বাধঁ জোড়ার আওয়াজ > With Great Power, Comes Great Responsibility
মধুদা'র সেই ক্যান্টিন
মুজাহিদুল ইসলাম/ সাদিক করিম
উনিশ শতকের প্রথম দিকে বিক্রমপুরের শ্রীনগরের জমিদারদের ঢাকার সাথে যোগাযোগের মাধ্যম ছিল গয়না নৌকা। জমিদারদের সাথে নকরীচন্দ্র দে ( মধুসূদন দে'র [মধুদা'র] পিতামহ ) ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। অতঃপর ব্যবসা প্রসারের উদ্দেশ্যে নকরীচন্দ্র দে তাঁর দুই পুত্র আদিত্যচন্দ্র দে ও নিবারন চন্দ্র দে কে নিয়ে ঢাকায় চলে এসে জমিদার বাবুদের জিন্দাবাজার লেনের বাসায় আশ্রয় নেন।
1921 সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর তাঁর কর্মকান্ড রমনায় শুরম্ন হলে নকরী চন্দ্র দে তাঁর পুত্র আদিত্য চন্দ্র দে-র ওপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের ব্যবসা প্রসারের দায়িত্ব অর্পণ করেন। এই সময় পিতামহ নকরীচন্দ্র দে পরলোকগমন করলে আদিত্য চন্দ্র দে একা এই ব্যবসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাসের মাধ্যমে শুরম্ন করেন।
ব্রিটিশ পুলিশ ঠিক একই সময় ক্যাম্পাসের আশপাশের ব্যারাক ও ক্যাম্প ইত্যাদি প্রত্যাহার করার উদ্যোগ নিলে আদিত্য চন্দ্র দে ব্রিটিশ পুলিশের কাছ থেকে দু'টি ছনের ঘর 20/30 টাকার বিনিময়ে ক্রয় তার একটি দিয়ে ক্যাম্পাসের এক কোণে দোকান পরিচালনা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে আরেকটির মধ্যে বসবাস করতে শুরম্ন করেন। মধুসূদন দে (মধু ) তখন 14/15 বছরের তরম্নণ। ওই বয়সে অর্থ্যাৎ সেই 1934-35 সাল থেকেই মধুসূদন দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর পিতা আদিত্য চন্দ্র দে'র সাথে খাবারের ব্যবসা শুরম্ন করেন। এর অল্প কিছু কাল পরে অর্থাৎ 1939 সালের দিকে পিতা পৰাঘাতে মারা গেলে মধুসূদন দে একা শক্ত হাতে পারিবারিক এই ব্যবসার হাল ধরেন। আর বড় ভাই নারায়নচন্দ্র দে-কে বলেন পড়াশোনা চালিয়ে যেতে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের দাবির প্রেৰিতে ডাকসু কার্যক্রম পরিচালনা ও তার ক্যান্টিন প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নেয়া হলে সেটা পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয় মধসূদন দে-কে। সংৰেপে এই হচ্ছে মধুর ক্যান্টিনের উৎসের ইতিহাস।
মধুর ক্যান্টিনের নামকরন ঃ ইতিহাসের শরন নিলে দেখা যাবে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আদি কলা ভবনেই মধুর ক্যান্টিনের জন্ম। ' মধুর ক্যান্টিন' নাম ধারন করার আগে কত তার নাম-মধুর ষ্টল, মধুর টি-স্টল, মধুর রেসত্দোরা। আর সবশেষে মধুর ক্যান্টিন।
