আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফয়জরির গল্প বলি শোনেন

যা দেখি যা দেখি না, যা শুনি, যা শুনি না, যাপিত জীবনের পথে বা পথ-পাশ্বর্ের সবকিছুই

ফয়জরি _ দেখতে মোটামুটি, তবে ওর সবচেয়ে বড় সম্পদ ওর একহাড়া স্বাস্থ্য। মফস্বলের নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। ওর বাবা পাঠিয়েছিলেন ঢাকায় এক আত্মীয়ের বাসায়, মিরপুরে। সেখানে থেকে গার্মেন্টস-এ কাজ করবে, এটাই উদ্দেশ্য। কচুৰেত-এ একটা কাজও পেয়েছিল, কিন্তু কি হলো, গত সরকারের আমলে গার্মেন্টস-এ চাঁদা নিতে আসা বিএনপির এক ক্যাডারের চোখ পড়ে ওর দিকে।

সেটা 2001 সালের শেষ দিকের কথা। নতুন সরকার, নতুন দল, নতুন মাসত্দান। গার্মেন্টসের মালিকও ফয়জরিকে চাপ দেয়, মাসত্দান যা চায় তা দিয়ে দেওয়ার জন্য। ভয়ে ফয়জরি গার্মেন্টস-এ যাওয়া বন্ধ করে। তারপর ফয়জরির আত্মীয় খবর আনে সৌদি আরবে যাওয়ার কোনও এক এজেন্সির।

সেখান থেকে শুধু মেয়েদের পাঠানো হয়। টাকা লাগবে সত্তর হাজার। কিন্তু পঞ্চাশ হাজার এখন দিলে বাকিটা সৌদি আরবে চাকুরি করে দেওয়া যাবে। জমি বেঁচে, আরও কি কি সব করে ফয়জরির বাবা ওকে টাকা জোগাড় করে দেয়। ফয়জরির কোনও ভাই নেই, চারটে বোন।

সব ধাঁ ধাঁ করে গায়ে-গতরে বাড়ছে। বিয়ে না দিতে পারলে টানাটানি পড়বে যে কোনও দিন ওদের নিয়ে। এসব সাত-পাঁচ ভেবেই ফয়জরিকে সৌদি পাঠানো। প্রথমে ফয়জরির চাকরি হয় যে সৌদি পরিবারে সেখানে চারটে বাচ্চা। দু'টো কিশোর, দু'টো কিশোরী।

তারা ফয়জরিকে মারধোর করে, ফয়জরি ভাষা বোঝে না, তাই ওদের অর্ডারও বোঝে না। লাত্থি মারে, বেত দিয়ে পেটায়। ফয়জরি জানে না কার কাছে কি বলবে। ওই বাড়িতে আরও কাজ করে তিন জন বাঙালি। তার মধ্যে কুক ব্যাটা ফয়জরিকে রাতে-বিরাতে জাপ্টে ধরে।

ফয়জরি ভয় দেখায়, মালিককে বলে দেবে। কিন্তু সে ব্যাটা ফিক ফিক করে হাসে। আরেকদিন দুই সৌদি কিশোর টিভিতে কি সব ছবি দেখতে দেখতে ফয়জরিকে ডেকে নেয় ওদের রম্নমে। তারপর ফয়জরির কাপড় খুলে ওর শরীরের সঙ্গে টিভিতে দেখা শরীরকে মেলায়। যদিও তারা কিছু করে না, তবে তারা ফয়জরিকে এভাবে বার বারই ওদের রম্নমে ডেকে কাপড় খোলার নির্দেশ দেয়।

এরই মধ্যে গৃহকর্তা একদিন ফয়জরিকে ডেকে নিয়ে যায় নিজের রম্নমে। গৃহকর্তার তিন বউ। কিন্তু তারপরও গৃহকর্তা ফয়জরিকে যা করার তাই-ই করে। ফয়জরি গ্রেগন্যান্ট হয়। এক ভারতীয় ডাক্তার ডেকে এনে ফয়জরিকে ওয়াশ করানো হয়।

এরপর আর ফয়জরিকে নিয়ে কেউ কিছু ভাবেনি, না ওই কিশোরদ্বয়, না গৃহকর্তা, না বাঙালি কুক। ফয়জরি দেশে ফিরেছে 2006 সালের সেপ্টেম্বরে। টাকা-পয়সা ভালোই এনেছে সঙ্গে। দুইবোনকে বিয়ে দিয়েছে। এখন আরেক বোন বাকি, সে পড়ছে।

এবার মনে হয় নাইনে উঠলো। ফয়জরি গত নভেম্বরে আবার সৌদিতে চলে গেছে। যাওয়ার আগে এসব কথা বলেছিল। জিজ্ঞেস করলাম, এতোকিছুর পর আবার যাচ্ছিস কেন? ওর সোজা-সাপ্টা উত্তর, না গেলে খাওয়াইবো কে? বাপ-মারে দেখবো কে? এমনি এমনি কে খাওয়ায়? কে পরায়? সবাই খালি একটা জিনিসই চায়, দেহ। সেইটা দেওন দিয়া কথা, বাংলাদেশও যা, সৌদি আরবও তাই।

বরং সৌদি আরবে কি করি কেউ জানে না, বাংলাদেশে তো সব দিক দিয়াই মরণ, শরীলও দ্যাও, মাইনষের কথাও শোনো, আমার সৌদি আরবই ভালো। আমি নিরম্নত্তর। স্বাস্থ্য ভালো ফয়জরি এখনও সৌদিতে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.