। মানুষের মৃতু্যর সময় নাকি বেশি বেশি সূরা ইয়াসিন পড়তে হয়। প্রতিদিন 15-16 বার সূরা ইয়সিন, সূরা ওয়াকেআহ, সূরা রহমান, সূরা মুলক পড়ি। বয়স তো অনেক হলো। তাই প্রস্তুতি নিয়ে থাকা ভালো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।