দেখা যাক না, কেমন ছিল তার সেই আদি সব দিন। সেই তিরিশের দশকে। কবি বুদ্ধদেব বসুর স্মৃতিচারণে মধুদার পিতা আদিত্যর হাত দিয়ে যে মধুর ক্যান্টিনের সূচনা, তার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন- "বিশ্ববিদ্যালয় কম্পাউন্ডের এক প্রানত্দে টিনের চালওলা দর্মার ঘর,ভিতরে মলিনবর্ণ টেবিলের পাশে লম্বা ন্যাড়া টুল পাতা। এখানেই আমরা ৰুৎপিপাসা নিবারণ করে থাকি, যেহেতু সারা তলস্নাটে দ্বিতীয় কোন চা-ঘর নেই। আদিত্যর ভোজ্যতালিকা অতি সীমিত,কোনদিন তার স্বহসত্দে প্রসত্দুত মিষ্টান্ন ছাড়া আর কিছূই দিতে পারে না চায়ের সঙ্গে, কিন্তু তাতেও কিছু যায় আসে না আমাদের।
গদ্য-পদ্য সমসত্দ খাদ্যই আমাদের পৰে উপাদেয় ও সুপ্রাচ্য, সেগুলোর রাসায়নিক গুণাগুণ নিয়ে চিনত্দিত হবার মতো দুর্দিন তখনও বহুদুর। আমাদের বন্ধুর দল ছুটির ঘন্টায়, কখনও কেউ ক্লাস পালিয়ে, বসি গোল হয়ে ঘন ঘাসের উপর ঘনিষ্ঠ হয়ে আর ফরমায়েশের পর ফরমায়েশ ছাড়ি আদিত্যকে।
অনেকখানি মাঠ পেরিয়ে আমাদের কলহাস্য ধ্বনিত হয় এক ফ্লাক্সঘরে, যেখানে চার বন্দ্যোপাধ্যায় কবি কঙ্কন পড়াচ্ছেন। দাম দেবার জন্য পকেট হাতড়াবার প্রয়োজন নেই,' লিখে রেখো' এই বলাই যথেষ্ট। এই আদিত্যের, এবং আমার পুরানো পল্টনের মুদিখানায় সিগারেটের দেনা সম্পূর্ণ শোধ না করেই আমি ঢাকা ছেড়ে ছিলাম, সে কথা ভেবে আজকের দিন আমার অনুশোচনা হয়।
(আমার যৌবন 1976 সালে )
ইতিহাসের পাতা থেকে ঃ আমাদের এই ভৌগোলিক সীমাচিনি্নত ভূখন্ডের ইতিহাস মানেই মধুর ক্যান্টিনের ইতিহাস, মধুর ক্যান্টিনের ইতিহাস মানেই এই ভূখন্ড তথা বাংলাদেশের ইতিহাস। আর ইতিহাস কেবল সাল তারিখ কন্টকিত রাজনৈতিক ঘটনার নীরস বয়ান-বিবরণ নয়, সেই নিদিষ্ট ভূখন্ডের সামাজিক সাহিত্যিক, সাংৃৰতিক ও অর্থনৈতিক আন্দোলনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এসব উপাদানেরও থাকে অনিবার্য ভূমিকা। এসব ভূমিকারই মুখ্য পীঠস্থান অথবা তার বীজরোপনের ৰেত্র-মধুর ক্যান্টিন।
48'র ভাষা আন্দোলন, 49'সালের বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের আন্দোলন, 52'র মহান ভাষা আন্দোলন, 54 সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনী যুদ্ধ, 58-60-62' সালের প্রতিক্রিয়াশীল শিৰানীতি বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, 66' সালের 6 দফার আন্দোলন, '68, 69'র গণঅভু্যত্থান, তারই পথ বেয়ে 70' সালের নির্বাচন, নির্বাচনী রায় মেনে না নেয়ার পরিণতিতে 1971 সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সূচনা, যাতে শহীদ হন মধুদা, তাঁর সহধর্মিনী, তাঁর জ্যেষ্ঠ সনত্দান ও তাঁর নববিবাহিত স্ত্রী।
কিন্তু শহীদ হওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যনত্দ মধুদা নিজে যেমন, তেমনি তাঁর মধুর ক্যান্টিন বাঙ্গালী জাতির এসব ঐতিহাসিক পর্যায়ক্রমিক আন্দোলনের কখনও সরাসরি, কখনও নেপথ্যের প্রশ্নদাতা ও রসদের যোগানদারের ভূমিকা পালন করে যান। এখনও তাঁর সেই ভূমিকা অব্যাহত। মধুর ক্যান্টিনের ঠাঁই-ঠিকানার বদল এখানে বিন্দুমাত্র বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি।
