আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নগরজুড়ে আবর্জনার ছড়াছড়ি

দুপুর ১২-৩০ মিনিট: নগরের স্টেশন রোড এলাকা। বিদ্যুৎ অফিস, ফলের দোকান, তৈরি পোশাক কারখানাসহ বেশ কয়েকটি হোটেল-রেস্তোরাঁ চারপাশে। মাঝখানে রিয়াজউদ্দিন বাজারে ঢোকার মুখে আবর্জনার ভাগাড়। কাঁচাবাজারের সবজির উচ্ছিষ্ট, পচা ফলমূল, মুরগির বর্জ্য ইত্যাদি একাকার হয়ে আছে। দিনের অনেকটা সময় গড়িয়ে গেলেও সিটি করপোরেশনের আবর্জনাবাহী গাড়ি কিংবা পরিচ্ছন্নকর্মীদের দেখা নেই।

প্রচণ্ড দুর্গন্ধ-দূষণের মধ্য দিয়েই নাক চেপে কোনোমতে জায়গাটা পার হয়ে হাফ ছেড়ে বাঁচতে চাইছেন যানবাহনের যাত্রী আর পথচারীরা। স্থানীয় লোকজন জানালেন, এ দৃশ্য নতুন নয়। অনেকটা গা সওয়া হয়ে গেছে তাদের। একজন পথচারী মন্তব্য করলেন, ‘এটা পারমানেন্ট ময়লার ডিপো। বছরের পর বছর এভাবে চললেও করপোরেশনের মাথাব্যথা নেই।


বেলা একটা: নগরের রিয়াজউদ্দিন বাজার আমতল এলাকার বিপরীতে, জুবিলি রোডের মুখ। রাস্তার এক পাশে ছড়িয়ে আছে ফলমূলের খোসা, খাবারের উচ্ছিষ্ট, পলিথিনসহ বিভিন্ন পণ্যের খালি মোড়ক। সেই আবর্জনা হাতড়ে টোকাইয়ের দলের পলিথিন, উচ্ছিষ্ট ইত্যাদি বেছে নিচ্ছে এমন দৃশ্যও নিত্যদিনের।
বেলা দুইটা ৩০ মিনিট: নগরের লাভ লেনের মোড় পেরিয়ে কিছুদূর যেতেই রাস্তার পাশে বাসাবাড়ি থেকে ফেলে রাখা বর্জ্যের স্তূপ। বোঝা গেল, এখানে করপোরেশনের বর্জ্য অপসারণকারী লোকজনের হাত পড়েনি কয়েক দিন ধরে।

প্রায় দু-তিন শ গজ দূরে দেখা গেল আর একটি ডাস্টবিনের উপচে পড়া ময়লা ছড়িয়ে আছে আশপাশে। আবাসিক এলাকার এ বর্জ্য থেকে পছন্দের খাবার সাবাড় করছে একটি গরু। করপোরেশনের লোকজন আসে কি না স্থানীয় এক দোকানির কাছে জানতে চাইলে তিনি জবাব দিলেন, ‘আমি দেখিনি। ’ ব্যঙ্গ করে পাল্টা প্রশ্ন করলেন তিনি, ‘কেন, সমস্যা কী? খেয়ে হলেও গরুটি তো আবর্জনাগুলো পরিষ্কার করছে তাও কম কী। ’
১১ সেপ্টেম্বর নগরের বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে ময়লা-আবর্জনার ছড়াছড়ির এমন চিত্র ধরা পড়ে।

অভিযোগ রয়েছে, সিটি করপোরেশনের ৪১টি ওয়ার্ডে জমে থাকা আবর্জনা প্রতিদিন ভোরে সরিয়ে নেওয়ার কথা থাকলেও পরিচ্ছন্নকর্মীরা তা শুরু করেন সকাল আটটা-সাড়ে আটটা থেকে। কোনো কোনো এলাকায় পরিচ্ছন্নকর্মীর দেখাই মেলে না কয়েক দিন ধরে। আবার কিছু এলাকায় সন্ধ্যার পরেও ময়লা অপসারণ করা হয়। এভাবে আবর্জনা অপসারণে অব্যবস্থাপনার কারণে নগরে পরিবেশ দূষণ এবং মশা মাছির উপদ্রবও বাড়ছে।
নগরের খুলশী এলাকার বাসিন্দা মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ‘আমরা একসময়ে ভোর বেলায় সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নকর্মীদের তোড়জোড় দেখতাম।

ওয়াকিটকির মাধ্যমে কর্মকর্তারা কাজের তদারকি করতেন। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে সে রকম তৎপরতা দেখছি না। ফলে পরিবেশ দূষণের শিকার হচ্ছে নগরবাসী। ’ অভিযোগ অস্বীকার করেন সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শফিকুল মান্নান সিদ্দিকী। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমাদের লোকবল সংকটের কারণে একই সময়ে শহরের সব এলাকায় পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়তো কিছুটা সমস্যা হয়।

কিন্তু পরিচ্ছন্নকর্মীরা আবর্জনা অপসারণের কাজ নিয়মিতই করেন। ’ করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন পুরো শহরে প্রায় এক হাজার ৪০০ টন আবর্জনা তৈরি হয়। এর মধ্যে শুধু রিয়াজউদ্দিন বাজার এলাকায় তৈরি হয় দিনে প্রায় ২০০ টন। দিনে চার দফায় ভাগ করে এ আবর্জনা অপসারণের কথা থাকলেও তা প্রায় সময় হয় না।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, নগরের আবর্জনা অপসারণে করপোরেশন এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ১২টি সেকেন্ডারি ট্রান্সপ্লান্টেশন প্লান্ট বসাবে।

এ ছাড়া, নগরের ১০টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে বাসাবাড়িতে গিয়ে আবর্জনা সংগ্রহ করে আনার পরিকল্পনা রয়েছে। পরে ওই আবর্জনা সেকেন্ডারি স্টেশনে ফেলা হবে। ।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।