প্রথমে সে ছিল ছোট্ট একটা চায়ের দোকান, তখন তাঁর অবস্থান তখনকার বিশ্ববিদ্যালয় কলাভবন অথ্যর্াৎ বর্তমান মেডিক্যাল কলেজ চত্বরের জরম্নরী বিভাগের কাছাকাছি জায়গায়।
ষাটের দশকের কবি ছাত্রনেতা বুলবুলখান তাঁর 'মধুর ক্যান্টিন' নামক এক গ্রন্থে লিখেছিলেন ঊনিশ 'শ বাষট্টির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
ইউক্যালিপটাস এনিনিউ'র ধার ঘেঁষে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের গ্রাস থেকে কোন রকমে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা বিশাল বিল্ডিংয়ের পূর্বদিকের অংশে তখন আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভবন। ছোট মাঠের দৰিণ আর পুবে টিনশেড পাকা দেয়ালের অতিরিক্ত কিছু ঘরেও ক্লাস হয়। মাঠের পু্ব দৰিণ কোণে ডোবার চেয়ে কিছুটা বড় সাইজের একটি পুকুর, মাঠের মাঝামাঝি বিখ্যাত আমগাছ, তার পুবে বেলগাছ। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যে অংশটুকু বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে ব্যবহৃত হয় তার উত্তর পাশের রাসত্দা ঘেঁসে ছিল মধুর ক্যান্টিন।
দু'বছর পর বিশ্ববিদ্যালয় স্থানানত্দরিত হলো নীলৰেতের কলাভবনে আর মধুর ক্যান্টিন চলে এলো সে ভবনের পাশে, ঢাকার নবাবদের শাহবাগ এলাকার নাচঘরে।
যে ঘরে মুসলিম লীগ গঠনের জন্য একদিন উপমহাদেশের বাঘা বাঘা মুসলিম নেতারা বৈঠক করেছিলেন, এক সময় সেই ঘরটিই স্মৃতি বিজড়িত হলঘর আর তার দু'পাশে ছোট গোলঘর জুড়ে মধুর ক্যান্টিন তার স্থান করে নিয়েছিল ষাট দশকের প্রথমার্ধে। বাঈজিদের নূপুরের রিনিঝিনি স্থান দখল করে নিয়েছে ছাত্রদের গুঞ্জন। বিশ্ববিদ্যালয় আর মধুর ক্যান্টিন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এলাকা ত্যাগ করে একদিন চলে এসেছিল নীলৰেত শাহবাগ এলাকায়। পেছনে ফেলে এসেছিল রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের অজস্র স্মৃতিভরা পুরনো বিশ্ববিদ্যালয় ভবন-বাহান্নের একুশে ফেবু্রয়ারিতে দশজন করে বের হওয়ার স্মৃতি জড়ানো সেই ফটক, আমতলা, প্রথম মধূর ক্যান্টিনের টিনশেড খোলামেলা ঘর আর ডাকসু কার্যালয়। পলাশীর আমবাগানের সর্বশেষ আমগাছটি মরে গেলে তার কান্ডটি নাকি ব্রিটিশরা যুদ্ধ জয়ের স্মৃতিচিহ্ন হিসাবে তাদের দেশে নিয়ে গিয়েছিল।
আজও তা রৰিত আছে লন্ডনের জাদুঘরে।
বিভিন্ন বিবরনী থেকে পাওয়া মধুর ক্যান্টিন ঃ কবি কিরণ শঙ্কর সেনগুপ্ত ও সরদার ফজলুল করিমের স্মৃতিচারণ সূত্রে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলিস্নশ দশকের রাজনৈতিক. সামাজিক. সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের যে বিবরণ পাই, তা সেই সময়কার এক উজ্জল দলিল বিশেষ।
মধুর ক্যান্টিন এবং মধুদা নিজেই যে এ দেশের অনেককিছুর কেন্দ্রভূমি ও হোতা ছিলেন. তার বিবরণ পাই এককালের বামপন্থী নেতা ও প্রবীণ সাংবাদিক কে,জি, মুসত্দাফার স্মৃতিচারণ মূলক বিবরণ থেকে। সেই বিবরণ থেকেই আমরা জানতে পারি ভবিষ্যত বাংলাদেশের জন্মের যারা নায়ক হবেন, হবেন মধ্যমনি,তাঁদের প্রায় সকলেই আড্ডা দিচ্ছেন মধুর ক্যান্টিনে। সৈয়দ আলী কবির জানাচ্ছেন ভিন্ন তথ্য।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা কীভাবে তখন সম্পর্কিত হতেন মধুর ক্যান্টিনের সঙ্গে, বিশেষত ত্রিশ, চলিস্নশ ও পঞ্চাশ দশকের সেই রৰনশীল সময় পরিসরে, যখন ছাত্র-ছাত্রীদের মেলামেশা অবাধ ছিল না। সৈয়দ আলী কবীরের স্মৃতিচারণে বিষয়টি উঠে এসেছে সুন্দরভাবে। তিনি জানাচ্ছেন , " আমি মধুকে সেই সময় দেখেছি। সে সময় দোকান ছিল ছাত্রী-বিবর্জিত। দোতলা থেকে চায়ের অর্ডার আসতো ৗিপের মাধ্যমে।
মধু সেই সময়ও দেখেছে, যখন মেয়েরা ছেলেদের সঙ্গে চা পান করেছে। মধুর দোকানে যারা আমার বন্ধু ছিল তারা নারীমুক্তিতে বিশ্বাস করেছে। তারা সেই মানদণ্ড অনুযায়ী জীবনযাপন করেছে। এবং তারই ঢেউ আজকের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয় সারা বাংলাদেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। মেয়েদের কমনরম্নম থেকে শিৰকদের প্রহরায় তাদেরকে ক্লাসে নিয়ে যাবার পাঠ সেই কবে চুকে গেছে।
উঠে গেছে 'কুখ্যাত সান্ধ্য আইনও। মেয়েরা এখন শুধু মধুর ক্যান্টিনই নয়, ক্যাম্পাস জুড়েও রাত নয়টা পর্যনত্দ ছেলেদের সঙ্গে নিঃসঙ্কোচে আড্ডা দিতে পারে। ইতিহাসের শরণ নিলে দেখা যেতে পারে এ ৰেত্রে ব্যাক্তিগতভাবে মধুদা ও মধুর ক্যান্টিনের অবদান একেবারই কম নয়। ইতিহাস তো তাই বলে।
ষাট দশকে'র মধুর কেন্টিন ঃ ত্রিশ ও চলিস্নশের দশক থেকে যেমন রাজনৈতিকসহ নানা সাংস্কৃতিক সাহিত্যিক কর্মকান্ডের সূতিকাগার ছিল মধুর ক্যান্টিন,তেমনি সেই ধারা অব্যাহত থাকে পুরোমাত্রায় আশি ও নব্বইয়ের দশক পর্যনত্দ।
50এর পর ষাটের দশকে তৎকালিন পূর্ব পাকিসত্দান অর্থাৎ আজকের বাংলাদেশ আরেকটি সন্ধিৰণের মুখোমুখি এসে দাঁড়ায়। বিশেষত '66 সালে যে স্বায়ত্বশাসনের আন্দোলনের পথ ধরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বা মুক্তিযুদ্ধের অভিমখীনতা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের 6 দফা পেশ করার ভেতর দিয়ে যে রাজনৈতিক অধ্যায়টির সূচনা, তারও অভিঘাত মুক্ত ছিল না মধুর ক্যান্টিন। "বাষট্টির শিৰা আন্দোলনের নেতা আব্দুর রাজ্জাক সে সময়ের কথা বলেছেন,'এ সময় ছাত্র আন্দোলনের যে সিদ্ধানত্দ নেয়া হয়, তা মধুর ক্যান্টিন থেকেই নেয়া হয়। ঃ13 সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে সচিবালয়ের সামনে অবস্থান ধর্মঘট পালনের প্রসত্দুতি হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটোরিয়ায় সব শিৰা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা এক সভায় মিলিত হন'। রাশেদ খান মেনন বলেছেন,' মধুদাকে জানিয়ে রাখা হয়েছিল ক্যান্টিনেই (মধুর ) গভীর রাতে গোপন বৈঠক হবে।
কিন্তু আমাদের পেছনে পুলিশ লেগেছিল বলে বহু ঘুরে ক্যান্টিনে এলাম। মধু দা শুনে রান্নাঘরের পেছনে আমাদের বসিয়ে রান্নাঘরে বাবুর্চিদের কাজে লাগিয়ে দিলেন। বৈঠক শেষে বের হবার পথও দেখিয়ে দিলেন মধু দা-ই'।
ঊনসত্তরের মহাগণ অভ্যত্থানের নায়ক তোফায়েল আহমেদ সেই সময়কার কথা বলতে গিয়ে মধুদার প্রসঙ্গে বলেছেন, '69 থেকে '71 পর্যনত্দ বহু বৈঠক মধুদার ক্যান্টিনে হয়েছে। রাতের অন্ধকারে এসব বৈঠক সম্পর্কে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ছাড়া মধু-দাই অবহিত থাকতেন।
মধু দা আমাদের খাওয়ার সুযোগও করে দিতেন। '
এখনকার বামপন্থী তথা কমিউনিষ্ট নেতা মুজাহিদুল সেলিমের মতে," মধুর ক্যান্টিন ছিল প্রগতিবাদী গনতান্ত্রিক ছাত্র আন্দোলনের অলিখিত হেডকোয়ার্টার।
বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শরিফ মিয়ার ক্যান্টিন, বলাইয়ের ক্যান্টিন , সায়েন্স ক্যাফেটেরিয়া,টিএসসি ক্যাফেটেরিয়া- সবই ছিল। কিন্তু মধুর ক্যান্টিন কোনটাই দখল করতে পারেনি"। এককালের প্রখ্যাত ছাত্রনেতা নুরূল ইসলাম নাহিদের স্মৃতিতে মধুর ক্যান্টিন এখনও ভাস্বর।
তিনি বলেছেন," আমি প্রথম মধুর ক্যান্টিনে গিয়েছিলাম 1963 সালের প্রথম দিকে। এরপর 1965 সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র হিসেবে '71-এর মক্তিযুদ্ধ পর্যনত্দ বর্তমান মধুর ক্যান্টিনে আন্দোলন, সংগ্রাম এবং আড্ডার অসংখ্য স্মৃতি এখনও আমার মনে অমস্নান।
রাজনীতিবিদ পঙ্কজ ভট্টচার্যের স্মৃতি-ভাষ্য ঃ " সকাল থেকে রাত অব্দি মধুর ক্যান্টিনে চলতো একটানা জমজমাট আড্ডা। বহুমুখী আড্ডা। উদীয়মান সাহিত্যিক, নাট্যকর্মী,সঙ্গীত শিল্পি, শিৰাকলাবিদ, সেরা ছাত্র, ছাত্র নেতা, রাজনৈতিক কর্মী, এবং আড্ডাবাজ ছাত্রদের ঠিকানা ছিল মধুর ক্যান্টিন।
নারীনেত্রী আয়েশা খানমের স্মৃতিতে মধুর ক্যান্টিন,"ছাত্র আন্দোলেনের সঙ্গে যতই সম্পৃক্ত হতে লাগলাম, ততই সেই সময়কার আরও সুদূরপ্রসারী কর্মজালে আবদ্ধহতে থাকলাম। তখন নিয়মিত অনুষ্ঠিত হচ্ছে ছাত্র সমাবেশ, বিৰোভ মিছিল, ধর্মঘট। ধর্মঘট শেষে প্রতিবাদ সভা- কখনও বটতলায়, কখনও মধুর ক্যান্টিনে । " মধুর রেসত্দোরা বা মধুর ক্যান্টিন নিয়ে এ-রকম হাজারো স্মৃতি,স্মৃতি কথা, স্মৃতির মালা । শেষ নেই তার।
0
সংগ্রহ: [লিংক=যঃঃঢ়://িি.িরঃঃবভধয়.পড়স/মবঃ.ঢ়যঢ়?ফ=07/01/25//িহথুুশয়ায়]ইত্তেফাক[/লিংক] (জানুয়ারি 25, 2007, বৃহস্পতিবার : মাঘ 12, 1413)
সংগ্রাহক: মুজাহিদুল ইসলাম/ সাদিক করিম
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।